ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দু’তিন দিনের বৃষ্টির কবলে রাঙামাটি চট্টগ্রাম ও বান্দরবান : টানা বর্ষণে পাহাড়ধস : মৃত্যুর মিছিলে সেনা কর্মকর্তা ও শিশুসহ ১৩২ জন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: টানা বর্ষণে পাহাড়ে চলছে মৃত্যুর মিছিল। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাহাড় ধসে ১২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৯৬ জন, চট্টগ্রামে ২১ জন ও বান্দরবানে ছয়জন রয়েছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাঁচজন ও রাউজান উপজেলায় একজন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় একজন মারা গেছেন। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে একজন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত থেকে অভিযান চালিয়ে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযান এখনো চলছে। এসব ঘটনায় আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। সোমবার এটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে গ্রাম-শহরে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। অনেকস্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।
রাঙামাটি: টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে রাঙামাটি শহরে চার সেনা সদস্যসহ ৫৩ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৬ জন, জুড়াছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় দুজন করে নিহত হয়েছে। এছাড়া কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি ঢলে পানিতে ডুবে একজন ও গাছচাপায় একজন নিহত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে পুরো জেলায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০০’র বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ১৫ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সরকার তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল আলম গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসত নির্মাণ, পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ নষ্টের কারণে এত বড় দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে।
সেনা সদস্য হতাহত হওয়ার ব্যাপারে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। এসময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের ওপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরো একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’জন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। নিহত সেনা সদস্যরা হলেন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও বগুড়ার আদমদীঘির সৈনিক মো. শাহিন আলম। এছাড়া, সৈনিক মো. আজিজুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
চট্টগ্রাম: টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড় ধসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২১জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার জঙ্গল বগাবিল এলাকায় ১৬ জন, চন্দনাইশের ধোপাছড়ি এলাকায় চারজন ও বাঁশখালীতে একজন নিহত হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয়জন। এছাড়া ভোরে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে হানিফ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসাবে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি পাহাড়ে বসবাস করছে অন্তত চার হাজার পরিবার। বৃষ্টি মৌসুমে উচ্ছেদ অভিযান চললেও স্থায়ী সমাধান বের করতে পারেনি প্রশাসন। তবে টানা বৃষ্টি আর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর পাদদেশ থেকে শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তিনদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে নগরীর আগ্রাবাদ, বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ মানুষ।
বান্দরবান: টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১১ জন। মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ। এসময় আহত আরও পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে বান্দরবানে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া, রাঙামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দু’দিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দু’তিন দিনের বৃষ্টির কবলে রাঙামাটি চট্টগ্রাম ও বান্দরবান : টানা বর্ষণে পাহাড়ধস : মৃত্যুর মিছিলে সেনা কর্মকর্তা ও শিশুসহ ১৩২ জন

আপলোড টাইম : ০৫:০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: টানা বর্ষণে পাহাড়ে চলছে মৃত্যুর মিছিল। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাহাড় ধসে ১২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৯৬ জন, চট্টগ্রামে ২১ জন ও বান্দরবানে ছয়জন রয়েছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাঁচজন ও রাউজান উপজেলায় একজন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় একজন মারা গেছেন। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে একজন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত থেকে অভিযান চালিয়ে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযান এখনো চলছে। এসব ঘটনায় আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। সোমবার এটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে গ্রাম-শহরে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। অনেকস্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।
রাঙামাটি: টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে রাঙামাটি শহরে চার সেনা সদস্যসহ ৫৩ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৬ জন, জুড়াছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় দুজন করে নিহত হয়েছে। এছাড়া কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি ঢলে পানিতে ডুবে একজন ও গাছচাপায় একজন নিহত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে পুরো জেলায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০০’র বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ১৫ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সরকার তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল আলম গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসত নির্মাণ, পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ নষ্টের কারণে এত বড় দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে।
সেনা সদস্য হতাহত হওয়ার ব্যাপারে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। এসময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের ওপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরো একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’জন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। নিহত সেনা সদস্যরা হলেন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও বগুড়ার আদমদীঘির সৈনিক মো. শাহিন আলম। এছাড়া, সৈনিক মো. আজিজুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
চট্টগ্রাম: টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড় ধসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২১জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার জঙ্গল বগাবিল এলাকায় ১৬ জন, চন্দনাইশের ধোপাছড়ি এলাকায় চারজন ও বাঁশখালীতে একজন নিহত হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয়জন। এছাড়া ভোরে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে হানিফ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসাবে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি পাহাড়ে বসবাস করছে অন্তত চার হাজার পরিবার। বৃষ্টি মৌসুমে উচ্ছেদ অভিযান চললেও স্থায়ী সমাধান বের করতে পারেনি প্রশাসন। তবে টানা বৃষ্টি আর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর পাদদেশ থেকে শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তিনদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে নগরীর আগ্রাবাদ, বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ মানুষ।
বান্দরবান: টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১১ জন। মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ। এসময় আহত আরও পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে বান্দরবানে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া, রাঙামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দু’দিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।