ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল মোজাহেদীন ও হুজি-বির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শায়খ আবদুর রহমান ও ছিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের মতো একই পরিণতি হলো মুফতি হান্নানসহ তিন শীর্ষ জঙ্গির। গত রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মুফতি হান্নান ছাড়াও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। রাত ১০টার দিকে কাশিমপুরে মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল এবং সিলেট কারাগারে দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) ও হরকাতুল মোজাহেদীনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিল মুফতি আবদুল হান্নান। তার সঙ্গে হুজি-বি’র এ দু’সদস্যের মৃত্যুদ- কার্যকর উপলক্ষে দু’কারাগারে গত সোমবার থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে করা তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি গত সোমবার দুপুরে কাশিমপুর ও মঙ্গলবার সকালে সিলেট কারাগারে পৌঁছে। এরপর থেকে দু’কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে। একে একে সম্পন্ন হয় স্বজনদের সাক্ষাৎসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা। ২০০৪ সালের ২১শে মে তৎকালীন নবনিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে গ্রেনেড হামলায় ৩ জন নিহত ও ৭০ জন আহতের মামলায় তাদের এই পরিণতি বরণ করতে হলো। একই মামলায় অপর আসামি মুফতি হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি ও মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল যাবজ্জীবন কারাদ-ের সাজা ভোগ করছে। এর আগে ২০০৪ সালের ৩০শে মার্চ একই দিন চার কারাগারে জামা’আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও ছিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। আব্দুর রহমানও হান্নানের মতো আফগান ফেরত জঙ্গি ছিল। কেবল এই নাশকতা ও নৃশংস হত্যাকা-ই নয়, মুুফতি হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সারা দেশে সাত বছরে অন্তত ১৩টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে মন্ত্রীসহ ১০১ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬০৯ জন। এছাড়া ২০০১ সালে রমনায় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার অপর এক মামলায়ও হান্নানসহ হুজির আট জঙ্গির মৃত্যুদ-ের আদেশ হয়েছে। আগামী শুক্রবার বাংলা নববর্ষের এক দিন আগেই তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর হলো। আর বোমা ও গ্রেনেড হামলায় সংঘটিত এসব নাশকতায় ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব নাশকতায় রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী ছাড়াও তার অন্তত ৩টি হামলা ও হামলাচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে কাশিমপুর কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত সোমবার থেকেই কাশিমপুর কারাগারের আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে জেলখানা সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যান চলাচল সীমিত করা হয়। পাশাপাশি সাদা পোশাকেসহ বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র‌্যাব সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা গেছে। কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সোমবার পরিবারের সদস্যদেরকে হান্নান ও বিপুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠায়। মূলত রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার খবরে সদস্যরাও তাদের জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসার বিষয়টি ধরে নেন। গতকাল সকাল ৬টার দিকে মুফতি হান্নানের স্ত্রী, মেয়েসহ পরিবারের চার সদস্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিকিউরিটি কারাগারে যান। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হান্নানের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের অনুমতি চান। অনুমতি দেয়া হলে কারাগারে প্রবেশ করেন। দু’ঘণ্টার বেশি সময় পর সকাল সোয়া ৮টার দিকে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। তার কারাবন্দি দু’ভাইও তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ভাই মহিবুলকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ও গাজীপুরের কাশিমপুরে বন্দি মো. আনিসকে দুপুর ২টার দিকে হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, বুধবার সকালে মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভিন রুমা বেগম, বড় ভাই আলী উজ্জামান মুন্সী, মেয়ে নাজনীন ও নিশি খানম কারাগারে মুফতি হান্নানের সঙ্গে কথা বলেছেন। কারাবন্দি অপর দু’ভাইও সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকেই হান্নান এ কারাগারে। এরপর বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম। সন্ধ্যায় দু’টি এ¤॥^ুলেন্স কারাগারে প্রবেশ করে। সাক্ষাৎ শেষে তার বড় ভাই আলী উজ্জামান কারাফটকের সামনে হান্নানের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, মুফতি হান্নান তাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। বলেছেন, তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। যতোদিন তার হায়াত আছে ততোদিন তিনি বেঁচে থাকবেন। তার মৃত্যু যেভাবে লেখা রয়েছে সেই ভাবেই হবে বলে হান্নান তাকে জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সব প্রস্তুতি শেষ করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির সেলে থাকা জঙ্গি রিপনের সঙ্গে সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেন স্বজনরা। গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে কারাগারে যান তারা। এ সময় রিপনকে বেশ স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এর আগে সকালে কারাকর্তৃপক্ষ কয়েক দফা তার সঙ্গে দেখা করেন। তারা রিপনের শেষ ইচ্ছা কী, তা জানতে চাইলে রিপন কিছুই জানায় নি। দুপুরে তাকে নিয়ম অনুযায়ী উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যার পর রাতেও তাকে খাবার দেয়া হয়। এদিকে জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকরের আগে গতকাল সকাল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গত দুই দিন ধরেই কারাগার এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। আর গতকাল সকাল থেকে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। দিনভর পুলিশ সদস্যরা কারাফটকের সামনে অবস্থান নেন। গতকাল শেষ বারের মতো তার স্বজনরা এসে দেখা করে গেছেন। স্বজনরা দেখা করে যাওয়ার পরপরই তার রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে তিনি জানান। রাতে রিপনকে তওবা পড়ানো হয়। এরপর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১শে মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশসহ তিনজন নিহত হন। এতে টার্গেট আনোয়ার চৌধুরীসহ আরো অন্তত ৭০ জন আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। ওই দিনই কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের হয়। পরে বৃটিশ গোয়েন্দা দলের (স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড) চার সদস্য দু’দফা এ দেশে এসে ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে সরকারকে প্রতিবেদন দেয়। মামলায় ২০০৮ সালের ২৩শে ডিসে¤॥^র সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মুফতি হান্নানসহ জঙ্গি শরিফ শাহেদুল ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ- এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল মোজাহেদীন ও হুজি-বির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর

আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: শায়খ আবদুর রহমান ও ছিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের মতো একই পরিণতি হলো মুফতি হান্নানসহ তিন শীর্ষ জঙ্গির। গত রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মুফতি হান্নান ছাড়াও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। রাত ১০টার দিকে কাশিমপুরে মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল এবং সিলেট কারাগারে দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) ও হরকাতুল মোজাহেদীনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিল মুফতি আবদুল হান্নান। তার সঙ্গে হুজি-বি’র এ দু’সদস্যের মৃত্যুদ- কার্যকর উপলক্ষে দু’কারাগারে গত সোমবার থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে করা তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি গত সোমবার দুপুরে কাশিমপুর ও মঙ্গলবার সকালে সিলেট কারাগারে পৌঁছে। এরপর থেকে দু’কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করে। একে একে সম্পন্ন হয় স্বজনদের সাক্ষাৎসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা। ২০০৪ সালের ২১শে মে তৎকালীন নবনিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে গ্রেনেড হামলায় ৩ জন নিহত ও ৭০ জন আহতের মামলায় তাদের এই পরিণতি বরণ করতে হলো। একই মামলায় অপর আসামি মুফতি হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি ও মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল যাবজ্জীবন কারাদ-ের সাজা ভোগ করছে। এর আগে ২০০৪ সালের ৩০শে মার্চ একই দিন চার কারাগারে জামা’আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও ছিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। আব্দুর রহমানও হান্নানের মতো আফগান ফেরত জঙ্গি ছিল। কেবল এই নাশকতা ও নৃশংস হত্যাকা-ই নয়, মুুফতি হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সারা দেশে সাত বছরে অন্তত ১৩টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে মন্ত্রীসহ ১০১ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬০৯ জন। এছাড়া ২০০১ সালে রমনায় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার অপর এক মামলায়ও হান্নানসহ হুজির আট জঙ্গির মৃত্যুদ-ের আদেশ হয়েছে। আগামী শুক্রবার বাংলা নববর্ষের এক দিন আগেই তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর হলো। আর বোমা ও গ্রেনেড হামলায় সংঘটিত এসব নাশকতায় ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব নাশকতায় রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী ছাড়াও তার অন্তত ৩টি হামলা ও হামলাচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে কাশিমপুর কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত সোমবার থেকেই কাশিমপুর কারাগারের আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে জেলখানা সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যান চলাচল সীমিত করা হয়। পাশাপাশি সাদা পোশাকেসহ বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র‌্যাব সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা গেছে। কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সোমবার পরিবারের সদস্যদেরকে হান্নান ও বিপুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠায়। মূলত রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার খবরে সদস্যরাও তাদের জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসার বিষয়টি ধরে নেন। গতকাল সকাল ৬টার দিকে মুফতি হান্নানের স্ত্রী, মেয়েসহ পরিবারের চার সদস্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিকিউরিটি কারাগারে যান। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হান্নানের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের অনুমতি চান। অনুমতি দেয়া হলে কারাগারে প্রবেশ করেন। দু’ঘণ্টার বেশি সময় পর সকাল সোয়া ৮টার দিকে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। তার কারাবন্দি দু’ভাইও তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ভাই মহিবুলকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ও গাজীপুরের কাশিমপুরে বন্দি মো. আনিসকে দুপুর ২টার দিকে হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, বুধবার সকালে মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভিন রুমা বেগম, বড় ভাই আলী উজ্জামান মুন্সী, মেয়ে নাজনীন ও নিশি খানম কারাগারে মুফতি হান্নানের সঙ্গে কথা বলেছেন। কারাবন্দি অপর দু’ভাইও সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকেই হান্নান এ কারাগারে। এরপর বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম। সন্ধ্যায় দু’টি এ¤॥^ুলেন্স কারাগারে প্রবেশ করে। সাক্ষাৎ শেষে তার বড় ভাই আলী উজ্জামান কারাফটকের সামনে হান্নানের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, মুফতি হান্নান তাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। বলেছেন, তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। যতোদিন তার হায়াত আছে ততোদিন তিনি বেঁচে থাকবেন। তার মৃত্যু যেভাবে লেখা রয়েছে সেই ভাবেই হবে বলে হান্নান তাকে জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সব প্রস্তুতি শেষ করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির সেলে থাকা জঙ্গি রিপনের সঙ্গে সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেন স্বজনরা। গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে কারাগারে যান তারা। এ সময় রিপনকে বেশ স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এর আগে সকালে কারাকর্তৃপক্ষ কয়েক দফা তার সঙ্গে দেখা করেন। তারা রিপনের শেষ ইচ্ছা কী, তা জানতে চাইলে রিপন কিছুই জানায় নি। দুপুরে তাকে নিয়ম অনুযায়ী উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যার পর রাতেও তাকে খাবার দেয়া হয়। এদিকে জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকরের আগে গতকাল সকাল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গত দুই দিন ধরেই কারাগার এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। আর গতকাল সকাল থেকে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। দিনভর পুলিশ সদস্যরা কারাফটকের সামনে অবস্থান নেন। গতকাল শেষ বারের মতো তার স্বজনরা এসে দেখা করে গেছেন। স্বজনরা দেখা করে যাওয়ার পরপরই তার রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে তিনি জানান। রাতে রিপনকে তওবা পড়ানো হয়। এরপর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১শে মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশসহ তিনজন নিহত হন। এতে টার্গেট আনোয়ার চৌধুরীসহ আরো অন্তত ৭০ জন আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। ওই দিনই কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের হয়। পরে বৃটিশ গোয়েন্দা দলের (স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড) চার সদস্য দু’দফা এ দেশে এসে ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে সরকারকে প্রতিবেদন দেয়। মামলায় ২০০৮ সালের ২৩শে ডিসে¤॥^র সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মুফতি হান্নানসহ জঙ্গি শরিফ শাহেদুল ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ- এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন।