ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দর্শনায় গভীর রাতে লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪০:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ৩৯২ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস: চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। চোরদের প্রতি এ প্রবাদ তাকলেও এখন বলতেই হয় ডাকাতে না শোনে মৃত্যু বা শোকের কাহিনী। একটি লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতি করে প্রমান করেছে ডাকাতরা মানুষ বা লাশ বোঝে না! বোঝে লুটতরাজ করতে। আর তা সেটা যেখানে যে পরিবেশেই হোক না কেন। এমনি একটি চাঞ্চল্যকর লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে দর্শনা পৌর শহরে মৃতের বাড়ীর সামনেই ওই মৃতের মরদেহ নিয়ে দাড়ীয়ে থাকা গাড়ীতে। এঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দায়িত্ব অবহেলার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যখন লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা চলছিল তখন তার অদূরেই একদল পুলিশ অবস্থান করছিলো। কিন্তু ডাকাতদের ধরতে পারেনি। ভুক্তভোগীদের কথা অনুযায়ী পুলিশের উপস্থিতিতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পুলিশ দাবি করছে এটা ডাকাতি নয় ছিনতাইয়ের ঘটনা। পুলিশ আরো বলছে, এই ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেছে । গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দর্শনা পৌর শহরের আজিমপুর ফুড গোডাউনের পিছনের নতুনপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবুল কালাম আজাদ (৭০) গত এক সপ্তাহ আগে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১ টায় মারা যান। ওইদিনই রাত সাড়ে ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে দর্শনা ফুড গোডাউনের পিছনে তার বাড়ীতে এসে লাশ পৌঁছায়। লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ী দামুড়হুদা উপজেলার ছোটবলদিয়া গ্রামে যাবার জন্য বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরাসহ কিছু প্রতিবেশী দাফনকার্য়ে শরিক হওয়ার উদ্যোশে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় ৪/৫ জনের একটি দুষ্কৃতিকারীদল হাতে চাপাতি ও বটি নিয়ে হামলা চালায়। লাশবাহী মাইক্রোবাসের পাশে দাড়ানো আত্মীয় স্বজনদের ঘেরাও করে যার কাছে যা আছে, সবকিছু দেবার নিদের্শ দেয় ডাকাতরা। নতুবা সবাইকে অস্ত্র দিয়ে কোপানোর দেয়। এসময় মৃতের শ্যালক বাবু ও শালিকা মিলি (৫২) এগিয়ে আসলে অস্ত্রধারীরা মিলির গলার সোনার চেইন খুলে নেয়। ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সবাই। তৎক্ষণা ঘটনাস্থলে সদলবলে হাজির হন দর্শনা পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গাইন। পুলিশের উপস্থিতি পের পেয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। দর্শনা পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গাইন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরন শোনেন এবং বলেন কিছুক্ষণ আগে এক ড্রাইভারের নিকট থেকে এই গ্রুপটি টাকা ছিনতাই করেছে, এদের খুঁজছি।
এ বিষয়ে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনর্চাজ শোনিত কুমার গায়েন বলেন, পুলিশের উপস্থিতির কারণে বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে ওরা/এ্যাম্বুলেন্সের যাত্রীরা বেঁচে গেছে। ছিনতাইকারীদের হাতে বটি ছিলো ঐ বটি দিয়ে কোপ দিতে গেলে পুলিশ চিৎকার দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। তবে লুটের কোন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে “স” মিল এবং ফুড গোডাউনের দিকে চলে গেলেও পুলিশ তাদের ধরতে পারেনি। পরে ফিরে এসে ইন্সপেক্টর শোনিত তাদের শান্তনা দিয়ে বলেন- আপনারা বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছেন, কারন আমরা সময়মত এসে পড়েছিলাম। এ ঘটনা আর কাউকে বলার দরকার নেই।
এঘটনার পরে রাত ৪টার দিকে লাশ নিয়ে ছোটবলদিয়া যাবার জন্যে পুলিশের নিরাপত্তা চেয়েও তারা তা পায়নি মৃতের পরিবার। গতকাল সকালেই ঘটনাটি দর্শনার বিভন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং অমানবিক এই ঘটনায় দারুন সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
দর্শনার মতো গুরুত্বপূর্ন এবং ছোট শহরের এ ধরনের ঘটনা আতংকেরও সৃষ্টি করেছে। কারন এখান থেকে প্রতিদিন রাত আড়াইটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক কোচ ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। আর সারারাত যাত্রীবাহী আসা-যাওয়া নিত্ত নৈমত্তিক ঘটনা। এতে রাতে চলাচলকারি যাত্রীদের মধ্যে নতুন করে পুরাতন আতংক দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি জানার জন্য গতকাল মৃতের শ্যালক ছোটবলদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম মুকুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন কিছু বলতে বিব্রতবোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানায়- বিষয়টি নিয়ে কাউকে উক্ত শিক্ষক কাউকে কিছু জানিয়েছে কিনা জানতে পুলিশের একজন কর্মকর্তা তার কাছে মোবাইলে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
এদিকে, গতকাল যশোর সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ছোটবলদিয়া গ্রামে এসে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মরহুম আবুল কালাম আজাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দর্শনায় গভীর রাতে লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতি!

আপলোড টাইম : ০৫:৪০:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

দর্শনা অফিস: চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। চোরদের প্রতি এ প্রবাদ তাকলেও এখন বলতেই হয় ডাকাতে না শোনে মৃত্যু বা শোকের কাহিনী। একটি লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতি করে প্রমান করেছে ডাকাতরা মানুষ বা লাশ বোঝে না! বোঝে লুটতরাজ করতে। আর তা সেটা যেখানে যে পরিবেশেই হোক না কেন। এমনি একটি চাঞ্চল্যকর লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে দর্শনা পৌর শহরে মৃতের বাড়ীর সামনেই ওই মৃতের মরদেহ নিয়ে দাড়ীয়ে থাকা গাড়ীতে। এঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দায়িত্ব অবহেলার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যখন লাশবাহী গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা চলছিল তখন তার অদূরেই একদল পুলিশ অবস্থান করছিলো। কিন্তু ডাকাতদের ধরতে পারেনি। ভুক্তভোগীদের কথা অনুযায়ী পুলিশের উপস্থিতিতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পুলিশ দাবি করছে এটা ডাকাতি নয় ছিনতাইয়ের ঘটনা। পুলিশ আরো বলছে, এই ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেছে । গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দর্শনা পৌর শহরের আজিমপুর ফুড গোডাউনের পিছনের নতুনপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবুল কালাম আজাদ (৭০) গত এক সপ্তাহ আগে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১ টায় মারা যান। ওইদিনই রাত সাড়ে ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে দর্শনা ফুড গোডাউনের পিছনে তার বাড়ীতে এসে লাশ পৌঁছায়। লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ী দামুড়হুদা উপজেলার ছোটবলদিয়া গ্রামে যাবার জন্য বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরাসহ কিছু প্রতিবেশী দাফনকার্য়ে শরিক হওয়ার উদ্যোশে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় ৪/৫ জনের একটি দুষ্কৃতিকারীদল হাতে চাপাতি ও বটি নিয়ে হামলা চালায়। লাশবাহী মাইক্রোবাসের পাশে দাড়ানো আত্মীয় স্বজনদের ঘেরাও করে যার কাছে যা আছে, সবকিছু দেবার নিদের্শ দেয় ডাকাতরা। নতুবা সবাইকে অস্ত্র দিয়ে কোপানোর দেয়। এসময় মৃতের শ্যালক বাবু ও শালিকা মিলি (৫২) এগিয়ে আসলে অস্ত্রধারীরা মিলির গলার সোনার চেইন খুলে নেয়। ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সবাই। তৎক্ষণা ঘটনাস্থলে সদলবলে হাজির হন দর্শনা পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গাইন। পুলিশের উপস্থিতি পের পেয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। দর্শনা পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গাইন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরন শোনেন এবং বলেন কিছুক্ষণ আগে এক ড্রাইভারের নিকট থেকে এই গ্রুপটি টাকা ছিনতাই করেছে, এদের খুঁজছি।
এ বিষয়ে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনর্চাজ শোনিত কুমার গায়েন বলেন, পুলিশের উপস্থিতির কারণে বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে ওরা/এ্যাম্বুলেন্সের যাত্রীরা বেঁচে গেছে। ছিনতাইকারীদের হাতে বটি ছিলো ঐ বটি দিয়ে কোপ দিতে গেলে পুলিশ চিৎকার দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। তবে লুটের কোন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে “স” মিল এবং ফুড গোডাউনের দিকে চলে গেলেও পুলিশ তাদের ধরতে পারেনি। পরে ফিরে এসে ইন্সপেক্টর শোনিত তাদের শান্তনা দিয়ে বলেন- আপনারা বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছেন, কারন আমরা সময়মত এসে পড়েছিলাম। এ ঘটনা আর কাউকে বলার দরকার নেই।
এঘটনার পরে রাত ৪টার দিকে লাশ নিয়ে ছোটবলদিয়া যাবার জন্যে পুলিশের নিরাপত্তা চেয়েও তারা তা পায়নি মৃতের পরিবার। গতকাল সকালেই ঘটনাটি দর্শনার বিভন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং অমানবিক এই ঘটনায় দারুন সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
দর্শনার মতো গুরুত্বপূর্ন এবং ছোট শহরের এ ধরনের ঘটনা আতংকেরও সৃষ্টি করেছে। কারন এখান থেকে প্রতিদিন রাত আড়াইটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক কোচ ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। আর সারারাত যাত্রীবাহী আসা-যাওয়া নিত্ত নৈমত্তিক ঘটনা। এতে রাতে চলাচলকারি যাত্রীদের মধ্যে নতুন করে পুরাতন আতংক দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি জানার জন্য গতকাল মৃতের শ্যালক ছোটবলদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম মুকুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন কিছু বলতে বিব্রতবোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানায়- বিষয়টি নিয়ে কাউকে উক্ত শিক্ষক কাউকে কিছু জানিয়েছে কিনা জানতে পুলিশের একজন কর্মকর্তা তার কাছে মোবাইলে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
এদিকে, গতকাল যশোর সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ছোটবলদিয়া গ্রামে এসে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মরহুম আবুল কালাম আজাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।