ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯
  • / ৩১৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি
ফেরদৌস ওয়াহিদ:
দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। আর মাত্র চারদিন পরই বাংলা বছরের দিনপঞ্জিকায় যুক্ত হবে আরও একটি নতুন বছর। পুরনো বছরের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। সর্বজনীন এই উৎসব ঘিরে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সকল বিভাগে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যেয়ে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতিতে সেখানকার শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। বাংলার নতুন বর্ষকে বরণ উৎসবের আর চারদিন বাকি। তবে কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ভেতরে ঢুকলে বাংলা নতুন বছর আসতে যে আরও চারদিন বাকি আছে সেটা বোঝার উপায় নেই। তবে কলেজের শুধু ইসলামের ইতিহাস বিভাগ নয়, অধিকাংশ বিভাগেই চলছে নিজ নিজ উদ্যোগে বর্ষবরণ প্রস্তুতি।
বরাবরের মতো এবারও বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টায় চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ (চাঁদমারী মাঠ) থেকে শুরু হবে।
চলতি মাসের শুরু থেকে চলতে থাকা এই প্রস্তুতিযজ্ঞ এখন প্রায় শেষের দিকে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে হাতপাখা, লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে পালকি, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনসহ হরেক রঙের বিভিন্ন আইটেম তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে সবাই। শিক্ষার্থীরা মিলে আঁকছে নানা রকম ছবিও। এ সব কাজে ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ আর আবেগের যেন কমতি নেই কারও মাঝে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাংলা বর্ষবরণ আমাদের প্রাণের উৎসব, এটি কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের বা গোষ্ঠীর উৎসব নয়। কিন্তু যারা একে একটি ধর্মের উৎসব বলে এই উৎসবের সর্বজনীনতা নষ্ট করে তাদের সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি।’
বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, পহেলা বৈশাখে কেমন মজা হবে তা এখনো বুঝতে পারছি না। কেননা এর আগে এভাবে নববর্ষ উদযাপন করার অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে বড় ভাই, আপু ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোই লাগছে।’
সার্বিক আয়োজন সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সবসময় নিজস্ব সংস্কৃতির ধারায় চলি। কেননা বাঙালী হিসেবে আমাদের রয়েছে গর্ব করার মত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। সে ধারাবাহিকতায় আমরা সর্বদা ব্যতিক্রম আয়োজন করার চেষ্টা করি। সব আয়োজন আশাকরি সবার মনে স্থান পাবে।
নিজেদের আয়োজন সম্পর্কে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সেখ মো. আব্দুল জব্বার সকলকে আয়োজন উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি নতুন সূর্য ভালোকিছু উপহার দিতে উদীত হয়। ১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম প্রহরে উদীত সূর্য দেশের চলমান যাবতীয় অন্ধকারের ছায়াকে দূরে ঠেলে এনে দিবে আলোকোজ্জ্বল দিন। সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আর হাসি মজা নিয়ে শুরু হবে নতুন বছর। এ কামনায় আমরা পালন করব নতুন বাংলাবর্ষকে। গ্রীষ্মের তাপদাহে যেন পুড়ে যায় সকল অশুভ, হানাহানি। সকলে মেতে ওঠে হাসি, গান, নাচ আর আড্ডায় সে প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্ষবরণের আগের দিন শনিবার বিকাল ৪টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের আয়োজনে আয়োজনে কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান চৈত্রসংক্রান্তি। এ আয়োজনে থাকবে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগীতা ও বিভিন্ন সড়কে আলপনা অংকন। এছাড়াও ১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে ডিসি সাহিত্য মঞ্চে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবশেনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সকাল সাড়ে ৭টায় চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ (চাঁদমারী মাঠ) থেকে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্ত্বরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরষ্কার বিতরণ এবং বেলা ১১টায় জেলা শিশু একাডেমী কর্তৃক শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরে বিকাল ৫টায় চাঁদমারী মাঠে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে। মেলা চলাকালে সংগীত, নৃত্য ও নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে তরুণেরা এ মঙ্গল শোভাযাত্রার রীতিটি শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণী প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করেছিল। সেই থেকে আজও দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় প্রতিটি বাঙালি এমনকি বাংলা অনুরাগী কিছু বিদেশীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত পালন করে আসছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ

আপলোড টাইম : ১১:২৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি
ফেরদৌস ওয়াহিদ:
দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। আর মাত্র চারদিন পরই বাংলা বছরের দিনপঞ্জিকায় যুক্ত হবে আরও একটি নতুন বছর। পুরনো বছরের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। সর্বজনীন এই উৎসব ঘিরে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সকল বিভাগে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যেয়ে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতিতে সেখানকার শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। বাংলার নতুন বর্ষকে বরণ উৎসবের আর চারদিন বাকি। তবে কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ভেতরে ঢুকলে বাংলা নতুন বছর আসতে যে আরও চারদিন বাকি আছে সেটা বোঝার উপায় নেই। তবে কলেজের শুধু ইসলামের ইতিহাস বিভাগ নয়, অধিকাংশ বিভাগেই চলছে নিজ নিজ উদ্যোগে বর্ষবরণ প্রস্তুতি।
বরাবরের মতো এবারও বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টায় চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ (চাঁদমারী মাঠ) থেকে শুরু হবে।
চলতি মাসের শুরু থেকে চলতে থাকা এই প্রস্তুতিযজ্ঞ এখন প্রায় শেষের দিকে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে হাতপাখা, লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে পালকি, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনসহ হরেক রঙের বিভিন্ন আইটেম তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে সবাই। শিক্ষার্থীরা মিলে আঁকছে নানা রকম ছবিও। এ সব কাজে ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ আর আবেগের যেন কমতি নেই কারও মাঝে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাংলা বর্ষবরণ আমাদের প্রাণের উৎসব, এটি কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের বা গোষ্ঠীর উৎসব নয়। কিন্তু যারা একে একটি ধর্মের উৎসব বলে এই উৎসবের সর্বজনীনতা নষ্ট করে তাদের সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি।’
বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, পহেলা বৈশাখে কেমন মজা হবে তা এখনো বুঝতে পারছি না। কেননা এর আগে এভাবে নববর্ষ উদযাপন করার অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে বড় ভাই, আপু ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোই লাগছে।’
সার্বিক আয়োজন সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সবসময় নিজস্ব সংস্কৃতির ধারায় চলি। কেননা বাঙালী হিসেবে আমাদের রয়েছে গর্ব করার মত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। সে ধারাবাহিকতায় আমরা সর্বদা ব্যতিক্রম আয়োজন করার চেষ্টা করি। সব আয়োজন আশাকরি সবার মনে স্থান পাবে।
নিজেদের আয়োজন সম্পর্কে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সেখ মো. আব্দুল জব্বার সকলকে আয়োজন উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি নতুন সূর্য ভালোকিছু উপহার দিতে উদীত হয়। ১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম প্রহরে উদীত সূর্য দেশের চলমান যাবতীয় অন্ধকারের ছায়াকে দূরে ঠেলে এনে দিবে আলোকোজ্জ্বল দিন। সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আর হাসি মজা নিয়ে শুরু হবে নতুন বছর। এ কামনায় আমরা পালন করব নতুন বাংলাবর্ষকে। গ্রীষ্মের তাপদাহে যেন পুড়ে যায় সকল অশুভ, হানাহানি। সকলে মেতে ওঠে হাসি, গান, নাচ আর আড্ডায় সে প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্ষবরণের আগের দিন শনিবার বিকাল ৪টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের আয়োজনে আয়োজনে কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান চৈত্রসংক্রান্তি। এ আয়োজনে থাকবে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগীতা ও বিভিন্ন সড়কে আলপনা অংকন। এছাড়াও ১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে ডিসি সাহিত্য মঞ্চে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবশেনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সকাল সাড়ে ৭টায় চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ (চাঁদমারী মাঠ) থেকে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্ত্বরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরষ্কার বিতরণ এবং বেলা ১১টায় জেলা শিশু একাডেমী কর্তৃক শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরে বিকাল ৫টায় চাঁদমারী মাঠে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে। মেলা চলাকালে সংগীত, নৃত্য ও নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে তরুণেরা এ মঙ্গল শোভাযাত্রার রীতিটি শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণী প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করেছিল। সেই থেকে আজও দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় প্রতিটি বাঙালি এমনকি বাংলা অনুরাগী কিছু বিদেশীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত পালন করে আসছেন।