ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, জনসাধারণের নাভিশ্বাস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০২০
  • / ১৭৭ বার পড়া হয়েছে

গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতিও হঠাৎ ঘটেছে। আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না স্বল্প আয়ের অসংখ্য মানুষ। তাদের মাসিক আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগই ব্যয় হয় বাড়িভাড়ায়। সাথে যোগ হচ্ছে পোষ্যদের স্কুল-কলেজের বেতন, যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়। সব মিলিয়ে যখন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখনই বিদ্যুৎ ও পানির দাম আবার বাড়াল সরকার। এটি এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য। শিল্প খাতেও এর প্রভাব পড়ছে নেতিবাচক। বিদ্যুতের দাম বাড়ার অর্থ হলো, দেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। শিল্পপণ্য উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ পণ্যের দামে যোগ করবেন উদ্যোক্তারা। সেই অতিরিক্ত দাম গ্রাহকদেরই পরিশোধ করতে হবে। এর প্রভাবে সব ধরনের দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে আরও উসকে দেওয়া হবে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় আরও বাড়বে।
গত ১০ বছরে এবার নিয়ে আটবার খুচরাপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এই দাম বাড়ানোর বেলায় সরকার একটি কৌশল নিয়েছে; যাকে ‘খুচরা চালাকি’ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। একবারে না বাড়িয়ে বারে বারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার; যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা না দেয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারি বয়ান হচ্ছেÑ দাম বাড়ানো নয়, ‘সমন্বয়’ করা হচ্ছে। সরকার যে কথাই বলুক না কেন, বিদ্যুৎসেবা পেতে গ্রাহককে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে। ফলে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনমান আরও কমবে। সরকারের উচিত ছিল, এমন পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই পরিষেবার দাম পারতপক্ষে না বাড়ানো। কিন্তু সর্বসাধারণের এই চাওয়া সব সময় উপেক্ষা করছে সরকার।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের যুক্তি খোঁড়া, যা গ্রহণযোগ্য নয় মোটেই। এর বিপরীতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। দেশে সুশাসনের অভাবেই এমনটি হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়াসহ জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও পিডিবি বছরে ৫০০ কোটি টাকা লাভ করেছে, যা ‘আইনানুযায়ী করতে পারে না’ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবির দায়িত্ব হলো জনগণকে সেবা দেওয়া, মুনাফা করা নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ অনুৎপাদনশীল খাতে যে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, তা বন্ধ করতে পারলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চাপাতে হতো না। অন্য দিকে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পোশাক খাতসহ অনেক শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। এমনিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি চাপে রয়েছে। বেশির ভাগ সূচকই নিম্নগামী। বিশ্ব-অর্থনীতিও মন্দার আশঙ্কায়। কমে যাচ্ছে সামগ্রিক চাহিদা। এ রকম এক সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগী, তা নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তাসহ সবপর্যায়ের নাগরিক প্রশ্ন তুলেছে।
আমরা আশা করি, বিদ্যুৎ ও পানির যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করার উদ্যোগ নেবে সরকার। কারণ, সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে নাগরিকদের দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন নিশ্চিত করা; কোনো অবস্থায়ই তাদের কষ্ট ও বিপদে ফেলা নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, জনসাধারণের নাভিশ্বাস

আপলোড টাইম : ১০:০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০২০

গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতিও হঠাৎ ঘটেছে। আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না স্বল্প আয়ের অসংখ্য মানুষ। তাদের মাসিক আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগই ব্যয় হয় বাড়িভাড়ায়। সাথে যোগ হচ্ছে পোষ্যদের স্কুল-কলেজের বেতন, যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়। সব মিলিয়ে যখন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখনই বিদ্যুৎ ও পানির দাম আবার বাড়াল সরকার। এটি এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য। শিল্প খাতেও এর প্রভাব পড়ছে নেতিবাচক। বিদ্যুতের দাম বাড়ার অর্থ হলো, দেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। শিল্পপণ্য উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ পণ্যের দামে যোগ করবেন উদ্যোক্তারা। সেই অতিরিক্ত দাম গ্রাহকদেরই পরিশোধ করতে হবে। এর প্রভাবে সব ধরনের দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে আরও উসকে দেওয়া হবে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় আরও বাড়বে।
গত ১০ বছরে এবার নিয়ে আটবার খুচরাপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এই দাম বাড়ানোর বেলায় সরকার একটি কৌশল নিয়েছে; যাকে ‘খুচরা চালাকি’ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। একবারে না বাড়িয়ে বারে বারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার; যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা না দেয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারি বয়ান হচ্ছেÑ দাম বাড়ানো নয়, ‘সমন্বয়’ করা হচ্ছে। সরকার যে কথাই বলুক না কেন, বিদ্যুৎসেবা পেতে গ্রাহককে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে। ফলে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনমান আরও কমবে। সরকারের উচিত ছিল, এমন পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই পরিষেবার দাম পারতপক্ষে না বাড়ানো। কিন্তু সর্বসাধারণের এই চাওয়া সব সময় উপেক্ষা করছে সরকার।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের যুক্তি খোঁড়া, যা গ্রহণযোগ্য নয় মোটেই। এর বিপরীতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। দেশে সুশাসনের অভাবেই এমনটি হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়াসহ জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও পিডিবি বছরে ৫০০ কোটি টাকা লাভ করেছে, যা ‘আইনানুযায়ী করতে পারে না’ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবির দায়িত্ব হলো জনগণকে সেবা দেওয়া, মুনাফা করা নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ অনুৎপাদনশীল খাতে যে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, তা বন্ধ করতে পারলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চাপাতে হতো না। অন্য দিকে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পোশাক খাতসহ অনেক শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। এমনিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি চাপে রয়েছে। বেশির ভাগ সূচকই নিম্নগামী। বিশ্ব-অর্থনীতিও মন্দার আশঙ্কায়। কমে যাচ্ছে সামগ্রিক চাহিদা। এ রকম এক সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগী, তা নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তাসহ সবপর্যায়ের নাগরিক প্রশ্ন তুলেছে।
আমরা আশা করি, বিদ্যুৎ ও পানির যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করার উদ্যোগ নেবে সরকার। কারণ, সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে নাগরিকদের দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন নিশ্চিত করা; কোনো অবস্থায়ই তাদের কষ্ট ও বিপদে ফেলা নয়।