ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণ-খুনের মহামারী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৩:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
  • / ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
দেশে বর্তমানে ধর্ষণ-খুন যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগের বিষয়, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বা এ সংক্রান্ত অপরাধ চেষ্টার পর নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। সর্বশেষ সাভারে ডেকে নিয়ে শিশু ধর্ষণ ও কুষ্টিয়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ৬ জেলায় আরও ৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বগুড়ায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে এক শিক্ষার্থীকে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্ত করার মতো ঘটনার প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হতে হচ্ছে। মৌলভীবাজারে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে প্রকাশ্যে কুপিয়েছে এক বখাটে। অন্যদিকে বরিশালে হয়রানির প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। দিন দিন খুন, হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরা সভ্য সমাজে বাস করছি কিনা, এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। চলতি মাসের শুরুর দিকে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নির্যাতন ও এ সংক্রান্ত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় খোদ নিজের প্রতিষ্ঠানে পুড়িয়ে হত্যা এবং এতে দায়িত্বশীল অনেকের জড়িত থাকা ও অপরাধীর পক্ষ নেয়ার ঘটনা আমাদের সমাজের পচন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে সড়ক দুর্ঘটনা ও যত্রতত্র গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ খুন যেন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের লাগামহীন ধর্ষণ-খুন ও সড়কে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সমাজে খুন-ধর্ষণ ও নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং এতে তারা সাহসী হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বেপরোয়া অপরাধ সংঘটন করছে। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অপরাধীকে যথাযথ সাজা দেয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ফেনীর নুসরাত হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অপরাধে জড়িয়ে পড়া ও অপরাধীকে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা-তদবির দেখা গেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নুসরাত হত্যার ঘটনার তদন্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় চলছে এবং হাইকোর্ট এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সব কিছুতেই কেন এক প্রধানমন্ত্রীকে ভূমিকা রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাহলে করছেটা কী? আমাদের আর্থিক উন্নতি হয়তো হচ্ছে কিন্তু আত্মিক উন্নতি হচ্ছে না, বিপরীতে অবনতি হচ্ছে দেদার। নেমে গেছে মূল্যবোধের সূচক। খুন-ধর্ষণ ও নিপীড়নের পাশাপাশি দুর্নীতি-অনিয়ম প্রকট আকার ধারণ করেছে। সুষম উন্নয়ন ও উন্নত জাতি গঠন করতে হলে যে কোনো মূল্যে অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করার পাশাপাশি তাদের যে কোনো অপরাধ ও দায়িত্বে অবহেলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সাজা দিতে হবে। কেবল বদলি বা প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাদের শোধরানো যাবে না। এছাড়া যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনা না করে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক ও নৈতিক-ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর জোর দিতে হবে। অপরাধীর পরিচয় নির্বিশেষে দ্রুত আইনের প্রয়োগই পারে অপরাধ নির্মূল ও সুষ্ঠু সমাজ গঠন নিশ্চিত করতে। সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশনা ও কঠোর অবস্থানই এর একমাত্র পথ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ধর্ষণ-খুনের মহামারী

আপলোড টাইম : ০৯:২৩:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
দেশে বর্তমানে ধর্ষণ-খুন যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগের বিষয়, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বা এ সংক্রান্ত অপরাধ চেষ্টার পর নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। সর্বশেষ সাভারে ডেকে নিয়ে শিশু ধর্ষণ ও কুষ্টিয়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ৬ জেলায় আরও ৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বগুড়ায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে এক শিক্ষার্থীকে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্ত করার মতো ঘটনার প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হতে হচ্ছে। মৌলভীবাজারে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে প্রকাশ্যে কুপিয়েছে এক বখাটে। অন্যদিকে বরিশালে হয়রানির প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। দিন দিন খুন, হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরা সভ্য সমাজে বাস করছি কিনা, এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। চলতি মাসের শুরুর দিকে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নির্যাতন ও এ সংক্রান্ত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় খোদ নিজের প্রতিষ্ঠানে পুড়িয়ে হত্যা এবং এতে দায়িত্বশীল অনেকের জড়িত থাকা ও অপরাধীর পক্ষ নেয়ার ঘটনা আমাদের সমাজের পচন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে সড়ক দুর্ঘটনা ও যত্রতত্র গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ খুন যেন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের লাগামহীন ধর্ষণ-খুন ও সড়কে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সমাজে খুন-ধর্ষণ ও নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং এতে তারা সাহসী হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বেপরোয়া অপরাধ সংঘটন করছে। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অপরাধীকে যথাযথ সাজা দেয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ফেনীর নুসরাত হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অপরাধে জড়িয়ে পড়া ও অপরাধীকে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা-তদবির দেখা গেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নুসরাত হত্যার ঘটনার তদন্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় চলছে এবং হাইকোর্ট এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সব কিছুতেই কেন এক প্রধানমন্ত্রীকে ভূমিকা রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাহলে করছেটা কী? আমাদের আর্থিক উন্নতি হয়তো হচ্ছে কিন্তু আত্মিক উন্নতি হচ্ছে না, বিপরীতে অবনতি হচ্ছে দেদার। নেমে গেছে মূল্যবোধের সূচক। খুন-ধর্ষণ ও নিপীড়নের পাশাপাশি দুর্নীতি-অনিয়ম প্রকট আকার ধারণ করেছে। সুষম উন্নয়ন ও উন্নত জাতি গঠন করতে হলে যে কোনো মূল্যে অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করার পাশাপাশি তাদের যে কোনো অপরাধ ও দায়িত্বে অবহেলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সাজা দিতে হবে। কেবল বদলি বা প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাদের শোধরানো যাবে না। এছাড়া যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনা না করে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক ও নৈতিক-ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর জোর দিতে হবে। অপরাধীর পরিচয় নির্বিশেষে দ্রুত আইনের প্রয়োগই পারে অপরাধ নির্মূল ও সুষ্ঠু সমাজ গঠন নিশ্চিত করতে। সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশনা ও কঠোর অবস্থানই এর একমাত্র পথ।