ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটিসহ বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব ঐকমত্যের নতুন নির্বাচন কমিশন চান খালেদা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৩৪০ বার পড়া হয়েছে

khaleda_zia_bnp_31163_1479480892

সমীকরণ ডেস্ক: নতুন নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনে কিভাবে আগামী নির্বাচন হবে- সে বিষয়ে বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এই কমিশন হতে হবে ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে। ১৩ দফা প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের একটি রূপরেখা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা এবং ‘সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারা সংশোধনের কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। শুক্রবার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিনেত্রী পৌনে এক ঘণ্টার বক্তৃতায় ‘তত্ত্বাবধায়ক’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তার বদলে তিনি একটি ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন চেয়েছেন এবং ‘যথাসময়ে’ সেই সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করবেন বলে জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা বলেন, গত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং গত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ’ জনগণকে ‘হতাশ, আস্থাহীন ও ক্ষুব্ধ’ করে তুলেছে। তার ভাষায়, জনগণ ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ এমন একটি নির্বাচন চায়, যেখানে তারা ‘নির্বিঘ্নে’ ভোট দিতে পারবেন এবং তার ফলাফল ‘কেউ বদলে দিতে পারবে না’। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়, বলেন খালেদা। ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। আগের বারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে অধিকাংশ নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বিএনপি। দলটি সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়া বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী, দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার কোনো বিকল্প নেই।… সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন কমিশন ‘গঠন প্রক্রিয়ায় এবং পদ্ধতি নিরূপণে’ সব রাজনৈতিক দলকে চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বার বার জোর দিয়েছেন, ‘সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলকে’ ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। বিএনপির প্রস্তাব, ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি’ ঠিক করতে সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলাদাভাবে বসবেন। দেশের ‘প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট’ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষ থেকে একজন করে মূল প্রতিনিধি এবং তাকে সহায়তা করতে আরও দুজন করে প্রতিনিধি ওই বৈঠকে থাকতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে ‘সৎ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদের’ আলোচনায় যুক্ত করতে পারবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা ও মনোনয়নের প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। এসব বৈঠকের কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত দলগুলোর প্রতিনিধিদের সইসহ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে সব দল পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুইজনের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদসে?্যর বাছাই কমিটি গঠন করবেন। এর প্রধান হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি। সদস্য থাকবেন আপিল বিভাগের একজন সাবেক বিচারক, একজন সাবেক সচিব, একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ?্যাপক এবং একজন নারী। তাদের সবাইকে ‘দল নিরপেক্ষ’ হতে হবে, বিতর্ক থাকলে চলবে না, অবসরের পর সরকারের লাভজনক পদে দায়িত্ব পালন করা যাবে না। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রত্যেক দল প্রতি পদের বিপরীতে দুই জনের নাম প্রস্তাব করবে। বাছাই কমিটি সেখান থেকে সিইসি পদের জন দুটি এবং চারটি কমিশনার পদের জন্য আটটি নাম বাছাই করবে। বাছাই কমিটির তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করবেন। চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের জীবনবৃত্তান্ত ও সম্পদের বিবরণী জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে খালেদা জিয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, ‘রাজনৈতিক মতাবলম্বী’ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্র্নিধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়েও কিছু প্রস্তাব রয়েছে খালেদার।
লিখিত প্রস্তাবনার শেষ দিকে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতিরেকে এ সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথাসময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করবে। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, আবদুল মান্নান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি গোলাম মোর্ত্তজা, আজহারুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহমেদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মো. আবদুর রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, জাবির প্রাক্তন উপাচার্য ড. মোস্তাহিদুর রহমান, দিলারা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটিসহ বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব ঐকমত্যের নতুন নির্বাচন কমিশন চান খালেদা

আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

khaleda_zia_bnp_31163_1479480892

সমীকরণ ডেস্ক: নতুন নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনে কিভাবে আগামী নির্বাচন হবে- সে বিষয়ে বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এই কমিশন হতে হবে ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে। ১৩ দফা প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের একটি রূপরেখা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা এবং ‘সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারা সংশোধনের কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। শুক্রবার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিনেত্রী পৌনে এক ঘণ্টার বক্তৃতায় ‘তত্ত্বাবধায়ক’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তার বদলে তিনি একটি ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন চেয়েছেন এবং ‘যথাসময়ে’ সেই সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করবেন বলে জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা বলেন, গত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং গত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ’ জনগণকে ‘হতাশ, আস্থাহীন ও ক্ষুব্ধ’ করে তুলেছে। তার ভাষায়, জনগণ ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ এমন একটি নির্বাচন চায়, যেখানে তারা ‘নির্বিঘ্নে’ ভোট দিতে পারবেন এবং তার ফলাফল ‘কেউ বদলে দিতে পারবে না’। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়, বলেন খালেদা। ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। আগের বারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে অধিকাংশ নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বিএনপি। দলটি সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়া বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী, দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার কোনো বিকল্প নেই।… সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন কমিশন ‘গঠন প্রক্রিয়ায় এবং পদ্ধতি নিরূপণে’ সব রাজনৈতিক দলকে চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বার বার জোর দিয়েছেন, ‘সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলকে’ ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। বিএনপির প্রস্তাব, ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি’ ঠিক করতে সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলাদাভাবে বসবেন। দেশের ‘প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট’ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষ থেকে একজন করে মূল প্রতিনিধি এবং তাকে সহায়তা করতে আরও দুজন করে প্রতিনিধি ওই বৈঠকে থাকতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে ‘সৎ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদের’ আলোচনায় যুক্ত করতে পারবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা ও মনোনয়নের প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। এসব বৈঠকের কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত দলগুলোর প্রতিনিধিদের সইসহ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে সব দল পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুইজনের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদসে?্যর বাছাই কমিটি গঠন করবেন। এর প্রধান হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি। সদস্য থাকবেন আপিল বিভাগের একজন সাবেক বিচারক, একজন সাবেক সচিব, একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ?্যাপক এবং একজন নারী। তাদের সবাইকে ‘দল নিরপেক্ষ’ হতে হবে, বিতর্ক থাকলে চলবে না, অবসরের পর সরকারের লাভজনক পদে দায়িত্ব পালন করা যাবে না। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রত্যেক দল প্রতি পদের বিপরীতে দুই জনের নাম প্রস্তাব করবে। বাছাই কমিটি সেখান থেকে সিইসি পদের জন দুটি এবং চারটি কমিশনার পদের জন্য আটটি নাম বাছাই করবে। বাছাই কমিটির তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করবেন। চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের জীবনবৃত্তান্ত ও সম্পদের বিবরণী জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে খালেদা জিয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, ‘রাজনৈতিক মতাবলম্বী’ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্র্নিধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়েও কিছু প্রস্তাব রয়েছে খালেদার।
লিখিত প্রস্তাবনার শেষ দিকে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতিরেকে এ সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথাসময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করবে। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, আবদুল মান্নান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি গোলাম মোর্ত্তজা, আজহারুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহমেদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মো. আবদুর রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, জাবির প্রাক্তন উপাচার্য ড. মোস্তাহিদুর রহমান, দিলারা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।