ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দর্শনা-জীবননগরসহ দেশের ১১টি রুট দিয়ে চামড়া পাচার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:০০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • / ২৯৩ বার পড়া হয়েছে

এবারের ঈদেও পশুর চামড়ার বাজার মন্দা : ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসা-এতিমখানাগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির পশুর চামড়া থেকে দেশের কওমি মাদরাসা ও এতিমখানা গুলোর বেশ ভালো একটি আয় হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো। দরিদ্র্য ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষাসেবা দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের বাজারে চামড়ার মূল্য কম হওয়ায় তা পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। ভারতে বিজেপি সরকার আসার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে গোরক্ষার নীতি গ্রহণ করায় ভারতীয় বাজারে চামড়ার চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা দেশীয় বাজার থেকে স্বল্প মূল্যে চামড়া কিনে তা ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোরবানির চামড়ার প্রায় অর্ধেকই পাচার হয়ে যায় ভারতে। ভারতের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির পূর্বে শত শত কোটি টাকা তুলে দেয় পাচারকারী চক্রের হাতে। তারা চামড়ার মূল্যও দেয় স্থানীয় বাজারের প্রায় দ্বিগুণ। ফলে পাচারকারী চক্র চামড়া সংগ্রহে মরিয়া হয়ে ওঠে।
ভারতের বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। এতে ভারতের ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়ার ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়। ভারতে কাঁচা চামড়ার চাহিদা সামনে রেখে পরিকল্পনা করে এবারেও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে দেয় বাংলাদেশের ট্যানারির মালিকদের সিন্ডিকেট।
এ বছরও চুয়াডাঙ্গার চামড়ার বাজারগুলোতে অনেক কম দামে বেচাকেনার দৃশ্য চোখে পড়েছে। রেলবাজারের চামড়া ব্যবসায়ী সামসুল আলম টুটুল সময়ের সমীকরণকে বলেন, বিগত দু’বছর ধরে চামড়ার দাম খুবই কম। এ বছরও অনেক কম দামে চামড়া কিনেছি, সে তুলনায় লাভ হবে খুব সীমিত। চামড়া ব্যবসায়ী টুটুল মিয়া এবার কোরবানি ঈদে ৮০০টি ছাগলের চামড়া ও দেড়শটি গরুর চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত করছেন। তিনি এ বছর প্রতিটি ছাগলের চামড়া কিনেছেন সর্বনি¤œ ৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত এবং গরুর চামড়া সর্বনি¤œ ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০টাকা দরে কিনেছেন। প্রতিটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১ থেকে দেড় কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। আগে ১ কেজি লবণ কিনতে ৫-৬ টাকা লাগতো আর এখন তা ২০ থেকে ২২টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে লবণের দাম পোষাতে চামড়ার কিছুটা মূল্যহ্রাস হচ্ছে প্রক্রিয়াজাতকরণেও।
চুয়াডাঙ্গা খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর শিক্ষক মো. হুসাইন জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শহরের বিভিন্ন এলাকার কোরবানীর পশুর চামড়া তারা পেয়েছেন। এরমধ্যে ৫৩টি গরুর চামড়া ও ৪০০টি ছাগলের চামড়া। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ১হাজার ৫০টাকা দরে গরুর চামড়া ও ১১৫টাকা দরে ছাগলের চামড়া বিক্রয় করেন। গত দু’বছর আগেও এ সমস্ত চামড়ার মূল্য ছিল বর্তমান দামের তিনগুণ। চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় তারা বছরের বড় একটি আয় বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
অজ্ঞাত কারণে বিগত বছরের চেয়ে চামড়ার দাম খুবই কম স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও দেশের চামড়া বাজারের প্রতি সুনজর না থাকায় এমনটি ঘটেছে। তা ছাড়া কিছু অসাধু চামড়া ও ট্যানারী ব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে দাম কমিয়ে বাজারে মন্দাভাব সৃষ্টি করছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী ভারতে চামড়ার মূল্য দেশের বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। সর্বোপরি বলতেই হবে, চামড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে উপকৃত হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত।
অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গতবারের তুলনায় কাঁচা চামড়ার দাম বেশি। এমনকি আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা বর্তমানের দামের চেয়েও বর্গফুটে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম।
এদিকে ভারতে গরুর চামড়ার মান নিম্নমানের। সেখানে বর্তমানে প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রায় ৯০ টাকা, যা বাংলাদেশের নির্ধারিত দরের প্রায় দ্বিগুণ। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের চামড়ার মান ভাল অথচ দাম অনেক কম থাকায় প্রতি বছরই ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে।
জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ সাধারণত এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ফলে চামড়ার দাম কমে গেলে দুস্থ-অসহায় মানুষের ভাগে কম পড়বে। ঘোষণা অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৫০-৫৫ টাকায়, ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০-৪৫ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ২০-২২ এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হবে। গত বছরও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকায় কিনেছেন। এছাড়া খাসির চামড়া ২০ এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাই পর্যবেক্ষক মহলের অভিযোগ, ভারতের চেয়ে পরিকল্পিতভাবে দাম কমিয়ে চামড়া পাচারের সুযোগকে সহজ করা হয়েছে। অথচ চামড়াজাত পণ্যের মূল্যে আকাশ ছোয়া। তারপরেও দাম বাড়ছে না কাঁচা চামড়ার। দেখা যায় কাঁচামাল ক্রয় ও পণ্যে বিক্রয় মূল্য আকাশ-পাতাল দুরত্ব।
কোরবানির ঈদের আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আইন শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় ভারতে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তরক্ষী বাহীনি বিজিবি’কে সতর্ক থাকতে বলেন। সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার চামড়া সরাসরি ঢাকামূখী করার নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক এখনও চুয়াডাঙ্গার বাজারের চামড়া সীমান্ত পার হতে পারেনি। তবে সীমান্তে সতর্কাবস্থা না থাকলে হয়তো কিছুদিন প্রক্রিয়াজাত করে রাখার পর তা পাচার করা হবে বিভিন্ন রুটে। ফলে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাচারের ভয় ব্যবসায়ীদের আগের মতো ভাবায় না। অথচ এ দেশের পশুর চামড়ার মান বিশ্বে এক নম্বর হওয়ায় দামও আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। এদিকে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্ত পথে ভারতে চামড়া পাচারের ১১টি রুট চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর মধ্যে জীবননগর ও দর্শনাসহ রয়েছে দেশের ১১টি চিহ্নিত রুট। এরমধ্যে সাতক্ষীরা, কলারোয়া, বেনাপোল, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাই, জাফলং, তামাবিল ও করিমগঞ্জ অন্যতম। এসব পয়েন্টে চোরাচালান চক্রের চিহ্নিত ব্যক্তিদের আনাগোনা পরিলক্ষিত হয়। ভারতের চামড়া পাচার রোধে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি সতর্ক থাকার পরও চামড়া পাচার রোধ করা যাচ্ছে না বলছেন এক শ্রেণীর পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী। এজন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ ছোড়েন। এবারও দেশের বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দর্শনা-জীবননগরসহ দেশের ১১টি রুট দিয়ে চামড়া পাচার

আপলোড টাইম : ০৬:০০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এবারের ঈদেও পশুর চামড়ার বাজার মন্দা : ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসা-এতিমখানাগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির পশুর চামড়া থেকে দেশের কওমি মাদরাসা ও এতিমখানা গুলোর বেশ ভালো একটি আয় হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো। দরিদ্র্য ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষাসেবা দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের বাজারে চামড়ার মূল্য কম হওয়ায় তা পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। ভারতে বিজেপি সরকার আসার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে গোরক্ষার নীতি গ্রহণ করায় ভারতীয় বাজারে চামড়ার চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা দেশীয় বাজার থেকে স্বল্প মূল্যে চামড়া কিনে তা ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোরবানির চামড়ার প্রায় অর্ধেকই পাচার হয়ে যায় ভারতে। ভারতের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির পূর্বে শত শত কোটি টাকা তুলে দেয় পাচারকারী চক্রের হাতে। তারা চামড়ার মূল্যও দেয় স্থানীয় বাজারের প্রায় দ্বিগুণ। ফলে পাচারকারী চক্র চামড়া সংগ্রহে মরিয়া হয়ে ওঠে।
ভারতের বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। এতে ভারতের ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়ার ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়। ভারতে কাঁচা চামড়ার চাহিদা সামনে রেখে পরিকল্পনা করে এবারেও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে দেয় বাংলাদেশের ট্যানারির মালিকদের সিন্ডিকেট।
এ বছরও চুয়াডাঙ্গার চামড়ার বাজারগুলোতে অনেক কম দামে বেচাকেনার দৃশ্য চোখে পড়েছে। রেলবাজারের চামড়া ব্যবসায়ী সামসুল আলম টুটুল সময়ের সমীকরণকে বলেন, বিগত দু’বছর ধরে চামড়ার দাম খুবই কম। এ বছরও অনেক কম দামে চামড়া কিনেছি, সে তুলনায় লাভ হবে খুব সীমিত। চামড়া ব্যবসায়ী টুটুল মিয়া এবার কোরবানি ঈদে ৮০০টি ছাগলের চামড়া ও দেড়শটি গরুর চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত করছেন। তিনি এ বছর প্রতিটি ছাগলের চামড়া কিনেছেন সর্বনি¤œ ৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত এবং গরুর চামড়া সর্বনি¤œ ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০টাকা দরে কিনেছেন। প্রতিটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১ থেকে দেড় কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। আগে ১ কেজি লবণ কিনতে ৫-৬ টাকা লাগতো আর এখন তা ২০ থেকে ২২টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে লবণের দাম পোষাতে চামড়ার কিছুটা মূল্যহ্রাস হচ্ছে প্রক্রিয়াজাতকরণেও।
চুয়াডাঙ্গা খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর শিক্ষক মো. হুসাইন জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শহরের বিভিন্ন এলাকার কোরবানীর পশুর চামড়া তারা পেয়েছেন। এরমধ্যে ৫৩টি গরুর চামড়া ও ৪০০টি ছাগলের চামড়া। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ১হাজার ৫০টাকা দরে গরুর চামড়া ও ১১৫টাকা দরে ছাগলের চামড়া বিক্রয় করেন। গত দু’বছর আগেও এ সমস্ত চামড়ার মূল্য ছিল বর্তমান দামের তিনগুণ। চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় তারা বছরের বড় একটি আয় বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
অজ্ঞাত কারণে বিগত বছরের চেয়ে চামড়ার দাম খুবই কম স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও দেশের চামড়া বাজারের প্রতি সুনজর না থাকায় এমনটি ঘটেছে। তা ছাড়া কিছু অসাধু চামড়া ও ট্যানারী ব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে দাম কমিয়ে বাজারে মন্দাভাব সৃষ্টি করছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী ভারতে চামড়ার মূল্য দেশের বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। সর্বোপরি বলতেই হবে, চামড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের কওমি মাদরাসাগুলো বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে উপকৃত হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত।
অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গতবারের তুলনায় কাঁচা চামড়ার দাম বেশি। এমনকি আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা বর্তমানের দামের চেয়েও বর্গফুটে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম।
এদিকে ভারতে গরুর চামড়ার মান নিম্নমানের। সেখানে বর্তমানে প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রায় ৯০ টাকা, যা বাংলাদেশের নির্ধারিত দরের প্রায় দ্বিগুণ। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের চামড়ার মান ভাল অথচ দাম অনেক কম থাকায় প্রতি বছরই ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে।
জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ সাধারণত এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ফলে চামড়ার দাম কমে গেলে দুস্থ-অসহায় মানুষের ভাগে কম পড়বে। ঘোষণা অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৫০-৫৫ টাকায়, ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০-৪৫ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ২০-২২ এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হবে। গত বছরও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকায় কিনেছেন। এছাড়া খাসির চামড়া ২০ এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাই পর্যবেক্ষক মহলের অভিযোগ, ভারতের চেয়ে পরিকল্পিতভাবে দাম কমিয়ে চামড়া পাচারের সুযোগকে সহজ করা হয়েছে। অথচ চামড়াজাত পণ্যের মূল্যে আকাশ ছোয়া। তারপরেও দাম বাড়ছে না কাঁচা চামড়ার। দেখা যায় কাঁচামাল ক্রয় ও পণ্যে বিক্রয় মূল্য আকাশ-পাতাল দুরত্ব।
কোরবানির ঈদের আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আইন শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় ভারতে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তরক্ষী বাহীনি বিজিবি’কে সতর্ক থাকতে বলেন। সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার চামড়া সরাসরি ঢাকামূখী করার নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক এখনও চুয়াডাঙ্গার বাজারের চামড়া সীমান্ত পার হতে পারেনি। তবে সীমান্তে সতর্কাবস্থা না থাকলে হয়তো কিছুদিন প্রক্রিয়াজাত করে রাখার পর তা পাচার করা হবে বিভিন্ন রুটে। ফলে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাচারের ভয় ব্যবসায়ীদের আগের মতো ভাবায় না। অথচ এ দেশের পশুর চামড়ার মান বিশ্বে এক নম্বর হওয়ায় দামও আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। এদিকে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্ত পথে ভারতে চামড়া পাচারের ১১টি রুট চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর মধ্যে জীবননগর ও দর্শনাসহ রয়েছে দেশের ১১টি চিহ্নিত রুট। এরমধ্যে সাতক্ষীরা, কলারোয়া, বেনাপোল, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাই, জাফলং, তামাবিল ও করিমগঞ্জ অন্যতম। এসব পয়েন্টে চোরাচালান চক্রের চিহ্নিত ব্যক্তিদের আনাগোনা পরিলক্ষিত হয়। ভারতের চামড়া পাচার রোধে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি সতর্ক থাকার পরও চামড়া পাচার রোধ করা যাচ্ছে না বলছেন এক শ্রেণীর পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী। এজন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ ছোড়েন। এবারও দেশের বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।