প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতি
- আপলোড টাইম : ১০:২৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০১৯
- / ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কাম্য
দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার মান থাকার কথা সবার ওপর। অথচ আমরা বাস্তবে দেখছি তার উল্টোটা। দেশে কয়েক বছর ধরে এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষা সর্বত্রই প্রশ্ন ফাঁসের হিড়িক চলছিল। দেড় বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তার তদন্তে নেমে ছয়টি জালিয়াতচক্রের সন্ধান পায়। এদের ১২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র বা চার্জশিটও চূড়ান্ত করেছে সিআইডি। আগামী সপ্তাহে হাজার পৃষ্ঠার এই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার বিষয়, এই ১২৫ জনের মধ্যে ৮৭ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে অনেকেই শিক্ষক বা সরকারি কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু এই যদি হয় তাদের নৈতিকতার মান, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তো হতেই হয়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সিআইডি ১২৫ জনের বাইরে জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরো ৫৫ জনের নাম পেয়েছে। পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি বলে তাদের চার্জশিটে আনা হয়নি। ভবিষ্যতে পরিচয় শনাক্ত করা গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। দেড় বছরে পাঁচ দফা অভিযান চালিয়ে সিআইডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থীসহ ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। অবশ্য এরই মধ্যে এই চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই জামিন পেয়ে গেছে। জানা যায়, ছয়টি চক্রের মধ্যে পাঁচটি চক্র পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ ও উত্তর তৈরি করে তা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করত। আরেকটি চক্র ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে পরীক্ষার্থীদের কাছে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করত। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে এদের একেকজন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪২ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে, চার্জশিটের কপি পাওয়ার পর বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জনসহ যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি আসামিরা এখনো পলাতক। সাম্প্রতিক কয়েকটি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বড় কোনো ঘটনা না ঘটলেও এর আগে কয়েক বছর পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এ জন্য অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে অনেক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরও পরীক্ষা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। ফলে পরীক্ষার্থীদের একই পরীক্ষা একাধিকবার দিতে হয়েছে। সিআইডির এই তৎপরতা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। আমরা চাই, প্রশ্ন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।