ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফলোআপ : আলমডাঙ্গার ভোগাইল বগাদি গ্রামে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু আত্মহত্যা নয় স্বামীর নির্যাতনেই মৃত্যু : পরকীয়ার নির্মম বলি গৃহবধূ পলি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০১৭
  • / ৩৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গৃহকর্মীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক, মেলামেশা অতঃপর গোপনে বিয়ে। যে প্রেমের মোহে পড়ে প্রথম স্বামীকে রেখে ২য় বিয়ে, সে সুখ আর কপালে সইলো না। ২য় স্বামী ও তার লোকজনের নির্যাতনে পরকীয়ার নির্মম বলি হতে হয়েছে আলমডাঙ্গার ভোগাইল বগাদি গ্রামের গৃহবধূ পলি খাতুনকে। তার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে এখনও ধোয়াশা কাটেনি। পরিবারের দাবি স্বামীর নির্যাতনেই পলির মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশীদের দাবি- পরিকল্পিতভাবে পলিকে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা নাটক সাজানো হয়েছে। অনেকে বলছে মৃত্যুর আগে কয়েক দফা পলির স্বামী এনামুল তার লোকজন দিয়ে ধর্ষণও করিয়েছে। তবে পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই পলি-এনামুলের মেলামেশা অতঃপর গোপণে বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় পলির পিত্রালয় আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের মাঠে নামাজে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।

যেভাবে সম্পর্ক তৈরী হয় এনামুল-পলি’র: আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদির দিনমজুর মেছের আলীর সাথে একই ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের পলি খাতুনের বিয়ে হয় আজ থেকে ১১ বছর আগে। বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাদের সংসারে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে সন্তান। বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সাংসারিক জীবন। স্বামী মেছের আলী প্রতিবেশী এনামুল হকের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতো এবং এনামুলের গৃহকর্মীর কাজ করতো পলি। সারাদিন মাঠে থাকায় মেছের আলী তার স্ত্রীর খুব একটা খোঁজখবর রাখতে পারতেন না। এরই একপর্যায়ে এনামুল ও পলির মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক তৈরী হয়। এরপর মেলামেশা, ভালোবাসা। কিন্তু এনামুলের সংসারে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তারপরেও এ ঘটনার ৩ মাস আগে এনামুল তার প্রথম স্ত্রী ও পলি তার প্রথম স্বামীকে রেখে বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়াই গোপণে ২য় বিবাহ করে। এ কথা জানাজানি হলে পলি তার প্রথম স্বামী মেছের আলী এবং সন্তানকে রেখে এনামুলের সাথে চলে যায়। তবে উভয়ের বাড়ি থেকে এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় এনামুল তার বন্ধু সামাদের বাড়িতে বাসা ভাড়া করে রাখে। এরপর পলির প্রথম স্বামী মেছের আলী কয়েকবার তাদের সন্তানের কথা বিবেচনা করে তাকে তার সংসারে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
কী হয়েছিল সেদিন: উভয়ের সম্পর্কের তিন মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, তারপরেও কারও পরিবার থেকে এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় পলিকে নিজ বাড়ি অথবা প্রথম স্বামী মেছের আলীর কাছে ফিরে যেতে বলে দ্বিতীয় স্বামী এনামুল। তার কাছ থেকে অন্য কোথায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করে পলি বলে ‘আমি প্রথম সংসার, স্বামী-সন্তান আর পরিবার ছেড়ে চলে এসেছি। তোমার সাথে সম্পর্ক করে বিয়ে করার পর সবার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে- আমি আর ফিরে যেতে পারবো না। মরে যাবো তাও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।’ এ নিয়ে গত বুধবার সকালে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এনামুল পলিকে ধরে মারধর শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশীরা এসে পলিকে এনামুলের হাত থেকে রক্ষা করে। ওইদিনগত রাত দেড়টার দিকে ৮-১০ জন সংঘবদ্ধ চক্র ঘুমন্ত এনামুল ও পলিকে তুলে গ্রামের প¦ার্শবর্তী মাঠের একটি আম বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে এনামুলের সামনেই পালাক্রমে পলিকে ধর্ষণ এবং শারিরীক নির্যাতন করা হয়। তারা পলিকে তার আগের স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। তা না হলে প্রাণ নাশের হুমকী দেওয়া হয় তাকে। নির্যাতন শেষে এনামুল ও পলিকে ছেড়ে দিলে রাত ৪টার দিকে ওই ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসে তারা। সকাল ৮টার দিকে পলির কাছে রাতের ঘটনা জানতে চাই প্রতিবেশী রুপসী খাতুন। সে তার কাছে তাকে শারিরীক নির্যাতনের কথা বলে। নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে ঘরে থাকা বেগুনের বিষ পান করে আত্মহত্যা চেষ্টা করে পলি। এ সময় এনামুল তার হাত থেকে বিষের বোতল কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয়দের সহায়তায় পলিকে আসমানখালির এক গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে এনামুল বলে তার স্ত্রী বিষ খেয়েছে। ডাক্তার বিষ ওয়াশ করতে গিয়ে দেখে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বিষ খেয়ে নয়, শারিরীক নির্যাতনের কারণে। সময়ের সমীকরণ’র প্রতিবেদকদের কাছে এসব কথা বলেন নিহত গৃহবধূ পলি খাতুনের মেজ চাচা আনোয়ার মোল্লা।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, আজ ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং সেই মোতাবেক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ভোররাতে আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদী গ্রামের গৃহবধূ পলি খাতুন (২৮)’র রহস্য জনক মৃত্যু হয়। গতকাল শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পলি’র দ্বিতীয় স্বামী এনামুল পলাতক থাকলেও তার বন্ধু আব্দুস সামাদের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ফলোআপ : আলমডাঙ্গার ভোগাইল বগাদি গ্রামে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু আত্মহত্যা নয় স্বামীর নির্যাতনেই মৃত্যু : পরকীয়ার নির্মম বলি গৃহবধূ পলি

আপলোড টাইম : ০৪:৩৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: গৃহকর্মীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক, মেলামেশা অতঃপর গোপনে বিয়ে। যে প্রেমের মোহে পড়ে প্রথম স্বামীকে রেখে ২য় বিয়ে, সে সুখ আর কপালে সইলো না। ২য় স্বামী ও তার লোকজনের নির্যাতনে পরকীয়ার নির্মম বলি হতে হয়েছে আলমডাঙ্গার ভোগাইল বগাদি গ্রামের গৃহবধূ পলি খাতুনকে। তার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে এখনও ধোয়াশা কাটেনি। পরিবারের দাবি স্বামীর নির্যাতনেই পলির মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশীদের দাবি- পরিকল্পিতভাবে পলিকে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা নাটক সাজানো হয়েছে। অনেকে বলছে মৃত্যুর আগে কয়েক দফা পলির স্বামী এনামুল তার লোকজন দিয়ে ধর্ষণও করিয়েছে। তবে পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই পলি-এনামুলের মেলামেশা অতঃপর গোপণে বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় পলির পিত্রালয় আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের মাঠে নামাজে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।

যেভাবে সম্পর্ক তৈরী হয় এনামুল-পলি’র: আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদির দিনমজুর মেছের আলীর সাথে একই ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের পলি খাতুনের বিয়ে হয় আজ থেকে ১১ বছর আগে। বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাদের সংসারে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে সন্তান। বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সাংসারিক জীবন। স্বামী মেছের আলী প্রতিবেশী এনামুল হকের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতো এবং এনামুলের গৃহকর্মীর কাজ করতো পলি। সারাদিন মাঠে থাকায় মেছের আলী তার স্ত্রীর খুব একটা খোঁজখবর রাখতে পারতেন না। এরই একপর্যায়ে এনামুল ও পলির মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক তৈরী হয়। এরপর মেলামেশা, ভালোবাসা। কিন্তু এনামুলের সংসারে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তারপরেও এ ঘটনার ৩ মাস আগে এনামুল তার প্রথম স্ত্রী ও পলি তার প্রথম স্বামীকে রেখে বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়াই গোপণে ২য় বিবাহ করে। এ কথা জানাজানি হলে পলি তার প্রথম স্বামী মেছের আলী এবং সন্তানকে রেখে এনামুলের সাথে চলে যায়। তবে উভয়ের বাড়ি থেকে এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় এনামুল তার বন্ধু সামাদের বাড়িতে বাসা ভাড়া করে রাখে। এরপর পলির প্রথম স্বামী মেছের আলী কয়েকবার তাদের সন্তানের কথা বিবেচনা করে তাকে তার সংসারে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
কী হয়েছিল সেদিন: উভয়ের সম্পর্কের তিন মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, তারপরেও কারও পরিবার থেকে এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় পলিকে নিজ বাড়ি অথবা প্রথম স্বামী মেছের আলীর কাছে ফিরে যেতে বলে দ্বিতীয় স্বামী এনামুল। তার কাছ থেকে অন্য কোথায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করে পলি বলে ‘আমি প্রথম সংসার, স্বামী-সন্তান আর পরিবার ছেড়ে চলে এসেছি। তোমার সাথে সম্পর্ক করে বিয়ে করার পর সবার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে- আমি আর ফিরে যেতে পারবো না। মরে যাবো তাও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।’ এ নিয়ে গত বুধবার সকালে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এনামুল পলিকে ধরে মারধর শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশীরা এসে পলিকে এনামুলের হাত থেকে রক্ষা করে। ওইদিনগত রাত দেড়টার দিকে ৮-১০ জন সংঘবদ্ধ চক্র ঘুমন্ত এনামুল ও পলিকে তুলে গ্রামের প¦ার্শবর্তী মাঠের একটি আম বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে এনামুলের সামনেই পালাক্রমে পলিকে ধর্ষণ এবং শারিরীক নির্যাতন করা হয়। তারা পলিকে তার আগের স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। তা না হলে প্রাণ নাশের হুমকী দেওয়া হয় তাকে। নির্যাতন শেষে এনামুল ও পলিকে ছেড়ে দিলে রাত ৪টার দিকে ওই ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসে তারা। সকাল ৮টার দিকে পলির কাছে রাতের ঘটনা জানতে চাই প্রতিবেশী রুপসী খাতুন। সে তার কাছে তাকে শারিরীক নির্যাতনের কথা বলে। নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে ঘরে থাকা বেগুনের বিষ পান করে আত্মহত্যা চেষ্টা করে পলি। এ সময় এনামুল তার হাত থেকে বিষের বোতল কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয়দের সহায়তায় পলিকে আসমানখালির এক গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে এনামুল বলে তার স্ত্রী বিষ খেয়েছে। ডাক্তার বিষ ওয়াশ করতে গিয়ে দেখে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বিষ খেয়ে নয়, শারিরীক নির্যাতনের কারণে। সময়ের সমীকরণ’র প্রতিবেদকদের কাছে এসব কথা বলেন নিহত গৃহবধূ পলি খাতুনের মেজ চাচা আনোয়ার মোল্লা।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, আজ ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং সেই মোতাবেক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ভোররাতে আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদী গ্রামের গৃহবধূ পলি খাতুন (২৮)’র রহস্য জনক মৃত্যু হয়। গতকাল শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পলি’র দ্বিতীয় স্বামী এনামুল পলাতক থাকলেও তার বন্ধু আব্দুস সামাদের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।