ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিষ্ঠুরতা ক্রমবর্ধমান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১০:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

প্রতিকারে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
আমাদের আর্থিক উন্নতি হলেও আত্মিক উন্নতি হচ্ছে না, ফলে আলোর পথ ছেড়ে সমাজ ক্রমেই অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে- আক্ষেপের সুরে অনেকেই আজকাল এমন কথা বলেন। এর কারণ, চার পাশে ঘটে যাওয়া অপরাধের বাড়াবাড়ি এবং ক্রমবর্ধমান নিষ্ঠুরতার প্রকাশ। মানুষের স্বাভাবিক বিচারবোধ এগুলোকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। অপরাধ দমনে রাষ্ট্রের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়েও মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এসব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে মানুষের মধ্যে অসহায়ত্ব ও হতাশা বাড়ছে।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, যৌন নিপীড়নের কারণে আত্মহত্যা, বিচার চাওয়ায় হত্যা বা এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতম কায়দায় খুন করার প্রতিযোগিতা, এ সবই আমরা দেখতে পাই। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত এক মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে গলা কেটে হত্যার ঘটনাই ঘটেছে শতাধিক। গড়ে প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে এক ডজনেরও বেশি। তিন-চার বছরের শিশুও রক্ষা পায় না এসব নরপশুর হাত থেকে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৫৭১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে চার শতাধিক শিশু। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কী ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি। মাদকের নেশা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে নেশার ঘোরে ছেলে-মেয়েরা নিজের মা-বাবাকে পর্যন্ত খুন করছে। শিক্ষাঙ্গনগুলো ক্রমে মাদক ও সন্ত্রাসের আখড়া হয়ে উঠছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকরাও এসব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। গত রোববারও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই শিক্ষকসহ ১০ জন আহত হয়েছে। মানুষ বিপদে পড়লে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ছুটে যাবে, সে আস্থাও কমে যাচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও অপরাধের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগও কম নয়। বিচারবোধসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষ এসব ঘটনায় শুধু দুঃখ পাচ্ছে, আহত হচ্ছে। তারা প্রতিকার বা মুক্তির কোনো পথ দেখছে না।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মধ্য দিয়ে সমাজে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু তা যদি না হয় বা উল্টোটা হয়, তখন সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায়। অপরাধীরা যখন রাজনৈতিক আনুকূল্য পায়, প্রশ্রয় পায়, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমরা কি তারই পরিণতি ভোগ করছি না? উচ্চ আদালতের রায়ে রয়েছে, ধর্ষণজনিত অপরাধের বিচার ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। হচ্ছে কি? বিচারিক প্রক্রিয়ায় নানা দুর্বলতা তো আছেই। সমাজকে বসবাসযোগ্য রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই পালন করতে হবে। সেটি কিভাবে করা সম্ভব হবে তা নীতিনির্ধারকদেরই ঠিক করতে হবে। সংকটকে অস্বীকার করে লাভ হয় না, সংকট সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নিষ্ঠুরতা ক্রমবর্ধমান

আপলোড টাইম : ০৯:১০:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রতিকারে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
আমাদের আর্থিক উন্নতি হলেও আত্মিক উন্নতি হচ্ছে না, ফলে আলোর পথ ছেড়ে সমাজ ক্রমেই অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে- আক্ষেপের সুরে অনেকেই আজকাল এমন কথা বলেন। এর কারণ, চার পাশে ঘটে যাওয়া অপরাধের বাড়াবাড়ি এবং ক্রমবর্ধমান নিষ্ঠুরতার প্রকাশ। মানুষের স্বাভাবিক বিচারবোধ এগুলোকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। অপরাধ দমনে রাষ্ট্রের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়েও মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এসব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে মানুষের মধ্যে অসহায়ত্ব ও হতাশা বাড়ছে।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, যৌন নিপীড়নের কারণে আত্মহত্যা, বিচার চাওয়ায় হত্যা বা এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতম কায়দায় খুন করার প্রতিযোগিতা, এ সবই আমরা দেখতে পাই। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত এক মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে গলা কেটে হত্যার ঘটনাই ঘটেছে শতাধিক। গড়ে প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে এক ডজনেরও বেশি। তিন-চার বছরের শিশুও রক্ষা পায় না এসব নরপশুর হাত থেকে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৫৭১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে চার শতাধিক শিশু। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কী ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি। মাদকের নেশা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে নেশার ঘোরে ছেলে-মেয়েরা নিজের মা-বাবাকে পর্যন্ত খুন করছে। শিক্ষাঙ্গনগুলো ক্রমে মাদক ও সন্ত্রাসের আখড়া হয়ে উঠছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকরাও এসব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। গত রোববারও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই শিক্ষকসহ ১০ জন আহত হয়েছে। মানুষ বিপদে পড়লে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ছুটে যাবে, সে আস্থাও কমে যাচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও অপরাধের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগও কম নয়। বিচারবোধসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষ এসব ঘটনায় শুধু দুঃখ পাচ্ছে, আহত হচ্ছে। তারা প্রতিকার বা মুক্তির কোনো পথ দেখছে না।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মধ্য দিয়ে সমাজে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু তা যদি না হয় বা উল্টোটা হয়, তখন সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায়। অপরাধীরা যখন রাজনৈতিক আনুকূল্য পায়, প্রশ্রয় পায়, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমরা কি তারই পরিণতি ভোগ করছি না? উচ্চ আদালতের রায়ে রয়েছে, ধর্ষণজনিত অপরাধের বিচার ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। হচ্ছে কি? বিচারিক প্রক্রিয়ায় নানা দুর্বলতা তো আছেই। সমাজকে বসবাসযোগ্য রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই পালন করতে হবে। সেটি কিভাবে করা সম্ভব হবে তা নীতিনির্ধারকদেরই ঠিক করতে হবে। সংকটকে অস্বীকার করে লাভ হয় না, সংকট সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।