ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০
  • / ১১৯ বার পড়া হয়েছে

আইনটির সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’ অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি এ অধ্যাদেশ জারি করেন। এর আগে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। উল্লেখ্য, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তা বিবেচনায় নিয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলার বিচার হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। বিচার শেষ করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা চলে, ধর্ষণের মহোৎসব চলছে যেন এখন। একদিকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, অন্যদিকে এসব তৎপরতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের ঘটনা। মানুষ কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কেন ধর্ষকরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না-এসব প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা একটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করি আমরা। কারণ, অপরাধ প্রতিরোধে সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তির বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে আইন প্রণয়ন বা তা কঠোর করাই যথেষ্ট নয়, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাও জরুরি। তাহলেই অপরাধীদের মনে অপরাধ করার বিষয়ে ভীতির সৃষ্টি হবে। কাজেই আইনটির সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যদিকে এ আইনে কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে কাউকে হয়রানি করার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধানও থাকা উচিত বলে মনে করি আমরা। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে প্রায়ই লক্ষ করা যায়- মামলা প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সঠিক তদন্ত না হওয়া, ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট না পাওয়া ইত্যাদি কারণে চূড়ান্ত রায়ে মামলা খারিজ হয়ে যায়। অনেক সময় প্রভাবশালীদের চাপে মামলার চার্জশিট যথাসময়ে দেয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে চার্জশিটে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত দুর্বলতার কারণে বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। ধর্ষণ প্রতিরোধের আইনি প্রক্রিয়ায় এসব বিষয়েও দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের প্রচলিত আইনে আরও কয়েকটি অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তা সত্ত্বেও সেসব অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে-এমনটি বলা যায় না। অর্থাৎ, শুধু মৃত্যুদণ্ডই অপরাধ প্রতিরোধ নিশ্চিত করে না। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পরও এ অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল হবে বলে মনে করেন না সমাজবিজ্ঞানীরা। বস্তুত ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন রোধে সমস্যাটির আরও গভীরে যাওয়া প্রয়োজন। অশিক্ষা ও উন্নত সংস্কৃতিচর্চার অভাবও নারী নির্যাতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ বাস্তবতায় ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০

আইনটির সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’ অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি এ অধ্যাদেশ জারি করেন। এর আগে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। উল্লেখ্য, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তা বিবেচনায় নিয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলার বিচার হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। বিচার শেষ করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা চলে, ধর্ষণের মহোৎসব চলছে যেন এখন। একদিকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, অন্যদিকে এসব তৎপরতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের ঘটনা। মানুষ কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কেন ধর্ষকরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না-এসব প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা একটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করি আমরা। কারণ, অপরাধ প্রতিরোধে সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তির বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে আইন প্রণয়ন বা তা কঠোর করাই যথেষ্ট নয়, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাও জরুরি। তাহলেই অপরাধীদের মনে অপরাধ করার বিষয়ে ভীতির সৃষ্টি হবে। কাজেই আইনটির সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যদিকে এ আইনে কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে কাউকে হয়রানি করার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধানও থাকা উচিত বলে মনে করি আমরা। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে প্রায়ই লক্ষ করা যায়- মামলা প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সঠিক তদন্ত না হওয়া, ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট না পাওয়া ইত্যাদি কারণে চূড়ান্ত রায়ে মামলা খারিজ হয়ে যায়। অনেক সময় প্রভাবশালীদের চাপে মামলার চার্জশিট যথাসময়ে দেয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে চার্জশিটে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত দুর্বলতার কারণে বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। ধর্ষণ প্রতিরোধের আইনি প্রক্রিয়ায় এসব বিষয়েও দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের প্রচলিত আইনে আরও কয়েকটি অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তা সত্ত্বেও সেসব অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে-এমনটি বলা যায় না। অর্থাৎ, শুধু মৃত্যুদণ্ডই অপরাধ প্রতিরোধ নিশ্চিত করে না। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পরও এ অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল হবে বলে মনে করেন না সমাজবিজ্ঞানীরা। বস্তুত ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন রোধে সমস্যাটির আরও গভীরে যাওয়া প্রয়োজন। অশিক্ষা ও উন্নত সংস্কৃতিচর্চার অভাবও নারী নির্যাতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ বাস্তবতায় ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।