ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পুলিশি তৎপরতায় মুজিবনগরে ফিরল সাইফুল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৫:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ১৯২ বার পড়া হয়েছে

দালালচক্রের খপ্পরে বাংলাদেশি নাগরিক ইরাকে অপহৃত
শের খান:
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের রনজিৎ আলী শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৩)। অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান তিনি। পরিবােের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৭ সালে ঢাকার ইউনিক কোম্পানির মাধ্যেমে চুক্তিভিত্তিক দুই বছরের ভিসা নিয়ে চাকরির জন্য ইরাকে পাড়ি জমান এবং হানুয়া নামের একটি কোম্পানিতে চাকরিও শুরু করেন তিনি। সেখানে যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে তাঁর ভালোই চলছিল। ভেবেছিলেন এবার বোধয় তিনি সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পারবেন। কিন্তু তাঁর এ আশা আর পূরণ হলো না। কষ্ট কষ্টই থেকে গেল। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাইফুলের জীবন শুরু হয় অন্যরকম জীবন। নিজের জীবন নিয়েই চলে টানাটানি।
এ অবস্থায় সাইফুল দালালের প্রলোভনে পড়ে আরেকটি চাকরির জন্য যান ইরাকেই থাকা কিছু দালালের কাছে। তাঁরা উন্নত চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হানুয়া কোম্পানি ছেড়ে চলে আসতে বলেন সাইফুলকে। দালালদের কথায় উন্নত চাকরির আশায় অবুঝের মতো হানুয়া কোম্পানি ছেড়ে চলে যান সাইফুল। পরে দালালদের কাছে এলে তাঁরা সাইফুলকে ইরাকে তাঁদের গোপন স্থানে আটক করে রাখেন। শুরু হয় তাঁর প্রতি চরম নির্যাতন। সাইফুলের মুক্তিপণের জন্য তাঁর বাবা-মার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ওই দালালচক্র। তাঁরা টাকা পাঠানোর জন্য ফরিদপুর জেলার নগরগান্দা উপজেলার চুকাইল গ্রামের আব্দুল্লাহ ব্যাপারী নামের এক বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে পাঁচটি বিকাশ নম্বর সাইফুলের পরিবারের কাছে দিয়ে বিভিন্ন ধাপে টাকা পাঠাতে বলেন।
ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের কথামতো ৬৫ হাজার টাকা বিকাশ করে সাইফুলের পরিবার। কিন্তু এতেও তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। সাইফুলের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে দালালচক্রের সদস্যরা। পুরো টাকা না দিলে সাইফুলকে খুন করা হবে বলেও জানায় দালালচক্র। পরে সাইফুলের পরিবার আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে আশ্রয় নেয় মুজিবনগর থানা-পুলিশের। মুজিবনগর থানায় মামলা রেকর্ড করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাশেম। মামলা নেওয়ার পর শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বের করেন ওই বিকাশ মোবাইল নম্বরের এজেন্ট মালিককে। জানতে পারেন এজেন্ট মালিকের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। সেখান থেকে পুলিশ জানতে পারে মূল রহস্য। সাইফুলকে উদ্ধারের জন্য মুজিবনগড়র থানা-পুলিশ ইরাকে বিভিন্নভাবে দালালদের খোঁজ লাগায়। দালালচক্রের সদস্যরা এ সব ঘটনা জানতে পেরে, ধরার পড়ার ভয়ে অপহৃত সাইফুলকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এদিকে, পুলিশ ওই বিকাশ এজেন্টের মালিক ফরিদপুর জেলার নগরগান্দা উপজেলার চুকাইল গ্রামের আব্দুল ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর দিকে, সাইফুলকে খুঁজে বের করে ইরাকী পুলিশ তাঁকে থানা হাজতে নিয়ে যায়। পরে সেখানে যোগাযোগ করে সাইফুলকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে পুলিশ। এরপর গত বুধবার সকালে সাইফুল বাংলাদেশে পৌঁছালে তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে মুজিবনগর থানার পুলিশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পুলিশি তৎপরতায় মুজিবনগরে ফিরল সাইফুল

আপলোড টাইম : ১১:১৫:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দালালচক্রের খপ্পরে বাংলাদেশি নাগরিক ইরাকে অপহৃত
শের খান:
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের রনজিৎ আলী শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৩)। অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান তিনি। পরিবােের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৭ সালে ঢাকার ইউনিক কোম্পানির মাধ্যেমে চুক্তিভিত্তিক দুই বছরের ভিসা নিয়ে চাকরির জন্য ইরাকে পাড়ি জমান এবং হানুয়া নামের একটি কোম্পানিতে চাকরিও শুরু করেন তিনি। সেখানে যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে তাঁর ভালোই চলছিল। ভেবেছিলেন এবার বোধয় তিনি সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পারবেন। কিন্তু তাঁর এ আশা আর পূরণ হলো না। কষ্ট কষ্টই থেকে গেল। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাইফুলের জীবন শুরু হয় অন্যরকম জীবন। নিজের জীবন নিয়েই চলে টানাটানি।
এ অবস্থায় সাইফুল দালালের প্রলোভনে পড়ে আরেকটি চাকরির জন্য যান ইরাকেই থাকা কিছু দালালের কাছে। তাঁরা উন্নত চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হানুয়া কোম্পানি ছেড়ে চলে আসতে বলেন সাইফুলকে। দালালদের কথায় উন্নত চাকরির আশায় অবুঝের মতো হানুয়া কোম্পানি ছেড়ে চলে যান সাইফুল। পরে দালালদের কাছে এলে তাঁরা সাইফুলকে ইরাকে তাঁদের গোপন স্থানে আটক করে রাখেন। শুরু হয় তাঁর প্রতি চরম নির্যাতন। সাইফুলের মুক্তিপণের জন্য তাঁর বাবা-মার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ওই দালালচক্র। তাঁরা টাকা পাঠানোর জন্য ফরিদপুর জেলার নগরগান্দা উপজেলার চুকাইল গ্রামের আব্দুল্লাহ ব্যাপারী নামের এক বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে পাঁচটি বিকাশ নম্বর সাইফুলের পরিবারের কাছে দিয়ে বিভিন্ন ধাপে টাকা পাঠাতে বলেন।
ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের কথামতো ৬৫ হাজার টাকা বিকাশ করে সাইফুলের পরিবার। কিন্তু এতেও তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। সাইফুলের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে দালালচক্রের সদস্যরা। পুরো টাকা না দিলে সাইফুলকে খুন করা হবে বলেও জানায় দালালচক্র। পরে সাইফুলের পরিবার আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে আশ্রয় নেয় মুজিবনগর থানা-পুলিশের। মুজিবনগর থানায় মামলা রেকর্ড করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাশেম। মামলা নেওয়ার পর শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বের করেন ওই বিকাশ মোবাইল নম্বরের এজেন্ট মালিককে। জানতে পারেন এজেন্ট মালিকের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। সেখান থেকে পুলিশ জানতে পারে মূল রহস্য। সাইফুলকে উদ্ধারের জন্য মুজিবনগড়র থানা-পুলিশ ইরাকে বিভিন্নভাবে দালালদের খোঁজ লাগায়। দালালচক্রের সদস্যরা এ সব ঘটনা জানতে পেরে, ধরার পড়ার ভয়ে অপহৃত সাইফুলকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এদিকে, পুলিশ ওই বিকাশ এজেন্টের মালিক ফরিদপুর জেলার নগরগান্দা উপজেলার চুকাইল গ্রামের আব্দুল ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর দিকে, সাইফুলকে খুঁজে বের করে ইরাকী পুলিশ তাঁকে থানা হাজতে নিয়ে যায়। পরে সেখানে যোগাযোগ করে সাইফুলকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে পুলিশ। এরপর গত বুধবার সকালে সাইফুল বাংলাদেশে পৌঁছালে তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে মুজিবনগর থানার পুলিশ।