ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি বিএনপির বিএনপির কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ আ.লীগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

untitled-300x160

সমীকরণ ডেস্ক: নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব কেএম নুরুল হুদাকে। তিনি ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ তুলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। তবে অন্য চার কমিশনারের ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই। কেএম নুরুল হুদা নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির নীতিবাচক কথায় গুরুত্ব দিতে চায় না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাই নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের আস্থার কথা বললেও বিএনপির প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না দলটির নেতারা। তাদের মতে, বিএনপির দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই, তাই তাদের বিষয়ে কথা বলারও কিছু নেই। এবিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনে যাদের নিয়োগ দিয়েছেন, তারা সবাই সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি এবং ইতোমধ্যে সবার কাছে তারা গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। তাদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। এখন সময় নির্বাচন কমিশনের কাজে সহযোগিতা করা। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের সংলাপের শুরু থেকে ইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। তারা আবার সংলাপেও অংশগ্রহণ করেছে। সর্বশেষ তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে নিয়ে শুধু প্রশ্ন তুলেছে। এটা তাদের কৌশল, এতে চিন্তার কিছু নেই। যেহেতু সিইসি ছাড়া অন্য সব নির্বাচন কমিশনারদের বিএনপি মেনে নিয়েছে, তাই সিইসিকেও-মেনে নেবে। সময় মতো ঠিকই সব নির্বাচনে অংশ নেবে। দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতার মতে, ইসি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি, তারা করেননি। তাই বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তাদের কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। বিএনপি নেতারা সংবিধান পড়েন না, তাই রাষ্ট্রপতির কাজের সমালোচনা করেন। বিএনপির কাজই হলো সরকারের সব কাজের সমালোচনা আর প্রশ্নবিদ্ধ করা। এটা তাদের চিরাচরিত স্বভাব। এতে চিন্তার কিছু নেই। তারা এ বিষয়ে কথা বললে ইসি নিয়ে আরও কথা হবে এবং বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ খুঁজবে। কিছু না বললে তারা একসময় থেমে যাবে। আর সংবিধানের বাইরে যেয়ে কিছু করতে চাইলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব কেএম নুরুল হুদাকে। তিনি ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ তুলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। তবে নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে বিএনপি কোনো আপত্তি তোলেনি। বুধবার প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই, শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপির। তার মতে, সিইসি বিতর্কিত, কারণ তিনি জনতার মঞ্চের সংগঠক ছিলেন। এজন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথের আগেই সিইসির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বুধবার রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জনতার মঞ্চের সংগঠক বলছেন বিএনপির নেতারা। তাহলে কি বিএনপি জনতার বিরুদ্ধে? তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নয়, জনমতের প্রতিফলন হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি এখনই নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। নতুন কমিশন কাজেই প্রমাণ দেবে তারা কেমন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন চাইলেই বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেন। তবে এটা হবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তাদের নিজেদের ভাবতে হবে, তারা কি রকিব কমিশনের মতো হবেন, না ইতিহাসের পাতায় সৎ, দক্ষ ও নিরপেক্ষ হিসেবে থাকবেন? এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল আমিন ব্যাপারি বলেন, যারা নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই সরকারের দক্ষ আমলা ছিলেন। জাতি তাদের কাজের দিকে তাকিয়ে, দেখা যাক তারা কী করেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নতুন সদস্যদের কাজের বিষয়ে সৎ, নিরপেক্ষ এবং শক্ত থাকতে হবে। সরকারি দল চাইবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে। এবিষয়ে তাদের কঠোর হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে সমানভাবে দেখতে হবে এবং বিতর্কিত বিষয়ে সবার মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, রকিব কমিশন তাদের কাজের বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চায়নি। তার আগের কমিশন তাদের সহযোগিতা নিয়েছিল। এখন নতুন কমিশন তাদের কাজের বিষয়ে বিশিষ্টজনদের মতামত নেবে কিনা এটা তাদের ব্যাপার। এবিষয়ে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সব দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের যারা আছেন, তারা সবাই নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন, এটাই প্রত্যাশা। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। তবে এই কমিশনের প্রধানকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথের আগেই সিইসির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি বিএনপির বিএনপির কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ আ.লীগ

আপলোড টাইম : ০৭:৪৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

untitled-300x160

সমীকরণ ডেস্ক: নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব কেএম নুরুল হুদাকে। তিনি ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ তুলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। তবে অন্য চার কমিশনারের ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই। কেএম নুরুল হুদা নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির নীতিবাচক কথায় গুরুত্ব দিতে চায় না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাই নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের আস্থার কথা বললেও বিএনপির প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না দলটির নেতারা। তাদের মতে, বিএনপির দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই, তাই তাদের বিষয়ে কথা বলারও কিছু নেই। এবিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনে যাদের নিয়োগ দিয়েছেন, তারা সবাই সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি এবং ইতোমধ্যে সবার কাছে তারা গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। তাদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। এখন সময় নির্বাচন কমিশনের কাজে সহযোগিতা করা। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের সংলাপের শুরু থেকে ইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। তারা আবার সংলাপেও অংশগ্রহণ করেছে। সর্বশেষ তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে নিয়ে শুধু প্রশ্ন তুলেছে। এটা তাদের কৌশল, এতে চিন্তার কিছু নেই। যেহেতু সিইসি ছাড়া অন্য সব নির্বাচন কমিশনারদের বিএনপি মেনে নিয়েছে, তাই সিইসিকেও-মেনে নেবে। সময় মতো ঠিকই সব নির্বাচনে অংশ নেবে। দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতার মতে, ইসি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি, তারা করেননি। তাই বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তাদের কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। বিএনপি নেতারা সংবিধান পড়েন না, তাই রাষ্ট্রপতির কাজের সমালোচনা করেন। বিএনপির কাজই হলো সরকারের সব কাজের সমালোচনা আর প্রশ্নবিদ্ধ করা। এটা তাদের চিরাচরিত স্বভাব। এতে চিন্তার কিছু নেই। তারা এ বিষয়ে কথা বললে ইসি নিয়ে আরও কথা হবে এবং বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ খুঁজবে। কিছু না বললে তারা একসময় থেমে যাবে। আর সংবিধানের বাইরে যেয়ে কিছু করতে চাইলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব কেএম নুরুল হুদাকে। তিনি ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ তুলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। তবে নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে বিএনপি কোনো আপত্তি তোলেনি। বুধবার প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই, শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপির। তার মতে, সিইসি বিতর্কিত, কারণ তিনি জনতার মঞ্চের সংগঠক ছিলেন। এজন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথের আগেই সিইসির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বুধবার রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জনতার মঞ্চের সংগঠক বলছেন বিএনপির নেতারা। তাহলে কি বিএনপি জনতার বিরুদ্ধে? তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নয়, জনমতের প্রতিফলন হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি এখনই নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। নতুন কমিশন কাজেই প্রমাণ দেবে তারা কেমন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন চাইলেই বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেন। তবে এটা হবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তাদের নিজেদের ভাবতে হবে, তারা কি রকিব কমিশনের মতো হবেন, না ইতিহাসের পাতায় সৎ, দক্ষ ও নিরপেক্ষ হিসেবে থাকবেন? এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল আমিন ব্যাপারি বলেন, যারা নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই সরকারের দক্ষ আমলা ছিলেন। জাতি তাদের কাজের দিকে তাকিয়ে, দেখা যাক তারা কী করেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নতুন সদস্যদের কাজের বিষয়ে সৎ, নিরপেক্ষ এবং শক্ত থাকতে হবে। সরকারি দল চাইবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে। এবিষয়ে তাদের কঠোর হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে সমানভাবে দেখতে হবে এবং বিতর্কিত বিষয়ে সবার মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, রকিব কমিশন তাদের কাজের বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চায়নি। তার আগের কমিশন তাদের সহযোগিতা নিয়েছিল। এখন নতুন কমিশন তাদের কাজের বিষয়ে বিশিষ্টজনদের মতামত নেবে কিনা এটা তাদের ব্যাপার। এবিষয়ে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সব দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের যারা আছেন, তারা সবাই নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন, এটাই প্রত্যাশা। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। তবে এই কমিশনের প্রধানকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথের আগেই সিইসির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।