ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নবীজির ১২ চুক্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০
  • / ১৬৮ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন
হিজরতের পর রাসুল (সা.) মুসলমানদের মধ্যে চিন্তা, বিশ্বাস, রাজনীতি ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে একটি নতুন সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর তিনি অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন, নবী করিম (সা.) চাচ্ছিলেন, সব মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক এবং মদিনা ও আশপাশের এলাকার মানুষ একটি সুস্থ প্রশাসনের আওতাভুক্ত হোক, তিনি উদারতা ও ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে এমন আইন প্রণয়ন করেন, বর্তমানে যার কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। মদিনার পার্শ্ববর্তী লোকেরা ছিল ইহুদি। গোপনে এরা মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা করলেও প্রকাশ্যে তারা মিত্রতা দেখাত। মহানবী (সা.) তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হলেন, সেই চুক্তিতে ইহুদিদের তাদের ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও জীবন-সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
চুক্তির দফাসমূহ ছিল নিম্নরূপ : ১. বনু আউফের ইহুদিরা মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একই উম্মত (একই জাতি) হিসেবে বিবেচিত হবে, ইহুদি ও মুসলমানরা নিজ নিজ দ্বিনের ওপর আমল করবে, বনু আউফ ছাড়া অন্য ইহুদিরাও একই রকমের অধিকার লাভ করবে। ২. ইহুদিরা নিজেদের সমুদয় ব্যয়ের জন্য দায়ী হবে এবং মুসলমানরা নিজেদের ব্যয়ের জন্য পৃথকভাবে দায়ী হবে। ৩. এই চুক্তির আওতাভুক্তদের কোনো অংশের সঙ্গে যারা যুদ্ধ করবে সবাই সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করবে। ৪. এই চুক্তির অংশীদাররা সবাই পরস্পরের কল্যাণ কামনা করবে, তবে সেই কল্যাণ কামনা ও সহযোগিতা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, অন্যায়ের ওপর নয়। ৫. কোনো ব্যক্তি তার মিত্রের কারণে অপরাধী হবে না। ৬. মজলুমকে সাহায্য করা হবে। ৭. যত দিন যুদ্ধ চলতে থাকবে, তত দিন ইহুদিরাও মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করবে। ৮. এই চুক্তির অংশীদারদের জন্য মদিনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রক্তপাত নিষিদ্ধ থাকবে। ৯. এই চুক্তির অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে কোনো নতুন সমস্যা দেখা দিলে বা ঝগড়া-বিবাদ হলে আল্লাহর আইন অনুযায়ী রাসুল (সা.) তার মীমাংসা করবেন। ১০. কোরাইশ ও তাদের সাহায্যকারীদের আশ্রয় প্রদান করা হবে না। ১১. ইয়াসরেবের (মদিনার) ওপর কেউ হামলা করলে সেই হামলা মোকাবেলায় পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। সব পক্ষ নিজ নিজ অংশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। ১২. এই চুক্তির মাধ্যমে কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া হবে না। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০৩, ৫০৪)
এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মদিনা ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়, সেই রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল মদিনা। রাসুল (সা.) ছিলেন সেই রাষ্ট্রের মহানায়ক, এর মূল কর্তৃত্ব ছিল মুসলমানদের হাতে, এভাবে মদিনা ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে নবী করিম (সা.) পরবর্তী সময়ে অন্য গোত্রের সঙ্গেও এ ধরনের চুক্তি করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নবীজির ১২ চুক্তি

আপলোড টাইম : ০৮:৩৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন
হিজরতের পর রাসুল (সা.) মুসলমানদের মধ্যে চিন্তা, বিশ্বাস, রাজনীতি ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে একটি নতুন সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর তিনি অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন, নবী করিম (সা.) চাচ্ছিলেন, সব মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক এবং মদিনা ও আশপাশের এলাকার মানুষ একটি সুস্থ প্রশাসনের আওতাভুক্ত হোক, তিনি উদারতা ও ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে এমন আইন প্রণয়ন করেন, বর্তমানে যার কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। মদিনার পার্শ্ববর্তী লোকেরা ছিল ইহুদি। গোপনে এরা মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা করলেও প্রকাশ্যে তারা মিত্রতা দেখাত। মহানবী (সা.) তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হলেন, সেই চুক্তিতে ইহুদিদের তাদের ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও জীবন-সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
চুক্তির দফাসমূহ ছিল নিম্নরূপ : ১. বনু আউফের ইহুদিরা মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একই উম্মত (একই জাতি) হিসেবে বিবেচিত হবে, ইহুদি ও মুসলমানরা নিজ নিজ দ্বিনের ওপর আমল করবে, বনু আউফ ছাড়া অন্য ইহুদিরাও একই রকমের অধিকার লাভ করবে। ২. ইহুদিরা নিজেদের সমুদয় ব্যয়ের জন্য দায়ী হবে এবং মুসলমানরা নিজেদের ব্যয়ের জন্য পৃথকভাবে দায়ী হবে। ৩. এই চুক্তির আওতাভুক্তদের কোনো অংশের সঙ্গে যারা যুদ্ধ করবে সবাই সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করবে। ৪. এই চুক্তির অংশীদাররা সবাই পরস্পরের কল্যাণ কামনা করবে, তবে সেই কল্যাণ কামনা ও সহযোগিতা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, অন্যায়ের ওপর নয়। ৫. কোনো ব্যক্তি তার মিত্রের কারণে অপরাধী হবে না। ৬. মজলুমকে সাহায্য করা হবে। ৭. যত দিন যুদ্ধ চলতে থাকবে, তত দিন ইহুদিরাও মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করবে। ৮. এই চুক্তির অংশীদারদের জন্য মদিনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রক্তপাত নিষিদ্ধ থাকবে। ৯. এই চুক্তির অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে কোনো নতুন সমস্যা দেখা দিলে বা ঝগড়া-বিবাদ হলে আল্লাহর আইন অনুযায়ী রাসুল (সা.) তার মীমাংসা করবেন। ১০. কোরাইশ ও তাদের সাহায্যকারীদের আশ্রয় প্রদান করা হবে না। ১১. ইয়াসরেবের (মদিনার) ওপর কেউ হামলা করলে সেই হামলা মোকাবেলায় পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। সব পক্ষ নিজ নিজ অংশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। ১২. এই চুক্তির মাধ্যমে কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া হবে না। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০৩, ৫০৪)
এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মদিনা ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়, সেই রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল মদিনা। রাসুল (সা.) ছিলেন সেই রাষ্ট্রের মহানায়ক, এর মূল কর্তৃত্ব ছিল মুসলমানদের হাতে, এভাবে মদিনা ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে নবী করিম (সা.) পরবর্তী সময়ে অন্য গোত্রের সঙ্গেও এ ধরনের চুক্তি করেন।