ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিরাপদ জীবন তাদের প্রাপ্য নয় কি?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুন ২০১৮
  • / ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে

গতকাল ছিল বিশ্ব শরণার্থী দিবস। অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবেই শরণার্থী সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিসংখ্যানেই এটি প্রতীয়মান। শরণার্থী, বাস্তুচ্যুত বা অভিবাসী যাদের কথাই বলি না কেন, দেশে দেশে তাদের ওপর রাষ্ট্রের আচরণ কোথাও কোথাও খুবই নিন্দনীয়। শরণার্থী ও শরণার্থীর মতো পরিস্থিতিতে থাকা লোকদের নিয়ে কাজ করা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৭ সাল শেষে বিশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির সংখ্যা ছয় কোটি ৮৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ, সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের মধ্যে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দেশটিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৩৫ লাখ। পাকিস্তান ও উগান্ডায় শরণার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ করে। লেবাননে শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সরকার ও উগ্রপন্থিদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ লাখ। এসব রোহিঙ্গা চার দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করায় এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪টি সীমান্ত চৌকিতে একযোগে হামলা হয়। এরপর শুরু হয় অপরাধী দমনের নামে অভিযান। পরের দিন ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় উখিয়া-টেকনাফে। নতুন আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি হয় সাত মাস আগে। কিন্তু এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে দিন দিন অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ২০০৫ সালের জুলাই থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই এ কর্মসূচি স্থগিত করেছে মিয়ানমার। নতুন সমঝোতা চুক্তির পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের কাছ থেকে অনুকূল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম দফায় দেয়া তালিকার মাত্র আট শতাংশ তারা অনুমোদন দিয়েছে। মাত্র আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা যাচাই-বাছাই করতে তাদের এত সময় প্রয়োজন হলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে কত সময় লাগতে পারে ভাবতে গেলে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। বিশাল জনগোষ্ঠীর বোঝা সত্ত্বেও মানবিক কারণে ও বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী সীমান্ত খোলা রেখেছে বাংলাদেশ। শরণার্থী হিসেবে প্রাপ্য প্রায় সব সুবিধা রোহিঙ্গাদের দেয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ। আমরা মনে করি, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে শরণার্থী সংকটের সমাধান অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করা সামনে দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। সফলভাবে এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে এবং এ কাজে সব রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। জাতিগত দমন, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা দূর করতে সব রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন তো শরণার্থীদেরও প্রাপ্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নিরাপদ জীবন তাদের প্রাপ্য নয় কি?

আপলোড টাইম : ১০:২৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুন ২০১৮

গতকাল ছিল বিশ্ব শরণার্থী দিবস। অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবেই শরণার্থী সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিসংখ্যানেই এটি প্রতীয়মান। শরণার্থী, বাস্তুচ্যুত বা অভিবাসী যাদের কথাই বলি না কেন, দেশে দেশে তাদের ওপর রাষ্ট্রের আচরণ কোথাও কোথাও খুবই নিন্দনীয়। শরণার্থী ও শরণার্থীর মতো পরিস্থিতিতে থাকা লোকদের নিয়ে কাজ করা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৭ সাল শেষে বিশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির সংখ্যা ছয় কোটি ৮৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ, সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের মধ্যে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দেশটিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৩৫ লাখ। পাকিস্তান ও উগান্ডায় শরণার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ করে। লেবাননে শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সরকার ও উগ্রপন্থিদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ লাখ। এসব রোহিঙ্গা চার দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করায় এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪টি সীমান্ত চৌকিতে একযোগে হামলা হয়। এরপর শুরু হয় অপরাধী দমনের নামে অভিযান। পরের দিন ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় উখিয়া-টেকনাফে। নতুন আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি হয় সাত মাস আগে। কিন্তু এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে দিন দিন অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ২০০৫ সালের জুলাই থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই এ কর্মসূচি স্থগিত করেছে মিয়ানমার। নতুন সমঝোতা চুক্তির পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের কাছ থেকে অনুকূল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম দফায় দেয়া তালিকার মাত্র আট শতাংশ তারা অনুমোদন দিয়েছে। মাত্র আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা যাচাই-বাছাই করতে তাদের এত সময় প্রয়োজন হলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে কত সময় লাগতে পারে ভাবতে গেলে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। বিশাল জনগোষ্ঠীর বোঝা সত্ত্বেও মানবিক কারণে ও বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী সীমান্ত খোলা রেখেছে বাংলাদেশ। শরণার্থী হিসেবে প্রাপ্য প্রায় সব সুবিধা রোহিঙ্গাদের দেয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ। আমরা মনে করি, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে শরণার্থী সংকটের সমাধান অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করা সামনে দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। সফলভাবে এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে এবং এ কাজে সব রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। জাতিগত দমন, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা দূর করতে সব রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন তো শরণার্থীদেরও প্রাপ্য।