ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দখল-দূষণে কমেছে পানি নিষ্কাশনের জলাশয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৩২২ বার পড়া হয়েছে

টানা বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা শহরে জলাবদ্ধতা, নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা
এস এম শাফায়েত:
থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়ির সামনে জমে রয়েছে পানি। এতে করে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে জনসাধারণকে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে চুয়াডাঙ্গা শহরসহ আশপাশ এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হয়। শহরে জনসংখ্যা ও বসবাসের ঘনত্বের তুলনায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার অলিগলিগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকে পানির নিচে। এতে নষ্ট হচ্ছে রাস্তার পিচ-ঢালাই। সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কে গর্তের ফলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও পথচারীদের।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। জলাবদ্ধতায় কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। সেই সঙ্গে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের জীবাণু। যা শহরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বড় বাজার, মুক্তিপাড়া, মাঝেরপাড়া, একাডেমি মোড়, রেলপাড়া, রেলবাজার, ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়া, পুরাতন স্টেডিয়াম, ফার্মপাড়া, শান্তিপাড়া, বনানিপাড়া, রেলস্টেশন, মাছপট্টি, জান্নাতুল মওলা কবরস্থান, টিএন্ডটি মোড়, সরকারি কলেজ, কাঠপট্টি, সিনেমাহলপাড়াসহ পৌরসভার প্রায় সব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়ক, চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়ক, কোর্টমোড়-রেলস্টেশন সড়ক, কবরী রোড, একাডেমি মোড়-আলমডাঙ্গা সড়ক, ফেরিঘাট রোডসহ পৌর শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে পানি জমে চলাচলে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে জমে থাকা পানির কারণে সড়কগুলোতে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়ে তা চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ হিসেবে প্রবীণ নাগরিকেরা বলছেন, বৃষ্টির পানি ধারণের আধার পুকুর, নদী, জলাশয় দখল-ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শহরের কোলঘেঁষে বয়ে চলা মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা নদীসহ ছোট-বড় জলাশয়গুলো দখল-দূষণ ও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা জলাবদ্ধতার মূল কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলাশয় ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা নদীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বর্তমানে ¯্রােতধারা কমে যাওয়ায় পলি জমে নদীগুলো হারিয়েছে গভীরতা। যথাসময়ে খনন না করায় হারিয়েছে নাব্যতাও। ফলে অল্প বৃষ্টিপাতে শহরের বিভিন্ন একালায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
ড্রেনগুলোর অবস্থা জানতে পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান কাওছারের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘বর্তমানে শহরের পুলিশ পার্ক লেন, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার, হাটকালুগঞ্জ, বড় বাজার ও ইসলামপাড়া এলাকার ড্রেন দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে পানি ফেলা হয়, যা পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়াও পুরাতন ড্রেনগুলো পলিমাটিতে ভরাট হয়ে রয়েছে। পুরাতনের সঙ্গে নতুন ড্রেনগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। কারণ ড্রেনগুলো শুধু পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হলেও তাতে অবৈধভাবে ড্রেন কেটে পাইপ দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার করছেন নাগরিকেরা। সেই সঙ্গে ড্রেনের মধ্যে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই।’
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণকে নীতিমালা অনুযায়ী বাসা-বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। সকলে মিলে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব। পূর্বের ড্রেনগুলো পরিকল্পিত ও টেকসই না হওয়ায় সবগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে। বেশকিছু প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ধারে এবং পাড়া-মহল্লায় আরসিসি হাইড্রেন, ব্রিক ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কিছুর কাজ চলছে। তবে জনসংখ্যা ও বসতি বাড়ার কারণে আরও ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দখল-দূষণে কমেছে পানি নিষ্কাশনের জলাশয়

আপলোড টাইম : ১১:০০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

টানা বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা শহরে জলাবদ্ধতা, নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা
এস এম শাফায়েত:
থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়ির সামনে জমে রয়েছে পানি। এতে করে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে জনসাধারণকে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে চুয়াডাঙ্গা শহরসহ আশপাশ এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হয়। শহরে জনসংখ্যা ও বসবাসের ঘনত্বের তুলনায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার অলিগলিগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকে পানির নিচে। এতে নষ্ট হচ্ছে রাস্তার পিচ-ঢালাই। সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কে গর্তের ফলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও পথচারীদের।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। জলাবদ্ধতায় কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। সেই সঙ্গে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের জীবাণু। যা শহরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বড় বাজার, মুক্তিপাড়া, মাঝেরপাড়া, একাডেমি মোড়, রেলপাড়া, রেলবাজার, ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়া, পুরাতন স্টেডিয়াম, ফার্মপাড়া, শান্তিপাড়া, বনানিপাড়া, রেলস্টেশন, মাছপট্টি, জান্নাতুল মওলা কবরস্থান, টিএন্ডটি মোড়, সরকারি কলেজ, কাঠপট্টি, সিনেমাহলপাড়াসহ পৌরসভার প্রায় সব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়ক, চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়ক, কোর্টমোড়-রেলস্টেশন সড়ক, কবরী রোড, একাডেমি মোড়-আলমডাঙ্গা সড়ক, ফেরিঘাট রোডসহ পৌর শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে পানি জমে চলাচলে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে জমে থাকা পানির কারণে সড়কগুলোতে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়ে তা চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ হিসেবে প্রবীণ নাগরিকেরা বলছেন, বৃষ্টির পানি ধারণের আধার পুকুর, নদী, জলাশয় দখল-ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শহরের কোলঘেঁষে বয়ে চলা মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা নদীসহ ছোট-বড় জলাশয়গুলো দখল-দূষণ ও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা জলাবদ্ধতার মূল কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলাশয় ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা নদীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বর্তমানে ¯্রােতধারা কমে যাওয়ায় পলি জমে নদীগুলো হারিয়েছে গভীরতা। যথাসময়ে খনন না করায় হারিয়েছে নাব্যতাও। ফলে অল্প বৃষ্টিপাতে শহরের বিভিন্ন একালায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
ড্রেনগুলোর অবস্থা জানতে পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান কাওছারের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘বর্তমানে শহরের পুলিশ পার্ক লেন, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার, হাটকালুগঞ্জ, বড় বাজার ও ইসলামপাড়া এলাকার ড্রেন দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে পানি ফেলা হয়, যা পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়াও পুরাতন ড্রেনগুলো পলিমাটিতে ভরাট হয়ে রয়েছে। পুরাতনের সঙ্গে নতুন ড্রেনগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। কারণ ড্রেনগুলো শুধু পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হলেও তাতে অবৈধভাবে ড্রেন কেটে পাইপ দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার করছেন নাগরিকেরা। সেই সঙ্গে ড্রেনের মধ্যে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই।’
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণকে নীতিমালা অনুযায়ী বাসা-বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। সকলে মিলে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব। পূর্বের ড্রেনগুলো পরিকল্পিত ও টেকসই না হওয়ায় সবগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে। বেশকিছু প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ধারে এবং পাড়া-মহল্লায় আরসিসি হাইড্রেন, ব্রিক ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কিছুর কাজ চলছে। তবে জনসংখ্যা ও বসতি বাড়ার কারণে আরও ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন।