বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
- আপলোড টাইম : ০১:৪৩:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৭
- / ২৮৩ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: আজ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের এ দিনেই পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা। বাঙালি জাতির শৃঙ্খলমুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, নয় মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে তার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। আর এ কারণে তিনি নিজেই তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। সেদিন নতুন এদেশের সব রাস্তা গিয়ে মিলেছিল তৎকালীন তেজগাঁওয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল তার আগমনের পথ। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে পুরো রাস্তায় ছিল মানুষের ঢল। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল আকাশ-বাতাস। যে দেশ, যে স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু সেই মাটিতে পা দিয়ে সেদিন আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এতো ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ এদিন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে যাওয়া অস্থায়ী সরকারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধাথসবাই অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের এই বরপুত্রকে। সেই থেকে প্রতি বছর নানা আয়োজনে পালিত হয় দিবসটি।
ইতিহাসের পাতায় লেখা, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা আসে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এমন দামামার মধ্যেই একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়ন শুরু করে। লাখ লাখ নিরীহ বাঙালি জনগণের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা চালায় তারা। এ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই শুরু করার ডাক দেন তিনি।
স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর দখলদার পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখে। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে, ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। কারাগারের যে সেলে তাকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়। এদিকে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকেই রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে খ্যাত এ সরকারের নেতৃত্বে মরনপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা বাঙালি জাতি। দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র সে যুদ্ধে বহু ত্যাগ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। এর আগে থেকেই কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশও বিশ্ববাসীর কাছে তার নেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানালে বিশ্বনেতারাও তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন। অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দেয়। ১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তার প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি।