ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাটকল শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে গড়িমসি কেন?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৪৯ বার পড়া হয়েছে

পাওনা পরিশোধের দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা আবারো রাস্তায় নামতে হলো। চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন জুট মিলের শ্রমিকরা। ৯ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। তাদের মূল দাবি সব বকেয়া পাওনা পরিশোধ, এর সঙ্গে রয়েছে- পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়, পে-কমিশনের মতো শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন বোর্ড গঠন, শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের দাবি। জানা গেছে, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খুলনা অঞ্চলে। এ অঞ্চলের সাতটি পাটকলে প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। জানা গেছে, প্রতিটি কলেই শ্রমিকদের মজুরি ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পি এফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বলছে, জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সব মিল কর্তৃপক্ষকে জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে বিজেএমসি। শ্রমিকরা এই নির্দেশনায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না। গতকালও খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওয়া বুঝে দিতে প্রধানমন্ত্রীকেও উদ্যোগী হতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। শ্রমিকরা স্পষ্টই বলেছেন, তারা আর সরকারি আশ্বাসে ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারছেন না। মিলের তহবিলে টাকা জমা না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলবে। শ্রমিকদের আস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। ধর্মঘট অবরোধ পরিহার করে কাজে ফিরে নিতে হবে। বর্তমান সরকার পাট খাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার কথা বলে আসছে অনেক দিন ধরেই। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কথাও আমরা জানি। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পাট ও শিল্প খাত উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। কৃষককে পাট উৎপাদনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মিলগুলোর সমস্যা-সংকট দূর করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের ব্যবস্থার পথ মসৃণ করা সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা হাতে পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে আসন্ন নববর্ষের উৎসবে শামিল হতে পারবেন। বকেয়া পরিশোধ ছাড়া অন্য যে দাবিগুলো শ্রমিকদের রয়েছে সেগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই করেও দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পাটকল শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে গড়িমসি কেন?

আপলোড টাইম : ০৯:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৯

পাওনা পরিশোধের দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা আবারো রাস্তায় নামতে হলো। চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন জুট মিলের শ্রমিকরা। ৯ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। তাদের মূল দাবি সব বকেয়া পাওনা পরিশোধ, এর সঙ্গে রয়েছে- পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়, পে-কমিশনের মতো শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন বোর্ড গঠন, শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের দাবি। জানা গেছে, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খুলনা অঞ্চলে। এ অঞ্চলের সাতটি পাটকলে প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। জানা গেছে, প্রতিটি কলেই শ্রমিকদের মজুরি ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পি এফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বলছে, জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সব মিল কর্তৃপক্ষকে জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে বিজেএমসি। শ্রমিকরা এই নির্দেশনায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না। গতকালও খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওয়া বুঝে দিতে প্রধানমন্ত্রীকেও উদ্যোগী হতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। শ্রমিকরা স্পষ্টই বলেছেন, তারা আর সরকারি আশ্বাসে ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারছেন না। মিলের তহবিলে টাকা জমা না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলবে। শ্রমিকদের আস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। ধর্মঘট অবরোধ পরিহার করে কাজে ফিরে নিতে হবে। বর্তমান সরকার পাট খাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার কথা বলে আসছে অনেক দিন ধরেই। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কথাও আমরা জানি। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পাট ও শিল্প খাত উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। কৃষককে পাট উৎপাদনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মিলগুলোর সমস্যা-সংকট দূর করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের ব্যবস্থার পথ মসৃণ করা সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা হাতে পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে আসন্ন নববর্ষের উৎসবে শামিল হতে পারবেন। বকেয়া পরিশোধ ছাড়া অন্য যে দাবিগুলো শ্রমিকদের রয়েছে সেগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই করেও দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত।