ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের ঘোষণা ঐক্যফ্রন্ট-২০ দলের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ নভেম্বর ২০১৮
  • / ৩১০ বার পড়া হয়েছে

দাবি মানা না হলে দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের : ড. কামাল ; পেশিশক্তি আমাদের হারাতে পারবে না : অলি আহমদ
ডেস্ক রিপোর্ট: আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গতকাল দুপুরে পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে যাওয়ার এই ঘোষণা দিয়ে তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে দুপুরে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান। ড. কামাল হোসেন বলেন, ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি আমরা এরই মধ্যে দিয়েছি, সেই দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি। আমরা নির্বাচনের বর্তমান তফসিল বাতিল করে এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চারদলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বাচনের তফসিল ২ দফা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে এ সময় উল্লেখ করা হয়।
ড. কামাল বলেন, এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। সেই আন্দোলন সংগ্রামের পথে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করবে ফ্রন্ট। ড. কামাল তার লিখিত বক্তব্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি। আমরা বলে দিতে চাই, জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচনটি দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের নির্বাচন হবে। সেই লক্ষ্যে মানুষ তার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য ভোটের ময়দানে থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্কট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, সরকারি দলের আমন্ত্রণে ১ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ হয়েছে, দুঃখজনকভাবে এই সংলাপে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বর্তমানের গভীর সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথে ন্যূনতম সমঝোতা করার মানসিকতা আমরা দেখতে পাইনি। সভা-সমাবেশ বাধা না দেয়া এবং গ্রেফতার করা হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী সংলাপে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অবিশ্বাস্যরকম বৈপরীত্য দেখা যায়। নির্বাচন কমিশনের সরকারের পক্ষে আজ্ঞাবহ কর্মকা-ের সমালোচনা করে কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্ধারিত ৯০ দিনের ৩৫ দিন বাকি থাকতেই। তফসিল ঘোষণা করার পর দেশের নানা স্থানে সরকারি দলের আনন্দ মিছিল প্রমাণ করে এই কমিশন আসলে সরকারের চাহিদা মতোই তফসিল ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে নির্ধারিত ৯০ দিন সময় শেষ হওয়ার ১৩দিন আগে, ২০০১ সালে ১২ তিন আগে, ২০১৪ সালে ২০ দিন আগে নির্বাচন হয়েছে। এবার নির্বাচন কমিশনের অতি তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা আবারো প্রমাণ করে সরকার আসলে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা চায়নি। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, সরকারের যাবতীয় চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আদলে আরেকটি নির্বাচন করা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ন্যূনতম শর্ত পূরণ হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচনে ইভিএম বাতিল না করারও সমালোচনা করেন ফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা।
নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক করতে আন্দোলন চলবে বলে জানান ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের অংশগ্রহণ করার জন্য ও নির্বাচনে পরিবেশ ঠিক করার জন্য আন্দোলন চলবে। যখনই প্রয়োজন হবে সব কিছু করা হবে। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনের প্রতীক কী হবে প্রশ্ন করা হলে ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রতীক সম্পর্কে পরে জানানো হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কি একক প্রতীকে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। আরপিও অনুযায়ী প্রচারণার জন্য সময়সীমা থাকা উচিত ২১ দিন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যখন তফসিল ঘোষণা করেছে তখন ছিল ১৩ দিন। সে ক্ষেত্রে আপনারা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আদালতে যাবেন কি না জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন হলে সেটাও নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো: মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ২০ দলের : বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানান, জোটের অন্যতম নেতা এলডিপির সভাপতি কর্নেল অব: অলি আহমদ।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলে আমরা ২০ দলীয় জোট প্রতিকূলতার মধ্যেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যক্ত করছি। সরকারের দুর্নীতি, অনাচারসহ তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায় সীমাহীন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রায় দেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথেও ২০ দলের সমঝোতা হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন অলি আহমেদ। একই সঙ্গে নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবিও জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে অলি আহমদ বলেন, আমরা দাবি করছি অনিবার্য জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণে নতুন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে পালন করবে। সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না এবং গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় আটকদের মুক্তি দেবে। ইভিএম মেশিন ব্যবহার করবে না। নির্বাচনের ৭ দিন আগে থেকে এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দুই দিন পর পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের নিয়োগ করবে। এর সব কিছুই দেশের বর্তমান সংবিধানের আওতাতেই করা যায়। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ২৩ ডিসেম্বর। এর এক দিন পরেই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন ২৫ ডিসেম্বর। এর কয়েক দিন আগে থেকেই এই ধর্মের অনুসারীরা উৎসব পালনে ব্যস্ত থাকবে। দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর বেশির ভাগই এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নির্বাচনে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। নির্বাচনে কারচুপি করার কুচিন্তা না থাকলে এমন দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হতো না। আমরা এই কারণসহ অন্যান্য অনিবার্য কারণে নির্বাচনী তফসিল পরিবর্তন করে অন্তত এক মাস নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করছি। ২০ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, কাজেই অর্থ কিংবা পেশিশক্তি আমাদের হারাতে পারবে না। বজ্রকঠিন ঐক্য এবং সাহসী প্রতিরোধ দিয়ে আমরা বারবার বিজয়ী হয়েছি, এবারও হবো।
দুপুরে যে সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সে একই সময়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, লেবার পার্টির ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, এনডিপির ক্বারী আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপিবির রিটা রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার ম-ল উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নির্বাচনের ঘোষণা ঐক্যফ্রন্ট-২০ দলের

আপলোড টাইম : ০৯:৪৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ নভেম্বর ২০১৮

দাবি মানা না হলে দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের : ড. কামাল ; পেশিশক্তি আমাদের হারাতে পারবে না : অলি আহমদ
ডেস্ক রিপোর্ট: আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গতকাল দুপুরে পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে যাওয়ার এই ঘোষণা দিয়ে তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে দুপুরে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান। ড. কামাল হোসেন বলেন, ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি আমরা এরই মধ্যে দিয়েছি, সেই দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি। আমরা নির্বাচনের বর্তমান তফসিল বাতিল করে এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চারদলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বাচনের তফসিল ২ দফা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে এ সময় উল্লেখ করা হয়।
ড. কামাল বলেন, এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। সেই আন্দোলন সংগ্রামের পথে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করবে ফ্রন্ট। ড. কামাল তার লিখিত বক্তব্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি। আমরা বলে দিতে চাই, জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচনটি দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের নির্বাচন হবে। সেই লক্ষ্যে মানুষ তার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য ভোটের ময়দানে থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্কট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, সরকারি দলের আমন্ত্রণে ১ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ হয়েছে, দুঃখজনকভাবে এই সংলাপে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বর্তমানের গভীর সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথে ন্যূনতম সমঝোতা করার মানসিকতা আমরা দেখতে পাইনি। সভা-সমাবেশ বাধা না দেয়া এবং গ্রেফতার করা হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী সংলাপে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অবিশ্বাস্যরকম বৈপরীত্য দেখা যায়। নির্বাচন কমিশনের সরকারের পক্ষে আজ্ঞাবহ কর্মকা-ের সমালোচনা করে কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্ধারিত ৯০ দিনের ৩৫ দিন বাকি থাকতেই। তফসিল ঘোষণা করার পর দেশের নানা স্থানে সরকারি দলের আনন্দ মিছিল প্রমাণ করে এই কমিশন আসলে সরকারের চাহিদা মতোই তফসিল ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে নির্ধারিত ৯০ দিন সময় শেষ হওয়ার ১৩দিন আগে, ২০০১ সালে ১২ তিন আগে, ২০১৪ সালে ২০ দিন আগে নির্বাচন হয়েছে। এবার নির্বাচন কমিশনের অতি তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা আবারো প্রমাণ করে সরকার আসলে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা চায়নি। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, সরকারের যাবতীয় চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আদলে আরেকটি নির্বাচন করা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ন্যূনতম শর্ত পূরণ হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচনে ইভিএম বাতিল না করারও সমালোচনা করেন ফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা।
নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক করতে আন্দোলন চলবে বলে জানান ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের অংশগ্রহণ করার জন্য ও নির্বাচনে পরিবেশ ঠিক করার জন্য আন্দোলন চলবে। যখনই প্রয়োজন হবে সব কিছু করা হবে। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনের প্রতীক কী হবে প্রশ্ন করা হলে ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রতীক সম্পর্কে পরে জানানো হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কি একক প্রতীকে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। আরপিও অনুযায়ী প্রচারণার জন্য সময়সীমা থাকা উচিত ২১ দিন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যখন তফসিল ঘোষণা করেছে তখন ছিল ১৩ দিন। সে ক্ষেত্রে আপনারা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আদালতে যাবেন কি না জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন হলে সেটাও নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো: মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ২০ দলের : বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানান, জোটের অন্যতম নেতা এলডিপির সভাপতি কর্নেল অব: অলি আহমদ।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলে আমরা ২০ দলীয় জোট প্রতিকূলতার মধ্যেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যক্ত করছি। সরকারের দুর্নীতি, অনাচারসহ তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায় সীমাহীন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রায় দেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথেও ২০ দলের সমঝোতা হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন অলি আহমেদ। একই সঙ্গে নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবিও জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে অলি আহমদ বলেন, আমরা দাবি করছি অনিবার্য জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণে নতুন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে পালন করবে। সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না এবং গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় আটকদের মুক্তি দেবে। ইভিএম মেশিন ব্যবহার করবে না। নির্বাচনের ৭ দিন আগে থেকে এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দুই দিন পর পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের নিয়োগ করবে। এর সব কিছুই দেশের বর্তমান সংবিধানের আওতাতেই করা যায়। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ২৩ ডিসেম্বর। এর এক দিন পরেই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন ২৫ ডিসেম্বর। এর কয়েক দিন আগে থেকেই এই ধর্মের অনুসারীরা উৎসব পালনে ব্যস্ত থাকবে। দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর বেশির ভাগই এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নির্বাচনে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। নির্বাচনে কারচুপি করার কুচিন্তা না থাকলে এমন দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হতো না। আমরা এই কারণসহ অন্যান্য অনিবার্য কারণে নির্বাচনী তফসিল পরিবর্তন করে অন্তত এক মাস নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করছি। ২০ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, কাজেই অর্থ কিংবা পেশিশক্তি আমাদের হারাতে পারবে না। বজ্রকঠিন ঐক্য এবং সাহসী প্রতিরোধ দিয়ে আমরা বারবার বিজয়ী হয়েছি, এবারও হবো।
দুপুরে যে সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সে একই সময়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, লেবার পার্টির ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, এনডিপির ক্বারী আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপিবির রিটা রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার ম-ল উপস্থিত ছিলেন।