নিহত হাসানের দাফন সম্পন্ন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ৬
- আপলোড টাইম : ১০:০৭:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৯
- / ২৫০ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গার আমিরপুরে কিশোরীকে অপহরণচেষ্টায় বাধা দেওয়ায় মামাকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনা
ঘটনার রাতে নিজের স্ত্রীকে ঘরে রেখে শেকল দিয়ে যান গণপিটুনিতে নিহত ঘাতক আকবর
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আমিরপুরে কিশোরী সুমাইয়াকে অপহরণচেষ্টাকালে বাধা দেওয়ায় অপহরণকারীর চুরিকাঘাতে নিহত কিশোরীর মামা হাসানুজ্জামানের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে আমিরপুর গ্রামের কবরস্থানে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এর আগে দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে হাসানুজ্জামানের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। অন্য দিকে, গণপিটুনিতে নিহত আকবরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান। ঘটনার রাতে গণপিটুনিতে নিহত অপহরণকারী আকবরের মরদেহও ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার মাগরিবের নামাজের পর মদনা গ্রামের উত্তরপাড়া মসজিদের সামনে নিহত আকবরের জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
সরেজমিনে আমিরপুর গ্রাম ঘুরে জানা যায়, হত্যাকা-ের এক ঘণ্টা পূর্বে আমিরপুর গ্রামের মসজিদ পাড়ার হযরত আলীর বাড়িতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পান পরিবারের সদস্যরা। হযরত আলীর স্ত্রী বলেন, ‘গভীর রাতে শব্দে ঘুম ভেঙে যাই। অন্ধকারে আমার মাথার কাছে পা দেখে ওই পা আমার কিশোরী মেয়ে বিথির মনে করে চেপে ধরে বলি, এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস। পরে বুঝতে পারি, এটি কোনো পুরুষের পা। এ সময় আমি চিৎকার দিলে ওই ব্যক্তি আমাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।’ এ ঘটনার এক ঘণ্টা পরই হাসানুজ্জামানের হত্যার ঘটনাটি ঘটে। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, হাসানুজ্জামানের হত্যাকা-ে জড়িত থাকা সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় বিদ্যুৎকর্মীকে থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। অপহরণচেষ্টাকারী নিহত আকবরের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে ওই ছয় বিদ্যুৎকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে ছয় বিদ্যুৎকর্মীকে থানা হেফাজতের নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্রের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি পুলিশ।
অপহরণকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হাসানুজ্জামানের মা বলেন, ‘ঘটনার দিন গত শুক্রবার বাড়ির সামনে বৈদ্যুতিক পোলে কয়েকজন কর্মী কাজ করছিল। তারা অহেতুক পানি পান করার ছলে অনেকবার আমার বাড়ির মধ্যে ঢোকে। এতে আমি ও আমার নাতনি সুমাইয়া বিরক্ত হয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমার নাতনিকে অপহরণচেষ্টার সংযোগ আছে বলে ধারণা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা কাজ করে চলে যাওয়ার সময় বাহানা করে একটি শাবল আমার বাড়ির মধ্যে ফেলে রেখে যায়। পরে শাবলটি নিতে এসে আমার পুরো বাড়িটি ঘুরে দেখে যায় তারা।’
অন্যদিকে, গুরুতর জখম ওই কিশোরীর নানা হামিদুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ঘাতকের ছুরিকাঘাতে নিহত হাসানুজ্জামানের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা যেন পাগলপ্রায়। হাসানের স্ত্রীও বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্বামী হারানোর শোকে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকা শোকের ছায়ায় ঢাকা পড়েছে।
জানা গেছে, ঘাতক আকবরকেও নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। রশি দিয়ে তাঁর পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান অনেকে। সরেজমিনে নিহত আকবরের ভাড়া বাড়িতে গেলে অন্য ভাড়াটেরা জানান, চার বছর আগে পূর্বের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁরই আপন ছোট বোনকে পালিয়ে বিয়ে করে ভাড়া থাকতেন আকবর। তবে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁদের চোখে এমন কোনো কিছুই পড়েনি বলে মন্তব্য করেন অন্য ভাড়াটেরা। এ সময় তাঁরা আরও জানান, ওই রাতে স্ত্রীকে ঘরের ভেতরে রেখে স্যান্ডেল না পরে দরজা বাইরে থেকে শেকল দিয়ে যান আকবর। সকালে পুলিশ এসে শেকল খুলে তাঁর স্ত্রীকে জাগিয়ে তোলে। এ সময় স্বামী কোথায় জিজ্ঞাসা করলে বাথরুমে যেতে পারেন বলে জানান তাঁর স্ত্রী। এলাকাবাসী আরও জানায়, আকবরের চারিত্রিক কিছু সমস্যা আছে। এর মধ্যে নারীর প্রতি আসক্তি অন্যতম। এর আগেও কয়েকবার তিনি নারীঘটিত বিষয়ে জড়ালে তাঁকে মারধর করে সমাধান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য বের করা সম্ভব হয়নি, তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় বিদ্যুৎকর্মীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘শুনেছি, হাসান হত্যাকা-ের কিছুক্ষণ আগে গ্রামের আরেকটি বাড়িতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি গিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা টের পেলে তিনি পালিয়ে যান।’ তবে তাঁকে শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান ওসি।