ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিরাপদ হোক ঈদযাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮
  • / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের নানা স্থানে কর্মত মানুষজনের ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বরাবরের মতো এবারও ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। সবার লক্ষ্য একটাই, ঈদকে উপলক্ষ করে নিকটজনদের সঙ্গে মিলিত হবে, ভাগাভাগি করে নেবে ঈদউৎসবের আনন্দ। আনন্দবিনোদনের পাশাপাশি ঈদ এখন পাড়া–পড়শিসহ আপনজনদের মিলনমেলাও। সে জন্যেই ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষই ছুটে চলে নাড়ির টানে, বাড়ির পানে। তবে, বাংলাদেশে ঈদযাত্রা বরাবরই এক ভোগান্তির নাম। এবার তার ব্যতিক্রম হবে, এমনটি মনে হচ্ছে না। রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা, টিকিট কালোবাজারীদের দৌরাত্ম, অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি, চালকদের ট্রাফিক আইন না মানাসহ নানা কারণে এবারও ঈদযাত্রা ভোগান্তিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা। তবে, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আন্তরিকতাপূর্ণ তৎপরতা থাকলে ভোগান্তি কিছুটা কম হতে পারে।
যদিও প্রতিবারই সরকারের তরফ থেকে যাত্রীদুর্ভোগ লাঘব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যাত্রীদের বাড়িফেরা নির্বিঘœ হয় না কখনো। গত বছরের জুনে মেরামত শেষ হওয়া ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ২০ বছর টেকসই হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পার না হতেই বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভগ্নদশা। এতে মহাভোগান্তিতে পড়ছেন গাড়ির চালকসহ এ পথ দিয়ে যাতায়াতকারীরা। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের সড়কগুলোর অবস্থাও ভালো না। জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, দেশের এক–চতুর্থাংশ সড়ক এখনো ভাঙাচোরা। সারাদেশে রাস্তার ৫৭ ভাগ ভালো হলেও দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। প্রতি বছর সড়ক–মহাসড়কের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও খারাপ রাস্তা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। বিদ্যমান এ পরিস্থিতি ঈদযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জানা গেছে, বেহাল রাস্তাঘাটের কারণে সড়ক–মহাসড়কে যানবাহন চলছে হেলেদুলে, ধীরগতিতে। ফলে মাইলের পর মাইল দীর্ঘ যানজটের কবলে যেমন পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের, তেমনি দুর্ঘটনাও বেড়ে গেছে। ঈদের প্রকৃত চাপ শুরু হলে অবস্থা কী দাঁড়াতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। প্রতিবছরই ঈদের সময় বাড়িফেরা মানুষের বাড়তি চাপ থাকে, এটা সবারই জানা। বিষয়টি হুট করে তৈরি হওয়া কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবছরই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে। প্রতিবছরই ঈদের দিনকয়েক আগে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা যায়। জোড়াতালির সংস্কার, কর্মীদের ছুটি বাতিলসহ নানা তৎপরতা চোখে পড়ে। কেনো এমনটি হয়, তা বোধগম্য নয়। অথচ আগে থেকেই সড়ক–মহাসড়কের প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেয়া হলে এমন চিত্র দেখতে হতো না। এখন ঈদ উপলক্ষে তড়িঘড়ি করে সড়ক মেরামত কাজ চললেও কাজের কাজ কতটুকু হবে তা তিক্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সবারই জানা। এতে লুটপাটের সুযোগ তৈরি হবে শুধু। সুফল মিলবে না তেমন। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়ও নেই সুশাসন। ঈদ মৌসুমে পরিবহন কোম্পানিগুলো যাত্রীদের জন্য সেবার মান বাড়াবে, ভাড়ার ক্ষেত্রে নানা রকম ছাড় দেবে, তা না করে তারা এই সময়টাতে যাত্রীদের জিম্মি করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে। টিকিট সংগ্রহেও যাত্রীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এতোকিছুর পরেও মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি যায়। সরকারের উচিত হবে মানুষের ঈদযাত্রা যতটুকু সম্ভব নিরাপদ করা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের আনন্দ বিষাদে রূপ নিক, তা কারো কাম্য নয়। আমরা চাই, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ হোক। প্রকৃত আনন্দ নিয়েই বাঙালির প্রতিটি ঘরে আসুক ঈদ। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দময় উৎসব, মিলনমেলা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নিরাপদ হোক ঈদযাত্রা

আপলোড টাইম : ১১:৫৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের নানা স্থানে কর্মত মানুষজনের ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বরাবরের মতো এবারও ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। সবার লক্ষ্য একটাই, ঈদকে উপলক্ষ করে নিকটজনদের সঙ্গে মিলিত হবে, ভাগাভাগি করে নেবে ঈদউৎসবের আনন্দ। আনন্দবিনোদনের পাশাপাশি ঈদ এখন পাড়া–পড়শিসহ আপনজনদের মিলনমেলাও। সে জন্যেই ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষই ছুটে চলে নাড়ির টানে, বাড়ির পানে। তবে, বাংলাদেশে ঈদযাত্রা বরাবরই এক ভোগান্তির নাম। এবার তার ব্যতিক্রম হবে, এমনটি মনে হচ্ছে না। রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা, টিকিট কালোবাজারীদের দৌরাত্ম, অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি, চালকদের ট্রাফিক আইন না মানাসহ নানা কারণে এবারও ঈদযাত্রা ভোগান্তিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা। তবে, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আন্তরিকতাপূর্ণ তৎপরতা থাকলে ভোগান্তি কিছুটা কম হতে পারে।
যদিও প্রতিবারই সরকারের তরফ থেকে যাত্রীদুর্ভোগ লাঘব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যাত্রীদের বাড়িফেরা নির্বিঘœ হয় না কখনো। গত বছরের জুনে মেরামত শেষ হওয়া ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ২০ বছর টেকসই হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পার না হতেই বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভগ্নদশা। এতে মহাভোগান্তিতে পড়ছেন গাড়ির চালকসহ এ পথ দিয়ে যাতায়াতকারীরা। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের সড়কগুলোর অবস্থাও ভালো না। জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, দেশের এক–চতুর্থাংশ সড়ক এখনো ভাঙাচোরা। সারাদেশে রাস্তার ৫৭ ভাগ ভালো হলেও দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। প্রতি বছর সড়ক–মহাসড়কের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও খারাপ রাস্তা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। বিদ্যমান এ পরিস্থিতি ঈদযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জানা গেছে, বেহাল রাস্তাঘাটের কারণে সড়ক–মহাসড়কে যানবাহন চলছে হেলেদুলে, ধীরগতিতে। ফলে মাইলের পর মাইল দীর্ঘ যানজটের কবলে যেমন পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের, তেমনি দুর্ঘটনাও বেড়ে গেছে। ঈদের প্রকৃত চাপ শুরু হলে অবস্থা কী দাঁড়াতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। প্রতিবছরই ঈদের সময় বাড়িফেরা মানুষের বাড়তি চাপ থাকে, এটা সবারই জানা। বিষয়টি হুট করে তৈরি হওয়া কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবছরই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে। প্রতিবছরই ঈদের দিনকয়েক আগে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা যায়। জোড়াতালির সংস্কার, কর্মীদের ছুটি বাতিলসহ নানা তৎপরতা চোখে পড়ে। কেনো এমনটি হয়, তা বোধগম্য নয়। অথচ আগে থেকেই সড়ক–মহাসড়কের প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেয়া হলে এমন চিত্র দেখতে হতো না। এখন ঈদ উপলক্ষে তড়িঘড়ি করে সড়ক মেরামত কাজ চললেও কাজের কাজ কতটুকু হবে তা তিক্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সবারই জানা। এতে লুটপাটের সুযোগ তৈরি হবে শুধু। সুফল মিলবে না তেমন। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়ও নেই সুশাসন। ঈদ মৌসুমে পরিবহন কোম্পানিগুলো যাত্রীদের জন্য সেবার মান বাড়াবে, ভাড়ার ক্ষেত্রে নানা রকম ছাড় দেবে, তা না করে তারা এই সময়টাতে যাত্রীদের জিম্মি করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে। টিকিট সংগ্রহেও যাত্রীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এতোকিছুর পরেও মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি যায়। সরকারের উচিত হবে মানুষের ঈদযাত্রা যতটুকু সম্ভব নিরাপদ করা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের আনন্দ বিষাদে রূপ নিক, তা কারো কাম্য নয়। আমরা চাই, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ হোক। প্রকৃত আনন্দ নিয়েই বাঙালির প্রতিটি ঘরে আসুক ঈদ। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দময় উৎসব, মিলনমেলা।