ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নদী রক্ষায় কঠোর অবস্থান সারাদেশে শুরু হোক এই প্রক্রিয়া

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৪৪ বার পড়া হয়েছে

নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে আগেও অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু স্থাপনা ভেঙেই অভিযান শেষ। ভাঙা স্থাপনার অবশিষ্টাংশও সরানো হয়নি। অভিযান শেষ হতেই অবৈধ দখলকারীরা আবার স্থাপনা তৈরি করছে। এর ফলে সেসব অভিযানে কিছু অর্থের গচ্চা যাওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে বুড়িগঙ্গার তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। চিহ্নিত করা ৯০৬টি অবৈধ স্থাপনার বেশির ভাগই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চলবে আগামি ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের অভিযানের চরিত্র আগের অভিযানগুলো থেকে আলাদা। অনেক হোমরাচোমরা ব্যক্তির স্থাপনা, এমনকি সরকারি স্থাপনাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। স্থাপনার ভাঙা অংশ, রাবিশ ইত্যাদি একই সঙ্গে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। একইভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরেও। ফলে এবারের অভিযানকে নদী দখলের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দখলমুক্ত করার পরপরই নদী খনন, তীর সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বনায়নসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে আবার নদী দখলের সুযোগ না থাকে। বললে অত্যুক্তি হবে না যে বাংলাদেশে নদী দখলের হিড়িক শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে, বড় শহরগুলোর পাশে থাকা নদীগুলোর জমি দখল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দখল ও ভরাটের কারণে বাস্তবে অনেক নদী মরে গেছে, অনেক মৃতপ্রায়। শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও ভরাট হয়ে আসা নদীর জায়গা এখন আবাদি জমি। কলকারখানা, ইটভাটা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকা-ও হচ্ছে নদীর জায়গায়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু খুলনার পাঁচটি উপজেলায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ২৭টি ইটভাটা। এমন চিত্র কমবেশি সারা দেশেরই। ফলে নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে। বর্ষার পানি নামতে পারে না। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়। নদী শুকিয়ে যায় বলে ভূগর্ভে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে পারে না, পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে এবং দেখা দিচ্ছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। এমনই আরো অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এসব কারণে বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশও বাঁচবে না। তা সত্ত্বেও ব্রিটিশ আমলের পর থেকে আমাদের নদীগুলো খননের প্রক্রিয়া নেই বললেই চলে। এর অন্যতম কারণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর খুবই সীমিত পরিসরে খননপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেড় ডজনের বেশি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবেও নদী খননের কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া আরো ব্যাপক ও গতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশে নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। জানা যায়, বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেই সিটি করপোরেশনের ট্রাক ও ভ্যান থেকে নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ভরাট হওয়ার পেছনে এই গৃহস্থালি বর্জ্যও একটি অন্যতম কারণ। সিটি করপোরেশনকে অবিলম্বে এই আত্মঘাতী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সবার সম্মিলিত প্রয়াসই শুধু পারে আমাদের নদীগুলোকে রক্ষা করতে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নদী রক্ষায় কঠোর অবস্থান সারাদেশে শুরু হোক এই প্রক্রিয়া

আপলোড টাইম : ১০:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে আগেও অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু স্থাপনা ভেঙেই অভিযান শেষ। ভাঙা স্থাপনার অবশিষ্টাংশও সরানো হয়নি। অভিযান শেষ হতেই অবৈধ দখলকারীরা আবার স্থাপনা তৈরি করছে। এর ফলে সেসব অভিযানে কিছু অর্থের গচ্চা যাওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে বুড়িগঙ্গার তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। চিহ্নিত করা ৯০৬টি অবৈধ স্থাপনার বেশির ভাগই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চলবে আগামি ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের অভিযানের চরিত্র আগের অভিযানগুলো থেকে আলাদা। অনেক হোমরাচোমরা ব্যক্তির স্থাপনা, এমনকি সরকারি স্থাপনাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। স্থাপনার ভাঙা অংশ, রাবিশ ইত্যাদি একই সঙ্গে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। একইভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরেও। ফলে এবারের অভিযানকে নদী দখলের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দখলমুক্ত করার পরপরই নদী খনন, তীর সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বনায়নসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে আবার নদী দখলের সুযোগ না থাকে। বললে অত্যুক্তি হবে না যে বাংলাদেশে নদী দখলের হিড়িক শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে, বড় শহরগুলোর পাশে থাকা নদীগুলোর জমি দখল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দখল ও ভরাটের কারণে বাস্তবে অনেক নদী মরে গেছে, অনেক মৃতপ্রায়। শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও ভরাট হয়ে আসা নদীর জায়গা এখন আবাদি জমি। কলকারখানা, ইটভাটা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকা-ও হচ্ছে নদীর জায়গায়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু খুলনার পাঁচটি উপজেলায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ২৭টি ইটভাটা। এমন চিত্র কমবেশি সারা দেশেরই। ফলে নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে। বর্ষার পানি নামতে পারে না। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়। নদী শুকিয়ে যায় বলে ভূগর্ভে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে পারে না, পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে এবং দেখা দিচ্ছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। এমনই আরো অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এসব কারণে বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশও বাঁচবে না। তা সত্ত্বেও ব্রিটিশ আমলের পর থেকে আমাদের নদীগুলো খননের প্রক্রিয়া নেই বললেই চলে। এর অন্যতম কারণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর খুবই সীমিত পরিসরে খননপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেড় ডজনের বেশি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবেও নদী খননের কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া আরো ব্যাপক ও গতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশে নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। জানা যায়, বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেই সিটি করপোরেশনের ট্রাক ও ভ্যান থেকে নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ভরাট হওয়ার পেছনে এই গৃহস্থালি বর্জ্যও একটি অন্যতম কারণ। সিটি করপোরেশনকে অবিলম্বে এই আত্মঘাতী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সবার সম্মিলিত প্রয়াসই শুধু পারে আমাদের নদীগুলোকে রক্ষা করতে।