ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর সামনেও বিতর্কে জড়ান আইভী-শামীম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:১৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৬
  • / ২৯৩ বার পড়া হয়েছে

df64428e4f02755a277cf64ed1f4741a-34

সমীকরণ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দুইপক্ষের মতপার্থক্য নিরসন নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠকের সময় একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। অভিযোগ খ-নের সময় একে অপরের প্রতি আঙুল উঁচিয়েও কথা বলেন তারা। তাদের এই আচরণে বিরক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতার সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের দুই নেতা বলেন, বৈঠকের শুরুতে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরেন শামীম ওসমান। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে তার ও দলের অবদান, নিজের ওপর নির্যাতন ও দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করেন শামীম। বৈঠকের একপর্যায়ে আইভীকে মনোনয়ন দেয়ার বিরোধিতা করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আইভী জয় বাংলা সস্নোগানকে অপমান করেছেন। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) গালিগালাজ করেছেন।’ এ বিষয়ে পত্রিকার কপি দেখানোরও চেষ্টা করেন তিনি। ঠিক এই সময়ে আইভী বলেন, তিনি বলেছেন যে, জয় বাংলা আওয়ামী লীগের দলীয় সস্নোগান না। এটা সর্বজনীন এবং সব মানুষের। তখন প্রধানমন্ত্রীও বলেন, তিনিও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন জয় বাংলা সর্বজনীন স্লোগান। দলীয় প্রধানকে কখনো গালি দেননি উল্লেখ করে বৈঠকে আইভী বলেন, শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। দলীয় প্রধানকে গালি দেয়ার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে তিনি নির্বাচন করবেন না। এই অপবাদ তিনি বহন করতে পারবেন না। এ সময় তাদের দুজনকে থামতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। শামীম ওসমান আবার বলেন, আইভী নারায়ণগঞ্জের নিহত মেধাবী ছাত্র ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বীর সঙ্গে চলাফেরা করেন। যিনি সবসময় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তখন আইভী বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। শামীম ওসমানের পক্ষ নেননি, এটাই তার অপরাধ। একপর্যায়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আইভী বলেন, তিনি নেত্রীর বিরুদ্ধে কখনোই কোনো কথা বলেননি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রধানমন্ত্রীও তাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন, কে কী করেছে, সেটা তিনি জানেন। শুধু নেতাদের কথা নয়, তার কাছে থাকা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তিনি প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা এই পর্যায়ে শামীম ওসমানকে তিরস্কার করেন এবং আইভীর পক্ষাবলম্বন করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে করছে। তাই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে তিনি আর কোনো অভিযোগ শুনতে চান না। সবাইকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন এবং আইভীর পক্ষে কেউ কাজ করছে না, এ ধরনের খবর তার কানে এলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। দল করলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা সবাইকে মানতে হবে। পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন আনোয়ার: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন হন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান। তখন প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, তাকে তিনি অনেক পছন্দ করেন। জিজ্ঞাসা করেন, তার বয়স কত হয়েছে। তখন তিনি বলেন, ৬২ বছর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চুল দেখে তো মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘কলপ দিয়ে থাকি তো।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত নির্বাচনে শামীমকে মনোনয়ন দিয়েছি, তুমি (আনোয়ার) আইভীর পক্ষে কাজ করেছ। এবার আইভীকে মনোনয়ন দিলাম। তুমি তার পক্ষে না। যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে পদত্যাগ কর। বিদায় দিয়ে দেব।’ বৈঠকে উপস্থিত দুজন নেতা বলেন, বৈঠকের শেষ পর্যায়ে সবাই মিলে যান এবং নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে এক হয়ে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী, আইভী, শামিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জের নেতারা মিলে একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার সুযোগ কারও নেই। তারা সবাই মিলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রধানমন্ত্রীর সামনেও বিতর্কে জড়ান আইভী-শামীম

আপলোড টাইম : ০৩:১৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

df64428e4f02755a277cf64ed1f4741a-34

সমীকরণ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দুইপক্ষের মতপার্থক্য নিরসন নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠকের সময় একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। অভিযোগ খ-নের সময় একে অপরের প্রতি আঙুল উঁচিয়েও কথা বলেন তারা। তাদের এই আচরণে বিরক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতার সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের দুই নেতা বলেন, বৈঠকের শুরুতে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরেন শামীম ওসমান। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে তার ও দলের অবদান, নিজের ওপর নির্যাতন ও দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করেন শামীম। বৈঠকের একপর্যায়ে আইভীকে মনোনয়ন দেয়ার বিরোধিতা করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আইভী জয় বাংলা সস্নোগানকে অপমান করেছেন। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) গালিগালাজ করেছেন।’ এ বিষয়ে পত্রিকার কপি দেখানোরও চেষ্টা করেন তিনি। ঠিক এই সময়ে আইভী বলেন, তিনি বলেছেন যে, জয় বাংলা আওয়ামী লীগের দলীয় সস্নোগান না। এটা সর্বজনীন এবং সব মানুষের। তখন প্রধানমন্ত্রীও বলেন, তিনিও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন জয় বাংলা সর্বজনীন স্লোগান। দলীয় প্রধানকে কখনো গালি দেননি উল্লেখ করে বৈঠকে আইভী বলেন, শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। দলীয় প্রধানকে গালি দেয়ার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে তিনি নির্বাচন করবেন না। এই অপবাদ তিনি বহন করতে পারবেন না। এ সময় তাদের দুজনকে থামতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। শামীম ওসমান আবার বলেন, আইভী নারায়ণগঞ্জের নিহত মেধাবী ছাত্র ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বীর সঙ্গে চলাফেরা করেন। যিনি সবসময় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তখন আইভী বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। শামীম ওসমানের পক্ষ নেননি, এটাই তার অপরাধ। একপর্যায়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আইভী বলেন, তিনি নেত্রীর বিরুদ্ধে কখনোই কোনো কথা বলেননি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রধানমন্ত্রীও তাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন, কে কী করেছে, সেটা তিনি জানেন। শুধু নেতাদের কথা নয়, তার কাছে থাকা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তিনি প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা এই পর্যায়ে শামীম ওসমানকে তিরস্কার করেন এবং আইভীর পক্ষাবলম্বন করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে করছে। তাই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে তিনি আর কোনো অভিযোগ শুনতে চান না। সবাইকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন এবং আইভীর পক্ষে কেউ কাজ করছে না, এ ধরনের খবর তার কানে এলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। দল করলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা সবাইকে মানতে হবে। পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন আনোয়ার: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন হন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান। তখন প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, তাকে তিনি অনেক পছন্দ করেন। জিজ্ঞাসা করেন, তার বয়স কত হয়েছে। তখন তিনি বলেন, ৬২ বছর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চুল দেখে তো মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘কলপ দিয়ে থাকি তো।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত নির্বাচনে শামীমকে মনোনয়ন দিয়েছি, তুমি (আনোয়ার) আইভীর পক্ষে কাজ করেছ। এবার আইভীকে মনোনয়ন দিলাম। তুমি তার পক্ষে না। যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে পদত্যাগ কর। বিদায় দিয়ে দেব।’ বৈঠকে উপস্থিত দুজন নেতা বলেন, বৈঠকের শেষ পর্যায়ে সবাই মিলে যান এবং নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে এক হয়ে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী, আইভী, শামিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জের নেতারা মিলে একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার সুযোগ কারও নেই। তারা সবাই মিলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।