ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পূর্ব শক্রতার জের ধরে স্কুলছাত্র সাকিবকে গলাকেটে হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮
  • / ২২৮৩ বার পড়া হয়েছে

দামুড়হুদা জুড়ানপুরের কুঠিবাড়ির মাঠে দিনদুপুরে নৃশংসতা : প্রেমিকার কারণে বন্ধুকে মারপিট
পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : অভিযানে আটক-২ : মোটরসাইকেল-ক্যামেরা ও স্মার্ট ফোন উদ্ধার
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসএম শাফায়েত/আফজাল/রোকন: মাস সাতেক আগে প্রেমিকাকে অপদস্ত করা নিয়ে এক বন্ধুকে মারধর করে সাকিব। এ সময় ওই বন্ধুর কাছে থাকা একটি দামী স্মার্ট ফোন ভেঙে যায়। এ ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিনের; সম্প্রতি ওই বন্ধুর ফোনটিও মেরামত করে ফেরত দেয় সাকিব। তবে প্রেমিকার জন্য বন্ধুর হাতে লাঞ্ছনার শিকার অপর বন্ধু মনে মনে ক্ষোভ জমিয়েই রাখে। সেই ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটল গলাকেটে নৃশংস ভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কুঠিবাড়ির মাঠে ভাইমারা খালের ধারে স্কুলছাত্র আহমেদ সাকিবকে (সাকু) হত্যার পর ফেলে রেখে যাওয়া হয়। নিহত সাকিব চুয়াডাঙ্গা শহরের সিএ্যান্ডবি পাড়ার রজনীগন্ধা সড়কের (মৎস ভবনের কাছে) মরহুম ঠিকাদার আব্দুল করিমের ছেলে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। রাতেই পুলিশের তড়িৎ অভিযানে হত্যাকান্ডের ১০ ঘন্টার মাথায় দুই ঘাতককে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করা সম্ভব হয়। আটক দু’জনের স্বীকারোক্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায় এবং তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাকিবের ডিএসএলআর ক্যামেরা, স্মার্ট ফোন ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও পরিচয় গোপণ রাখা হয়।


ঘাতকদের স্বীকারোক্তিতে আরো জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফিরেছে সাকিবের সাথে বিরোধ থাকা সেই বন্ধু। সোমবার সকালে সাকিবসহ তিন বন্ধুর আলোচনা হয় তারা আজ ঘুরবে। সে অনুযায়ী দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বাড়ি থেকে বের হয়ে এক বন্ধুর মোটরসাইকেলে তিনজন ঘুরতে বের হয়। তারা দামুড়হুদা থেকে শুরু করে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বিকাল ৩টা নাগাদ দামুড়হুদা জুড়ানপুরের কুঠিবাড়ির ওই মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় সাকিবকে। তবে সেই বন্ধুর মনে মনে তখনও সাকিবকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল; যা সাকিব ধারণাও করতে পারেনি। কুঠিবাড়ির মাঠের ভাইমারা খালের ধারে পৌছুতেই সাকিবের ঘাড়ে আঘাত করা হয়। ঘাড়ে আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাথে থাকা অপর বন্ধু বেল্ট দিয়ে সাকিবের গলা চেপে ধরে। এ সময় সেই বন্ধুটির হাতে থাকা ধারালো ব্লেড দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় সাকিবকে। গতকাল রাত ১টার দিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত মূল অভিযুক্ত সাকিবের দুই বন্ধুকে আটক করে। তারা অকপটে সবকিছু স্বীকার করে এবং নিজেদের জড়িত থাকার কারণ ও হত্যাকান্ডের উপরোক্ত বর্ণনা দেয়।


এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি ডিএসএলআর ক্যামেরা আর দামী স্মার্ট ফোন নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে সে। এই ক্যামেরা ও স্মার্ট ফোনের জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন জানান, সোমবার আহমেদ সাকিব (১৮) কে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কুঠিপাড়া মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত সাকিব চুয়াডাঙ্গা শহরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।


নিহতের মামা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘কাছে থাকা ডিএসএলআর ক্যামেরাকে কেন্দ্র করেই সাকিবকে হত্যা করা হয়েছে; আমার ধারণা। এই ক্যামেরা নিয়ে ওর বন্ধু বান্ধবের ঝামেলা ছিল। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার ফিরে আসে সে। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর তার পরিচিত এক বন্ধুর ডাকে তার সঙ্গে আবারও বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। পরে তার হত্যার খবর আসে পরিবারের কাছে। এ ব্যাপারে আজ দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাহবুবুবর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা ও জীবননগর সার্কেল) আহসান হাবীবসহ জেলা বিশেষ শাখা ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পূর্ব শক্রতার জের ধরে স্কুলছাত্র সাকিবকে গলাকেটে হত্যা

আপলোড টাইম : ০৬:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮

দামুড়হুদা জুড়ানপুরের কুঠিবাড়ির মাঠে দিনদুপুরে নৃশংসতা : প্রেমিকার কারণে বন্ধুকে মারপিট
পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : অভিযানে আটক-২ : মোটরসাইকেল-ক্যামেরা ও স্মার্ট ফোন উদ্ধার
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসএম শাফায়েত/আফজাল/রোকন: মাস সাতেক আগে প্রেমিকাকে অপদস্ত করা নিয়ে এক বন্ধুকে মারধর করে সাকিব। এ সময় ওই বন্ধুর কাছে থাকা একটি দামী স্মার্ট ফোন ভেঙে যায়। এ ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিনের; সম্প্রতি ওই বন্ধুর ফোনটিও মেরামত করে ফেরত দেয় সাকিব। তবে প্রেমিকার জন্য বন্ধুর হাতে লাঞ্ছনার শিকার অপর বন্ধু মনে মনে ক্ষোভ জমিয়েই রাখে। সেই ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটল গলাকেটে নৃশংস ভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কুঠিবাড়ির মাঠে ভাইমারা খালের ধারে স্কুলছাত্র আহমেদ সাকিবকে (সাকু) হত্যার পর ফেলে রেখে যাওয়া হয়। নিহত সাকিব চুয়াডাঙ্গা শহরের সিএ্যান্ডবি পাড়ার রজনীগন্ধা সড়কের (মৎস ভবনের কাছে) মরহুম ঠিকাদার আব্দুল করিমের ছেলে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। রাতেই পুলিশের তড়িৎ অভিযানে হত্যাকান্ডের ১০ ঘন্টার মাথায় দুই ঘাতককে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করা সম্ভব হয়। আটক দু’জনের স্বীকারোক্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায় এবং তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাকিবের ডিএসএলআর ক্যামেরা, স্মার্ট ফোন ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও পরিচয় গোপণ রাখা হয়।


ঘাতকদের স্বীকারোক্তিতে আরো জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফিরেছে সাকিবের সাথে বিরোধ থাকা সেই বন্ধু। সোমবার সকালে সাকিবসহ তিন বন্ধুর আলোচনা হয় তারা আজ ঘুরবে। সে অনুযায়ী দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বাড়ি থেকে বের হয়ে এক বন্ধুর মোটরসাইকেলে তিনজন ঘুরতে বের হয়। তারা দামুড়হুদা থেকে শুরু করে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বিকাল ৩টা নাগাদ দামুড়হুদা জুড়ানপুরের কুঠিবাড়ির ওই মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় সাকিবকে। তবে সেই বন্ধুর মনে মনে তখনও সাকিবকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল; যা সাকিব ধারণাও করতে পারেনি। কুঠিবাড়ির মাঠের ভাইমারা খালের ধারে পৌছুতেই সাকিবের ঘাড়ে আঘাত করা হয়। ঘাড়ে আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাথে থাকা অপর বন্ধু বেল্ট দিয়ে সাকিবের গলা চেপে ধরে। এ সময় সেই বন্ধুটির হাতে থাকা ধারালো ব্লেড দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় সাকিবকে। গতকাল রাত ১টার দিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত মূল অভিযুক্ত সাকিবের দুই বন্ধুকে আটক করে। তারা অকপটে সবকিছু স্বীকার করে এবং নিজেদের জড়িত থাকার কারণ ও হত্যাকান্ডের উপরোক্ত বর্ণনা দেয়।


এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি ডিএসএলআর ক্যামেরা আর দামী স্মার্ট ফোন নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে সে। এই ক্যামেরা ও স্মার্ট ফোনের জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন জানান, সোমবার আহমেদ সাকিব (১৮) কে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কুঠিপাড়া মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত সাকিব চুয়াডাঙ্গা শহরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।


নিহতের মামা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘কাছে থাকা ডিএসএলআর ক্যামেরাকে কেন্দ্র করেই সাকিবকে হত্যা করা হয়েছে; আমার ধারণা। এই ক্যামেরা নিয়ে ওর বন্ধু বান্ধবের ঝামেলা ছিল। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার ফিরে আসে সে। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর তার পরিচিত এক বন্ধুর ডাকে তার সঙ্গে আবারও বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। পরে তার হত্যার খবর আসে পরিবারের কাছে। এ ব্যাপারে আজ দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাহবুবুবর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা ও জীবননগর সার্কেল) আহসান হাবীবসহ জেলা বিশেষ শাখা ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা।