ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ধরা চাই রাঘব বোয়াল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ মে ২০১৮
  • / ৪০৭ বার পড়া হয়েছে

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান বেশ সাড়া জাগালেও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় জনমনে অস্বস্তি বিরাজ করছে। বহুল আলোচিত মাদক স¤্রাটরাই এখনও জালে আটকা পড়েনি। তাই রাঘব বোয়াল ধরা না পড়ে শুধু চুনোপুঁটিদের শায়েস্তা করা হলে এই অভিযান শতভাগ সফল হবে না, এটি নি:সংশয়ে বলা চলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘অল আউট’ নীতির কথা বলেছেন। তাই মানুষ এখনও আশাবাদী। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাদক নির্মূলে র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সারাদেশে এখন কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। তবে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা ও সক্রিয়তাও যে এই মরণ থাবা থেকে বাঁচার বড় পথ সেটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরী। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোন বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। যারা ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যাও। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। সরকারী মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও এর আগ্রাসন থেমে নেই। ইয়াবা মস্তিষ্ককে চরমভাবে উদ্দীপ্ত করে। সেবন করলে তাৎক্ষণিক হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কিছু কোষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে। প্রতি মাসে দেশে অন্তত ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটক হয়। এ মাদক নেশার আগ্রাসন কতটা যে বিস্তৃৃত এ পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশকে টার্গেট করেই সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে একশ্রেণীর লোক মাদক তৈরির কারখানা খুলে বসেছে। তারা মাদক তৈরি করে বাংলাদেশে পাচার করে থাকে। একসময় এভাবে ব্যাপক পরিমাণে ফেনসিডিলের অনপ্রবেশ ঘটার কথা শোনা যেত। এখন মিয়ানমার থেকে একইভাবে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে। দেশে যারা অবৈধভাবে এসব মাদক আমদানি করে থাকে তাদের মধ্যে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও রয়েছে। কাজেই মাদকের চালান প্রতিরোধে দেশের সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সব অবৈধ মাদক আমদানিকারককে, তারা যত প্রভাবশালীই হোক, সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। আমরা মনে করি দেশ থেকে সম্পূর্ণরুপে মাদক নির্মূল করতে হলে নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনার কোন বিকল্প নেই। মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরী। সেইসঙ্গে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্যেও জোরদার কার্যক্রম প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ধরা চাই রাঘব বোয়াল

আপলোড টাইম : ০৫:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ মে ২০১৮

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান বেশ সাড়া জাগালেও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় জনমনে অস্বস্তি বিরাজ করছে। বহুল আলোচিত মাদক স¤্রাটরাই এখনও জালে আটকা পড়েনি। তাই রাঘব বোয়াল ধরা না পড়ে শুধু চুনোপুঁটিদের শায়েস্তা করা হলে এই অভিযান শতভাগ সফল হবে না, এটি নি:সংশয়ে বলা চলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘অল আউট’ নীতির কথা বলেছেন। তাই মানুষ এখনও আশাবাদী। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাদক নির্মূলে র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সারাদেশে এখন কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। তবে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা ও সক্রিয়তাও যে এই মরণ থাবা থেকে বাঁচার বড় পথ সেটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরী। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোন বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। যারা ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যাও। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। সরকারী মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও এর আগ্রাসন থেমে নেই। ইয়াবা মস্তিষ্ককে চরমভাবে উদ্দীপ্ত করে। সেবন করলে তাৎক্ষণিক হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কিছু কোষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে। প্রতি মাসে দেশে অন্তত ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটক হয়। এ মাদক নেশার আগ্রাসন কতটা যে বিস্তৃৃত এ পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশকে টার্গেট করেই সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে একশ্রেণীর লোক মাদক তৈরির কারখানা খুলে বসেছে। তারা মাদক তৈরি করে বাংলাদেশে পাচার করে থাকে। একসময় এভাবে ব্যাপক পরিমাণে ফেনসিডিলের অনপ্রবেশ ঘটার কথা শোনা যেত। এখন মিয়ানমার থেকে একইভাবে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে। দেশে যারা অবৈধভাবে এসব মাদক আমদানি করে থাকে তাদের মধ্যে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও রয়েছে। কাজেই মাদকের চালান প্রতিরোধে দেশের সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সব অবৈধ মাদক আমদানিকারককে, তারা যত প্রভাবশালীই হোক, সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। আমরা মনে করি দেশ থেকে সম্পূর্ণরুপে মাদক নির্মূল করতে হলে নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনার কোন বিকল্প নেই। মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরী। সেইসঙ্গে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্যেও জোরদার কার্যক্রম প্রয়োজন।