ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

এমন মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে?
পুরনো ও জরাজীর্ণ পাইপলাইনের কারণে একের পর এক গ্যাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গাফিলতির কারণেই নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা দেখতে হলো আমাদের। বিস্ফোরণের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং দুঃখজনক। মসজিদের মুসল্লিরা লাইন মেরামতের বারবার তাগাদা দিলেও তিতাস কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। তাদের গাফিলতিতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এতগুলোর প্রাণের দায়ভার কে নেবে? মাটির নিচে সরবরাহ লাইনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। বহু আগেই তিতাস গ্যাস বিতরণ লাইনের অর্ধেকের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। তার ওপর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নেই। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ ও লাইন স্থাপন গ্যাস নেটওয়ার্ককে আরো অনিরাপদ করে তুলেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ আরো কয়েকটি জেলায় মাঝেমধ্যেই তিতাসের লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ২১ জন মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। জানালার কাচ উড়ে গেছে। নামাজরত মুসল্লিদের ওপর ছড়িয়ে পড়ে আগুনের ফুলকি। মুসল্লিরা অভিযোগ করেন, মসজিদে নামাজ পড়তে এলেই তারা গ্যাসের গন্ধ পেতেন। এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির মাধ্যমে একাধিকবার জানানো হয়েছিল তিতাস কর্তৃপক্ষকে। তবে তারা এ বিষয়টি আমলে নেয়নি। গ্যাসের পাইপ মেরামত করতে তিতাস কর্তৃপক্ষ টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেয়ায় তারা মেরামত করেনি। মুসল্লিদের অভিযোগের তদন্ত হওয়া জরুরি। তিতাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতিনিয়ত তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার খবর আমরা দেখি। জানা গেছে, ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিতাস গ্যাসের ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৭ হাজার কিলোমিটার। যার ৭০ শতাংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে ২০ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছরের পুরনো বিতরণ লাইনও রয়েছে। এতে ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। ২০১৮ সালে গ্যাসলাইন বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ৯৫৩টি। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ জনের। ২০১৯ সালে দুর্ঘটনা ঘটে ১ হাজারেরও অধিক। প্রাণহানি হয় ৩৫ জনের। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটে ৬০টির মতো, প্রাণহানি হয়েছে ১৮ জনের। গত বছর চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাসের পাইপলাইন বিস্ফোরণে একটি ভবনের একাংশ ধসে শিশুসহ ৭ জন মারা যান। নারায়ণগঞ্জে মসজিদের নিচে গ্যাসলাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের বিষয়টি গণমাধ্যমে জোরালোভাবে সামনে এসেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এ দুর্ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না। গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা এতই আকস্মিকভাবে ঘটে যে, তা থেকে সাধারণত পরিত্রাণ মেলে না। আর অগ্নিদগ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নারায়ণগঞ্জে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ

আপলোড টাইম : ০৮:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

এমন মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে?
পুরনো ও জরাজীর্ণ পাইপলাইনের কারণে একের পর এক গ্যাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গাফিলতির কারণেই নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা দেখতে হলো আমাদের। বিস্ফোরণের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং দুঃখজনক। মসজিদের মুসল্লিরা লাইন মেরামতের বারবার তাগাদা দিলেও তিতাস কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। তাদের গাফিলতিতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এতগুলোর প্রাণের দায়ভার কে নেবে? মাটির নিচে সরবরাহ লাইনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। বহু আগেই তিতাস গ্যাস বিতরণ লাইনের অর্ধেকের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। তার ওপর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নেই। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ ও লাইন স্থাপন গ্যাস নেটওয়ার্ককে আরো অনিরাপদ করে তুলেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ আরো কয়েকটি জেলায় মাঝেমধ্যেই তিতাসের লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ২১ জন মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। জানালার কাচ উড়ে গেছে। নামাজরত মুসল্লিদের ওপর ছড়িয়ে পড়ে আগুনের ফুলকি। মুসল্লিরা অভিযোগ করেন, মসজিদে নামাজ পড়তে এলেই তারা গ্যাসের গন্ধ পেতেন। এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির মাধ্যমে একাধিকবার জানানো হয়েছিল তিতাস কর্তৃপক্ষকে। তবে তারা এ বিষয়টি আমলে নেয়নি। গ্যাসের পাইপ মেরামত করতে তিতাস কর্তৃপক্ষ টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেয়ায় তারা মেরামত করেনি। মুসল্লিদের অভিযোগের তদন্ত হওয়া জরুরি। তিতাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতিনিয়ত তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার খবর আমরা দেখি। জানা গেছে, ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিতাস গ্যাসের ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৭ হাজার কিলোমিটার। যার ৭০ শতাংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে ২০ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছরের পুরনো বিতরণ লাইনও রয়েছে। এতে ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। ২০১৮ সালে গ্যাসলাইন বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ৯৫৩টি। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ জনের। ২০১৯ সালে দুর্ঘটনা ঘটে ১ হাজারেরও অধিক। প্রাণহানি হয় ৩৫ জনের। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটে ৬০টির মতো, প্রাণহানি হয়েছে ১৮ জনের। গত বছর চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাসের পাইপলাইন বিস্ফোরণে একটি ভবনের একাংশ ধসে শিশুসহ ৭ জন মারা যান। নারায়ণগঞ্জে মসজিদের নিচে গ্যাসলাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের বিষয়টি গণমাধ্যমে জোরালোভাবে সামনে এসেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এ দুর্ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না। গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা এতই আকস্মিকভাবে ঘটে যে, তা থেকে সাধারণত পরিত্রাণ মেলে না। আর অগ্নিদগ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।