ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা দূর করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৩৮৩ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীতে একের পর এক দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য সব দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলার সুযোগ আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যে দুর্ঘটনার জন্য সিংহভাগ দায়ী চালক, সেই দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে সেটিকে কেউ দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা- বললে কি অযৌক্তিক হবে? রোববার বিমানবন্দর সড়কে বাসের নিচে চাপা পড়ে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। যাত্রী তোলার জন্য দুটি বাসের রেষারেষির শিকার হয়েছে তারা। এ ঘটনাকে কি আমরা দুর্ঘটনা বলব? বস্তুত রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্যকর অবস্থাই এ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের নৈরাজ্যের শিকার হয়ে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে দুটি বাসের রেষারেষিতে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের এক হাত বিচ্ছিন্ন এবং পরে তার করুণ মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। এঘটনা ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই যেন রাজধানীর রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সাধারণত নগরীর ভেতর যানবাহনের আধিক্যের মাঝে গাড়ির নিগুতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে কম। তাছাড়া রাজধানীতে রয়েছে পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা, উন্নত সিগন্যাল পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ। তারপরও রাজধানীর সড়কে এত দুর্ঘটনা কেন, এ প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক নয়। রাজধানীতে দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা অতীতে খুব বেশি ঘটেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সেই ঘটনাই ঘটছে অহরহ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর মতো রাজধানীতেও সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি সবার জন্যই উদ্বেগজনক।
প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনার বেশিরভাগই হয়ে থাকে চালকের ভুল পদ্ধতিতে গাড়ি চালনা, অসচেতনতা, বেপরোয়া প্রতিযোগিতা ও উদ্ধত মনোভাবের কারণে। অথচ দায়ী চালকদের বিচারের আওতায় আনার ঘটনা নেই বললেই চলে। দুর্ঘটনার দায়ে কোনো চালকের বিচার হলেও পরিবহন শ্রমিকরা আদালতের রায় মানতে চায় না। এ এক অদ্ভুত ব্যাপারই বটে। এ পরিস্থিতির জন্য মূলত পরিবহন সেক্টরের অরাজকতাই দায়ী। বাস মালিক-শ্রমিকরা আইনের কোনো তোয়াক্কা করে না। বাসের হেলপারদের হাতে তুলে দেয়া হয় স্টিয়ারিং। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। ট্রাফিক ব্যবস্থা কঠোর করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। প্রকৃত লাইসেন্স ছাড়া কারও হাতে বাস চালনার ভার দেয়া যাবে না। এ সংক্রান্ত আইন বলবৎ করতে হবে কঠোরভাবে।
রোববার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত দুই বাসচালক ও তাদের দুই সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। তবে পরিবহন সেক্টরের বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে একজন-দু’জন অপরাধীর বিচার হওয়াই যথেষ্ট নয়। গোটা পরিবহন সেক্টরকে আইন মেনে চলতে বাধ্য করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা যে চলতেই থাকবে, এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাই আমরা বলব, যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে এ সেক্টরটিতে অরাজকতা বিরাজ করছে, তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। সরকারকে বুঝতে হবে এর সঙ্গে শুধু জননিরাপত্তা নয়, সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্নও জড়িত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা দূর করুন

আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অগাস্ট ২০১৮

রাজধানীতে একের পর এক দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য সব দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলার সুযোগ আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যে দুর্ঘটনার জন্য সিংহভাগ দায়ী চালক, সেই দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে সেটিকে কেউ দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা- বললে কি অযৌক্তিক হবে? রোববার বিমানবন্দর সড়কে বাসের নিচে চাপা পড়ে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। যাত্রী তোলার জন্য দুটি বাসের রেষারেষির শিকার হয়েছে তারা। এ ঘটনাকে কি আমরা দুর্ঘটনা বলব? বস্তুত রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্যকর অবস্থাই এ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের নৈরাজ্যের শিকার হয়ে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে দুটি বাসের রেষারেষিতে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের এক হাত বিচ্ছিন্ন এবং পরে তার করুণ মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। এঘটনা ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই যেন রাজধানীর রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সাধারণত নগরীর ভেতর যানবাহনের আধিক্যের মাঝে গাড়ির নিগুতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে কম। তাছাড়া রাজধানীতে রয়েছে পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা, উন্নত সিগন্যাল পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ। তারপরও রাজধানীর সড়কে এত দুর্ঘটনা কেন, এ প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক নয়। রাজধানীতে দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা অতীতে খুব বেশি ঘটেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সেই ঘটনাই ঘটছে অহরহ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর মতো রাজধানীতেও সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি সবার জন্যই উদ্বেগজনক।
প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনার বেশিরভাগই হয়ে থাকে চালকের ভুল পদ্ধতিতে গাড়ি চালনা, অসচেতনতা, বেপরোয়া প্রতিযোগিতা ও উদ্ধত মনোভাবের কারণে। অথচ দায়ী চালকদের বিচারের আওতায় আনার ঘটনা নেই বললেই চলে। দুর্ঘটনার দায়ে কোনো চালকের বিচার হলেও পরিবহন শ্রমিকরা আদালতের রায় মানতে চায় না। এ এক অদ্ভুত ব্যাপারই বটে। এ পরিস্থিতির জন্য মূলত পরিবহন সেক্টরের অরাজকতাই দায়ী। বাস মালিক-শ্রমিকরা আইনের কোনো তোয়াক্কা করে না। বাসের হেলপারদের হাতে তুলে দেয়া হয় স্টিয়ারিং। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। ট্রাফিক ব্যবস্থা কঠোর করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। প্রকৃত লাইসেন্স ছাড়া কারও হাতে বাস চালনার ভার দেয়া যাবে না। এ সংক্রান্ত আইন বলবৎ করতে হবে কঠোরভাবে।
রোববার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত দুই বাসচালক ও তাদের দুই সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। তবে পরিবহন সেক্টরের বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে একজন-দু’জন অপরাধীর বিচার হওয়াই যথেষ্ট নয়। গোটা পরিবহন সেক্টরকে আইন মেনে চলতে বাধ্য করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা যে চলতেই থাকবে, এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাই আমরা বলব, যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে এ সেক্টরটিতে অরাজকতা বিরাজ করছে, তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। সরকারকে বুঝতে হবে এর সঙ্গে শুধু জননিরাপত্তা নয়, সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্নও জড়িত।