ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

থেমে গেছে শ্রমশক্তি পাঠানো

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

টালমাটাল সৌদি আরবের বাজার, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতসহ অনেক দেশেই বন্ধ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বিদেশে শ্রমশক্তি পাঠানো প্রায় থমকে গেছে। মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতে বাজার বন্ধ। সৌদি আরবের শ্রমবাজারে ধীরগতি। বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারের বাজার বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রায় থমকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজার খোলা নিয়ে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগও নেই জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার। তারা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে দলাদলিতে। স্বার্থসিদ্ধির জন্য একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ করছেন প্রকাশ্যেই। কিন্তু শ্রমবাজারের জন্য উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না জনশক্তি রপ্তানিকারকদের।
জনশক্তি বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে আস্থার প্রতীক ছিল উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা-জিসিসিভুক্ত ছয়টি দেশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিসা জটিলতা, কূটনৈতিক ব্যর্থতাসহ নানা প্রতিকূলতায় ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে এ শ্রমবাজার। ফলে প্রতি বছর কমছে জনশক্তি রপ্তানি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণের গতি প্রায় থমকে গেছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান থেকে শ্রমিক নেওয়ার কোটা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধবিগ্রহের কারণে সৌদি আরবে এমনিতেই শ্রমিক নেওয়ার পরিমাণ কমেছে। সেখানে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু নির্যাতনের অভিযোগও কম নয়। বাংলাদেশের অন্য শ্রমবাজার আরব আমিরাতের বাজার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এ ছাড়া সেখানে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না কাউকেই। একসময় যে কুয়েত ছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাজার, সে বাজার এখন পুরোপুরি বন্ধ। লিবিয়ার দুয়ারও বন্ধ। ইরাকও প্রায় বন্ধের মতোই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর দুয়ার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এখন কার্যত বন্ধ।
একমাত্র মালয়েশিয়ার বাজার ছিল চাঙ্গা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ রাখা হয়েছে শ্রমিক নেওয়া। বড় শ্রমবাজারগুলো বন্ধ থাকার পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের বিষয়েও তেমন কোনো উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। শ্রমবাজারের এসব সংকটের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নির্যাতিত-নিপীড়িত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কর্মীরা প্রায়ই অবৈধ হয়ে পড়ছেন। ট্যুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশিদের বিদেশে গিয়ে অবস্থানের ঘটনাও বাড়ছে। বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণের কথা বলা হলেও তা মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। জানা যায়, মালয়েশিয়া সরকার তাদের নির্ধারিত শর্ত মেনেই শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। মালয়েশিয়া তাদের নির্ধারিত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে। বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে তারা এ কথা জানিয়েছেও। অবশ্য মন্ত্রণালয়ও শুধু চায় নির্বিঘেœ কোনো ধরনের প্রতারণা ছাড়া নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয়ে নিয়ম মেনে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো গেলেও কোন পদ্ধতিতে কারা শ্রমিক পাঠাচ্ছে তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাথাব্যথা নেই। চলতি সেপ্টেম্বরেই শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনার জন্য ফের মালয়েশিয়া যাচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আশা করি সেপ্টেম্বরের এই সফরে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর পর বাজার চালুর ঘোষণা আসবে। মেডিকেল সেন্টার বা ট্রেনিং সেন্টার যে ইস্যুতেই আমরা কথা বলি না কেন আসল কথা হলো, জনশক্তি যাবে মালয়েশিয়ায়। তাই কী ধরনের জনশক্তি কোন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে তার নির্ধারণ অটোমেটিকভাবেই যে দেশ নেবে তাদের অধিকার।’ মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি সিন্ডিকেট করে বলে জনশক্তি পাঠাতে সরকার নির্ধারিত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি লাগবে না, তাহলে আমি বলব সেটা ভালো সিন্ডিকেট। কারণ, আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ ও শ্রমিকস্বার্থ। তবে এর বাইরে গিয়ে অতিলোভী কোনো সিন্ডিকেটকেই এ ক্ষেত্রে স্থান দেওয়া হবে না।’ জনশক্তি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো বন্ধ থাকা ও সংকুচিত হয়ে আসা বাজারগুলো চালুর ব্যবস্থা নেওয়া। যদি মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় জনশক্তি পাঠানো সম্ভব হয় এবং তারা যদি সেখানে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে কেউ বিদেশ যেতে উৎসাহী হবে না। সেই সঙ্গে বন্ধ হবে স্টুডেন্ট বা ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশে অবস্থান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য জাপানের শ্রমবাজারের দ্বার খুলে যাওয়াকে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন শ্রমশক্তি রপ্তানি-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জাপানের বাজার যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় না পড়ে সে ব্যাপারে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশের বাজার ধরে রাখতে শ্রমিক পাঠানোর আগে ভাষা শিক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতি রাখার কোনো বিকল্প নেই।
শ্রমিকস্বার্থ নয়, দলাদলিতেই ব্যস্ত বায়রা :
জনশক্তি রপ্তানির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকার কথা জনশক্তি প্রেরক এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার। কিন্তু জনশক্তির রপ্তানি পরিস্থিতির মানোন্নয়নে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখতে পারছে না সংগঠনটি। ব্যক্তিস্বার্থ ও দলাদলি বায়রার ভিতরে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শ্রমবাজারের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলায় বহিষ্কার করা হয়েছে কার্যকরী কমিটির তিনজনকে। গতকাল বায়রা আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলাদলির বিষয়টি আরও এক দফায় প্রকাশ্যে এসেছে। মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের শ্রমবাজার নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন বায়রার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির দুই সহসভাপতি, অর্থসম্পাদকসহ প্রায় ডজনখানেক নেতাকে সেখানে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে বায়রার সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম ফিরোজ গতকাল বলেন, ‘এত দিন শ্রমবাজার ও বায়রার কথা চিন্তা করে আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কোনো ধরনের কর্মকা আমরা মেনে নেব না।’ তিনি অভিযোগ করেন, বায়রার সাধারণ সদস্যদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারেরর মতো অগণতান্ত্রিক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরেক সহসভাপতি মনসুর আহমেদ কালাম বলেন, ‘বায়রার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কার্যনির্বাহী কমিটিকে পাশ কাটিয়ে কাজ করছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তারা যেসব কাজ করছেন আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’
অবশ্য ট্রেডবডি বায়রার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বায়রার নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কখনো কোনো ধরনের জনশক্তি রপ্তানি করেছেন কিনা তা জানেন না সংগঠনেরই কোনো সদস্য। এর আগে দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দেওয়া আরেক সভাপতি জনশক্তি রপ্তানি করলেও বিদেশে গিয়ে তিনি পড়তেন ভাষা সমস্যায়। ফলে বিদেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাকে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। নিতে হয়েছে দোভাষী। আর খোলামেলা আলাপ-আলোচনা ছাড়া তেমন কার্যকর পদক্ষেপ যথেষ্ট কঠিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

থেমে গেছে শ্রমশক্তি পাঠানো

আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

টালমাটাল সৌদি আরবের বাজার, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতসহ অনেক দেশেই বন্ধ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বিদেশে শ্রমশক্তি পাঠানো প্রায় থমকে গেছে। মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতে বাজার বন্ধ। সৌদি আরবের শ্রমবাজারে ধীরগতি। বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারের বাজার বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রায় থমকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজার খোলা নিয়ে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগও নেই জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার। তারা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে দলাদলিতে। স্বার্থসিদ্ধির জন্য একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ করছেন প্রকাশ্যেই। কিন্তু শ্রমবাজারের জন্য উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না জনশক্তি রপ্তানিকারকদের।
জনশক্তি বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে আস্থার প্রতীক ছিল উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা-জিসিসিভুক্ত ছয়টি দেশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিসা জটিলতা, কূটনৈতিক ব্যর্থতাসহ নানা প্রতিকূলতায় ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে এ শ্রমবাজার। ফলে প্রতি বছর কমছে জনশক্তি রপ্তানি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণের গতি প্রায় থমকে গেছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান থেকে শ্রমিক নেওয়ার কোটা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধবিগ্রহের কারণে সৌদি আরবে এমনিতেই শ্রমিক নেওয়ার পরিমাণ কমেছে। সেখানে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু নির্যাতনের অভিযোগও কম নয়। বাংলাদেশের অন্য শ্রমবাজার আরব আমিরাতের বাজার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এ ছাড়া সেখানে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না কাউকেই। একসময় যে কুয়েত ছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাজার, সে বাজার এখন পুরোপুরি বন্ধ। লিবিয়ার দুয়ারও বন্ধ। ইরাকও প্রায় বন্ধের মতোই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর দুয়ার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এখন কার্যত বন্ধ।
একমাত্র মালয়েশিয়ার বাজার ছিল চাঙ্গা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ রাখা হয়েছে শ্রমিক নেওয়া। বড় শ্রমবাজারগুলো বন্ধ থাকার পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের বিষয়েও তেমন কোনো উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। শ্রমবাজারের এসব সংকটের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নির্যাতিত-নিপীড়িত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কর্মীরা প্রায়ই অবৈধ হয়ে পড়ছেন। ট্যুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশিদের বিদেশে গিয়ে অবস্থানের ঘটনাও বাড়ছে। বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণের কথা বলা হলেও তা মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। জানা যায়, মালয়েশিয়া সরকার তাদের নির্ধারিত শর্ত মেনেই শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। মালয়েশিয়া তাদের নির্ধারিত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে। বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে তারা এ কথা জানিয়েছেও। অবশ্য মন্ত্রণালয়ও শুধু চায় নির্বিঘেœ কোনো ধরনের প্রতারণা ছাড়া নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয়ে নিয়ম মেনে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো গেলেও কোন পদ্ধতিতে কারা শ্রমিক পাঠাচ্ছে তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাথাব্যথা নেই। চলতি সেপ্টেম্বরেই শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনার জন্য ফের মালয়েশিয়া যাচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আশা করি সেপ্টেম্বরের এই সফরে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর পর বাজার চালুর ঘোষণা আসবে। মেডিকেল সেন্টার বা ট্রেনিং সেন্টার যে ইস্যুতেই আমরা কথা বলি না কেন আসল কথা হলো, জনশক্তি যাবে মালয়েশিয়ায়। তাই কী ধরনের জনশক্তি কোন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে তার নির্ধারণ অটোমেটিকভাবেই যে দেশ নেবে তাদের অধিকার।’ মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি সিন্ডিকেট করে বলে জনশক্তি পাঠাতে সরকার নির্ধারিত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি লাগবে না, তাহলে আমি বলব সেটা ভালো সিন্ডিকেট। কারণ, আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ ও শ্রমিকস্বার্থ। তবে এর বাইরে গিয়ে অতিলোভী কোনো সিন্ডিকেটকেই এ ক্ষেত্রে স্থান দেওয়া হবে না।’ জনশক্তি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো বন্ধ থাকা ও সংকুচিত হয়ে আসা বাজারগুলো চালুর ব্যবস্থা নেওয়া। যদি মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় জনশক্তি পাঠানো সম্ভব হয় এবং তারা যদি সেখানে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে কেউ বিদেশ যেতে উৎসাহী হবে না। সেই সঙ্গে বন্ধ হবে স্টুডেন্ট বা ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশে অবস্থান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য জাপানের শ্রমবাজারের দ্বার খুলে যাওয়াকে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন শ্রমশক্তি রপ্তানি-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জাপানের বাজার যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় না পড়ে সে ব্যাপারে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশের বাজার ধরে রাখতে শ্রমিক পাঠানোর আগে ভাষা শিক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতি রাখার কোনো বিকল্প নেই।
শ্রমিকস্বার্থ নয়, দলাদলিতেই ব্যস্ত বায়রা :
জনশক্তি রপ্তানির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকার কথা জনশক্তি প্রেরক এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার। কিন্তু জনশক্তির রপ্তানি পরিস্থিতির মানোন্নয়নে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখতে পারছে না সংগঠনটি। ব্যক্তিস্বার্থ ও দলাদলি বায়রার ভিতরে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শ্রমবাজারের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলায় বহিষ্কার করা হয়েছে কার্যকরী কমিটির তিনজনকে। গতকাল বায়রা আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলাদলির বিষয়টি আরও এক দফায় প্রকাশ্যে এসেছে। মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের শ্রমবাজার নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন বায়রার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির দুই সহসভাপতি, অর্থসম্পাদকসহ প্রায় ডজনখানেক নেতাকে সেখানে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে বায়রার সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম ফিরোজ গতকাল বলেন, ‘এত দিন শ্রমবাজার ও বায়রার কথা চিন্তা করে আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কোনো ধরনের কর্মকা আমরা মেনে নেব না।’ তিনি অভিযোগ করেন, বায়রার সাধারণ সদস্যদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারেরর মতো অগণতান্ত্রিক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরেক সহসভাপতি মনসুর আহমেদ কালাম বলেন, ‘বায়রার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কার্যনির্বাহী কমিটিকে পাশ কাটিয়ে কাজ করছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তারা যেসব কাজ করছেন আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’
অবশ্য ট্রেডবডি বায়রার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বায়রার নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কখনো কোনো ধরনের জনশক্তি রপ্তানি করেছেন কিনা তা জানেন না সংগঠনেরই কোনো সদস্য। এর আগে দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দেওয়া আরেক সভাপতি জনশক্তি রপ্তানি করলেও বিদেশে গিয়ে তিনি পড়তেন ভাষা সমস্যায়। ফলে বিদেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাকে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। নিতে হয়েছে দোভাষী। আর খোলামেলা আলাপ-আলোচনা ছাড়া তেমন কার্যকর পদক্ষেপ যথেষ্ট কঠিন।