ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণ-হত্যার দ্রুত বিচার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৮:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯
  • / ২৩৩ বার পড়া হয়েছে

হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করুন
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার ঘটনা এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। চার বছরের শিশুও এমন জঘন্য নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, আইনের ফাঁকফোকর গলে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া তথা বিচারহীনতাই এমন জঘন্য অপরাধ এভাবে বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ। তাঁদের মতে, তাৎক্ষণিক বা ঘটনার রেশ কাটার আগেই দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এমন অপরাধের ঘটনা অনেক কমে যাবে। উচ্চ আদালতও বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলার বিচার আইনে নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইনসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই মনে করছেন আইন ও বিচারসংশ্লিষ্টরা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুযায়ী এ ধরনের জঘন্য অপরাধের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। আইনে উল্লেখ রয়েছে, কোনো কারণে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা না গেলে সুপ্রিম কোর্টকে তা অবহিত করতে হবে। কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারক ও সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তারা (পিপি) তাও করছেন না। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হবে, আর সেই মামলার বিচার তাড়াতাড়ি হবে না এটা হতাশাজনক ও দুঃখজনক। উচ্চ আদালতের সাত দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, আইনের বিধান অনুযায়ী মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে, সাক্ষীদের উপস্থিতি ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মনিটরিং কমিটি করতে হবে। সংগত কারণ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে হবে, মনিটরিং কমিটি দ্রুততম সময়ে সাক্ষীদের সমন জারির বিষয়টি মনিটর করবে, সমন পাওয়ার পরও কোনো সাক্ষী সংগত কারণ ছাড়া আদালতে উপস্থিত না হলে ট্রাইব্যুনাল শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করবেন এবং আদালত প্রত্যাশা করেন সরকার অতি স্বল্প সময়ে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করবে। আমরা চাই, উচ্চ আদালতের সাত দফা নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হোক এবং ধর্ষণজনিত অপরাধ বৃদ্ধির যে ভয়ংকর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার লাগাম টানা হোক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ধর্ষণ-হত্যার দ্রুত বিচার

আপলোড টাইম : ১১:০৮:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯

হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করুন
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার ঘটনা এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। চার বছরের শিশুও এমন জঘন্য নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, আইনের ফাঁকফোকর গলে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া তথা বিচারহীনতাই এমন জঘন্য অপরাধ এভাবে বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ। তাঁদের মতে, তাৎক্ষণিক বা ঘটনার রেশ কাটার আগেই দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এমন অপরাধের ঘটনা অনেক কমে যাবে। উচ্চ আদালতও বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলার বিচার আইনে নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইনসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই মনে করছেন আইন ও বিচারসংশ্লিষ্টরা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুযায়ী এ ধরনের জঘন্য অপরাধের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। আইনে উল্লেখ রয়েছে, কোনো কারণে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা না গেলে সুপ্রিম কোর্টকে তা অবহিত করতে হবে। কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারক ও সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তারা (পিপি) তাও করছেন না। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হবে, আর সেই মামলার বিচার তাড়াতাড়ি হবে না এটা হতাশাজনক ও দুঃখজনক। উচ্চ আদালতের সাত দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, আইনের বিধান অনুযায়ী মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে, সাক্ষীদের উপস্থিতি ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মনিটরিং কমিটি করতে হবে। সংগত কারণ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে হবে, মনিটরিং কমিটি দ্রুততম সময়ে সাক্ষীদের সমন জারির বিষয়টি মনিটর করবে, সমন পাওয়ার পরও কোনো সাক্ষী সংগত কারণ ছাড়া আদালতে উপস্থিত না হলে ট্রাইব্যুনাল শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করবেন এবং আদালত প্রত্যাশা করেন সরকার অতি স্বল্প সময়ে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করবে। আমরা চাই, উচ্চ আদালতের সাত দফা নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হোক এবং ধর্ষণজনিত অপরাধ বৃদ্ধির যে ভয়ংকর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার লাগাম টানা হোক।