ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুর্ঘটনায় আর কত মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ২৭৭ বার পড়া হয়েছে

২০১৮ সালে যেদিন যাত্রী কল্যাণ সমিতি সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছিল, সেদিনই কুমিল্লায় ট্রাক চাপা পড়ে ১৩ জন ইটভাটা শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁদের বেশির ভাগ ছিল স্কুলের ছাত্র, দারিদ্র্যের কারণে ইটভাটায় কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাত। এই যে কিশোর-তরুণদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেল, তার জবাব কী। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে দৈনিক গড়ে ১৮ জন। আর পুরো বছর, অর্থাৎ বাকি আট মাস যোগ করলে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০-এ। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭ হাজার ২২১ জন, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই হিসাবকে পূর্ণাঙ্গ ভাবার কারণ নেই। সংগঠনটি বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইত্যাদিতে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আবার এসব গণমাধ্যম খবর পেয়ে থাকে প্রত্যক্ষদর্শী ও থানায় দায়ের করা এফআইআর বা মামলা থেকে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক দুর্ঘটনার খবর অজানাই থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশকালে যেসব সুপারিশ করেছে কিংবা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, তাও নতুন নয়। সমিতি একাধিকবার সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল পায়নি। বরং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বীকারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দেওয়ার কারণে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে। গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসের নিচে দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তারা ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সড়ক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শিক্ষার্থীরা নীতিনির্ধারকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে কীভাবে সড়ক নিরাপদ রাখতে হয়। কিন্তু সেটি ছিল প্রতীকী। সড়ক নিরাপদ রাখা কিংবা দুর্ঘটনা রোধ করা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এটি করতে হবে সরকারকেই।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে চালকদের শাস্তির মাত্রা বাড়ালেও সেটি কতটা কার্যকর হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা আইনটি সংসদে পাস করার পরই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট পালন করেন। অথচ সড়ক পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, চালকদের ওপর বাড়তি চাপ ও পদচারীদের অসচেতনতার কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ও সেতু, সময়মতো মেরামত না হওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন এবং চালকদের অদক্ষতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনা রোধে যেসব আইন আছে, তার কোনোটাই প্রতিপালিত হচ্ছে না। আইন যারা ভাঙছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। এমনকি সরকার দূরপাল্লার চালকদের জন্য যে কর্মঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটিও মেনে চলা হচ্ছে না। কথা অনেক হয়েছে। আশ্বাসবাণীও কম শোনা যায়নি। কিন্তু শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, এমনকি কমিয়ে আনতে হলে পরিবহন খাতে যে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি চলছে, তা বন্ধ করতেই হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দুর্ঘটনায় আর কত মৃত্যু

আপলোড টাইম : ১০:২১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৯

২০১৮ সালে যেদিন যাত্রী কল্যাণ সমিতি সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছিল, সেদিনই কুমিল্লায় ট্রাক চাপা পড়ে ১৩ জন ইটভাটা শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁদের বেশির ভাগ ছিল স্কুলের ছাত্র, দারিদ্র্যের কারণে ইটভাটায় কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাত। এই যে কিশোর-তরুণদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেল, তার জবাব কী। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে দৈনিক গড়ে ১৮ জন। আর পুরো বছর, অর্থাৎ বাকি আট মাস যোগ করলে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০-এ। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭ হাজার ২২১ জন, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই হিসাবকে পূর্ণাঙ্গ ভাবার কারণ নেই। সংগঠনটি বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইত্যাদিতে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আবার এসব গণমাধ্যম খবর পেয়ে থাকে প্রত্যক্ষদর্শী ও থানায় দায়ের করা এফআইআর বা মামলা থেকে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক দুর্ঘটনার খবর অজানাই থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশকালে যেসব সুপারিশ করেছে কিংবা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, তাও নতুন নয়। সমিতি একাধিকবার সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল পায়নি। বরং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বীকারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দেওয়ার কারণে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে। গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসের নিচে দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তারা ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সড়ক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শিক্ষার্থীরা নীতিনির্ধারকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে কীভাবে সড়ক নিরাপদ রাখতে হয়। কিন্তু সেটি ছিল প্রতীকী। সড়ক নিরাপদ রাখা কিংবা দুর্ঘটনা রোধ করা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এটি করতে হবে সরকারকেই।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে চালকদের শাস্তির মাত্রা বাড়ালেও সেটি কতটা কার্যকর হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা আইনটি সংসদে পাস করার পরই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট পালন করেন। অথচ সড়ক পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, চালকদের ওপর বাড়তি চাপ ও পদচারীদের অসচেতনতার কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ও সেতু, সময়মতো মেরামত না হওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন এবং চালকদের অদক্ষতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনা রোধে যেসব আইন আছে, তার কোনোটাই প্রতিপালিত হচ্ছে না। আইন যারা ভাঙছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। এমনকি সরকার দূরপাল্লার চালকদের জন্য যে কর্মঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটিও মেনে চলা হচ্ছে না। কথা অনেক হয়েছে। আশ্বাসবাণীও কম শোনা যায়নি। কিন্তু শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, এমনকি কমিয়ে আনতে হলে পরিবহন খাতে যে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি চলছে, তা বন্ধ করতেই হবে।