ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেশের অর্থনীতি ম্লান ব্যাংক খাত ও চালের বাজারে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:০৫:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
  • / ৫৫২ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে উন্নতির ধারা বজায় থাকলেও লাগামহীন চালের বাজার আর ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলার কারণে বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের পুরো সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতি। ৪৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে; রাজস্ব আদায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধিতেই রয়েছে দেশের অর্থনীতি। তবে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগাম বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ক্ষতির কারণে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে আমদানি ব্যাপক বেড়ে যাওয়া, প্রধান খাদ্যপণ্য চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের সঙ্কটে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভোটের বছরে রাজনীতিতে ফের অস্থিরতা দেখা দেয় কি না; আবারও হরতাল-অবরোধ জ্বালাও-পোড়াওয়ের কবলে পড়তে হয় কি না- সে শঙ্কা নিয়েই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিবেচনায় মোটা দাগে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো। টানা দুই বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলা, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলা, সামাজিক রূপান্তরের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। বিদুৎ উৎপাদন বেড়েছে; গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতেও অনেক কাজ হয়েছে। “এ সবই আমাদের আশান্বিত করেছে।
আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সার্বিকভাবে ভালোই গেছে ২০১৭ সাল। তবে চালের বাড়তি দাম গরিব মানুষসহ মধ্যবিত্তকেও বেশ দুর্ভোগে ফেলেছে। এক্ষেত্রে সরকারের ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ছিল।”
বিশৃঙ্খল ব্যাংক খাত: ২০১৬ সালের শুরুতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশ ফেরত পেলেও বাকি টাকার কোনো আশা বিদায়ী বছরেও দেখা যায়নি। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে বিশৃংখল অবস্থা ছিল বছরজুড়ে। বিশেষভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ সরকারের অনেক অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে আর্থিক অবস্থার অবনতির তালিকায় রয়েছে ১৩টি। বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ধুকছে; বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থাও খারাপের দিকে। দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগের উপর। ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে যে দুর্বলতা আছে, সেকথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বছরের শেষে এসে এক অনুষ্ঠানে স্বীকার করে নিয়েছেন। ফরাসউদ্দিন বলেন, “বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। এগুলোকে আর এভাবে চলতে দেওয়া ঠিক না। এখন ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করার সময় এসেছে। সারা পৃথিবীতেই এটা হয়। আমাদেরও করতে হবে।”
খেলাপি ঋণ বাড়ছেই: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিয়মনীতি না মেনে ঋণ দেওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে আর্থিক খাতে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নয় বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি। এছাড়া হিসারে বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার খারাপ ঋণ অবলোপন ধরলে সব মিলে খেলাপি ঋণ হবে একলাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের দেশীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা গত জুনে ছিল ৩১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা।
অর্থনীতির বিশ্লেষক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “শঙ্কা হচ্ছে ব্যাংক খাত নিয়ে। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ মুদ্রানীতির লক্ষ্য ছাড়িয়ে ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণ বাড়ছে; তবে আমানত বাড়ছে না। বিশাল অংকের খেলাপি ঋণ তো আছেই। অন্যদিকে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে তাতেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী: ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। বেশ কিছুদিন মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কিন্তু বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এসে তা বেড়ে ৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আর ১২ মাসের গড় হিসেবে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া “সরকারি মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও চাল আমদানি করতে দেরি করেছে সরকার; শুল্ক কমাতেও দেরি করেছে। সে কারণে চালের দাম যতোটা বাড়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। যেটা এখনও অব্যাহত আছে।” বছরের শুরুতে মোটা চালের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। সেই চালের দর বাড়তে বাড়তে এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় উঠেছে। সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) ৪০/৪২ টাকা থেকে বেড়ে এখন খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এপ্রিলে হাওড়ে বন্যায় ফসলের ক্ষতির পর থেকে বাড়তে শুরু করে চালের দাম। সে সময় সরকারের গুদামগুলোতে চালের মজুদ ২ লাখ টনেরও নীচে নেমে আসে। সে সুযোগে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের তাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর সারা দেশে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে আরেক দফা বাড়ে চালের দাম। দুই দফায় শুল্ক কমিয়েও চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে পারেনি সরকার।
অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে উন্নতির ধারা বজায় থাকলেও লাগামহীন চালের বাজার আর ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলার কারণে বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের পুরো সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতি।
তবে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগাম বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ক্ষতির কারণে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে আমদানি ব্যাপক বেড়ে যাওয়া, প্রধান খাদ্যপণ্য চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের সঙ্কটে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভোটের বছরে রাজনীতিতে ফের অস্থিরতা দেখা দেয় কি না; আবারও হরতাল-অবরোধের কবলে পড়তে হয় কি না- সে শঙ্কা নিয়েই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দেশের অর্থনীতি ম্লান ব্যাংক খাত ও চালের বাজারে

আপলোড টাইম : ১২:০৫:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ডেস্ক রিপোর্ট: অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে উন্নতির ধারা বজায় থাকলেও লাগামহীন চালের বাজার আর ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলার কারণে বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের পুরো সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতি। ৪৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে; রাজস্ব আদায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধিতেই রয়েছে দেশের অর্থনীতি। তবে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগাম বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ক্ষতির কারণে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে আমদানি ব্যাপক বেড়ে যাওয়া, প্রধান খাদ্যপণ্য চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের সঙ্কটে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভোটের বছরে রাজনীতিতে ফের অস্থিরতা দেখা দেয় কি না; আবারও হরতাল-অবরোধ জ্বালাও-পোড়াওয়ের কবলে পড়তে হয় কি না- সে শঙ্কা নিয়েই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিবেচনায় মোটা দাগে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো। টানা দুই বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলা, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলা, সামাজিক রূপান্তরের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। বিদুৎ উৎপাদন বেড়েছে; গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতেও অনেক কাজ হয়েছে। “এ সবই আমাদের আশান্বিত করেছে।
আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সার্বিকভাবে ভালোই গেছে ২০১৭ সাল। তবে চালের বাড়তি দাম গরিব মানুষসহ মধ্যবিত্তকেও বেশ দুর্ভোগে ফেলেছে। এক্ষেত্রে সরকারের ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ছিল।”
বিশৃঙ্খল ব্যাংক খাত: ২০১৬ সালের শুরুতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশ ফেরত পেলেও বাকি টাকার কোনো আশা বিদায়ী বছরেও দেখা যায়নি। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে বিশৃংখল অবস্থা ছিল বছরজুড়ে। বিশেষভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ সরকারের অনেক অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে আর্থিক অবস্থার অবনতির তালিকায় রয়েছে ১৩টি। বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ধুকছে; বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থাও খারাপের দিকে। দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগের উপর। ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে যে দুর্বলতা আছে, সেকথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বছরের শেষে এসে এক অনুষ্ঠানে স্বীকার করে নিয়েছেন। ফরাসউদ্দিন বলেন, “বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। এগুলোকে আর এভাবে চলতে দেওয়া ঠিক না। এখন ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করার সময় এসেছে। সারা পৃথিবীতেই এটা হয়। আমাদেরও করতে হবে।”
খেলাপি ঋণ বাড়ছেই: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিয়মনীতি না মেনে ঋণ দেওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে আর্থিক খাতে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নয় বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি। এছাড়া হিসারে বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার খারাপ ঋণ অবলোপন ধরলে সব মিলে খেলাপি ঋণ হবে একলাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের দেশীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা গত জুনে ছিল ৩১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা।
অর্থনীতির বিশ্লেষক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “শঙ্কা হচ্ছে ব্যাংক খাত নিয়ে। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ মুদ্রানীতির লক্ষ্য ছাড়িয়ে ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণ বাড়ছে; তবে আমানত বাড়ছে না। বিশাল অংকের খেলাপি ঋণ তো আছেই। অন্যদিকে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে তাতেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী: ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। বেশ কিছুদিন মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কিন্তু বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এসে তা বেড়ে ৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আর ১২ মাসের গড় হিসেবে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া “সরকারি মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও চাল আমদানি করতে দেরি করেছে সরকার; শুল্ক কমাতেও দেরি করেছে। সে কারণে চালের দাম যতোটা বাড়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। যেটা এখনও অব্যাহত আছে।” বছরের শুরুতে মোটা চালের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। সেই চালের দর বাড়তে বাড়তে এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় উঠেছে। সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) ৪০/৪২ টাকা থেকে বেড়ে এখন খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এপ্রিলে হাওড়ে বন্যায় ফসলের ক্ষতির পর থেকে বাড়তে শুরু করে চালের দাম। সে সময় সরকারের গুদামগুলোতে চালের মজুদ ২ লাখ টনেরও নীচে নেমে আসে। সে সুযোগে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের তাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর সারা দেশে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে আরেক দফা বাড়ে চালের দাম। দুই দফায় শুল্ক কমিয়েও চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে পারেনি সরকার।
অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে উন্নতির ধারা বজায় থাকলেও লাগামহীন চালের বাজার আর ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলার কারণে বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের পুরো সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতি।
তবে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগাম বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ক্ষতির কারণে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে আমদানি ব্যাপক বেড়ে যাওয়া, প্রধান খাদ্যপণ্য চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের সঙ্কটে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভোটের বছরে রাজনীতিতে ফের অস্থিরতা দেখা দেয় কি না; আবারও হরতাল-অবরোধের কবলে পড়তে হয় কি না- সে শঙ্কা নিয়েই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।