ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তিনদিনে শিশুসহ ২৮ জন আহত : এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:০০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মে ২০১৮
  • / ৬২৬ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুরে অদৃশ্য বিষধর সাপের আক্রমন : ওঁঝার ঝাঁড়ফুক
অঙ্কন মল্লিক: আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুরে অদৃশ্য বিষধর সাপের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রামবাসী। অদৃশ্য জ্বীন সাপের রুপ ধরে দংশন করছে বলে দাবি করছেন গ্রাম্য কবিরাজ। গত তিনদিনে ওই গ্রামের শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতীসহ প্রায় ২৮ জনকে সাপে দংশন করে আহত করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সাপে কেটে আহতরা হলো- বলেশ্বরপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার মহিবুল্লাহার মেয়ে মুক্তা (২৩), মৃত মওলার বক্সের ছেলে মোস্তাফা, দুখুর ছেলে রকিবুল, রবগুলের মেয়ে রুনা (১৮), শামসুলের স্ত্রী বিজরী (৩০), মেয়ে মিম (৮), জকিরের স্ত্রী জিনজিরা (২৭), ছেলে চন্দন (২৭), শহিদ মল্লিকের ছেলে আতিয়ার (২৫)মনোয়ারের ছেলে মামুন (২৪), শিরাজুলের ছেলে বায়োজিত (৮) ও সাজিত (১৮), মৃত জিনারুলের স্ত্রী সাহানাজ (২৮), , মোস্তাফার ছেলে মকলেচ (২৪) মামুনের স্ত্রী মিনি (১৮), আবু বাক্কার ছেলে দবির (২৭), মহিবুল্লাহের নাতনি রিনা (১০), দুখু মিয়ার মেয়ে রুমিয়া (১০), জালালের স্ত্রী নার্গিস, শহিদুল্লাহের মেয়ে রিপা (১০), জালালের স্ত্রী রোজিনা (২৮) ও ছেলে সুমন (১১), শিমুলের স্ত্রী রুপমনি, মেয়ে সামিয়া (১০) ও ছেলে তামিম (২)সহ এরকম ২৮ জনের মত মানুষকে কে সাপে দংশন করে।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার শহিদুল্লাহের মেয়ে রিপা (১০) বাড়ির সামনে খেলা করছিলো। হঠাৎ তার পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। সাপে কেটেছে সন্দেহে তার পরিবার তাকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। ঝাঁড়ফুক করে তার অবস্থার কোন উন্নতি না হলে পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই ওই গ্রামে একের পর এক মানুষকে সাপে দংশন করছে। ঘরে, মাঠে কিংবা রাস্তায় সর্বত্রই সাপে কাটছে। তবে সাপটি দেখতে কেমন বা কি সাপে কামড়াচ্ছে তা কেউই বলতে পারছেনা। ভুক্তভোগীরা জানায়, অদৃশ্য সাপে কামড় দেওয়ার পর পরই শুধু ঘুমঘুম লাগছে।
তারা আরো জানায়, গ্রামের জালালের স্ত্রী রোজিনার কাছে সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে হাতচালান দিয়ে শরীরে বিষ আছে কিনা তা সনাক্ত করছেন। গ্রামের আরেক কবিরাজ কবিরাজ মনোয়ারা খাতুন ঝাঁড়ফুক করে রোগিদের ভালো করে দিচ্ছে বলে জানায় গ্রামবাসী। উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কালু শেখের স্ত্রী বিশিষ্ট কবিরাজ সুফিয়া কামাল ওই গ্রামে উপস্থিত হয়ে হাতচালান দিয়ে জানান গ্রামে জ্বীন রুপি সাপ কামড়ে অতিষ্ট করে তুলেছে। এই সাপের হাত থেকে বাচঁেত যত দ্রুত সম্ভব সাপের ঝাপান খেলার আয়োজন করতে হবে। কবিরাজের পরামর্শে গত দুইদিন গ্রামে বাড়ি বাড়ি চাল তুলে ছিন্নি করা হয়েছে। এদিকে জ্বীন সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলেশ্বর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে।
সাপে কাটা রোগীর করণীয় সম্পর্কে জানতে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সাপে কামড়ানোর সময় সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন তা লক্ষ্য করতে হবে। সাপের বর্ণনা পরবর্তীতে ডাক্তারকে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনতে হবে। আশেপাশে মানুষজন না থাকলে শরীরের আক্রান্ত অংশ যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করে নিরাপদ স্থানে আসতে হবে। আক্রান্ত ব্যাক্তিকে শুইয়ে রাখতে হবে। তার বুকের নিচে কিছু একটা দিয়ে বুকটা উঁচু করে রাখতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা যাবেনা। আক্রান্ত অঙ্গে ঘড়ি, চুড়ি, নূপুরসহ কোন গহনা বা অন্য যে কোন আঁটোসাটো জামাকাপড় অথবা জুতা-মোজা থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। পরিস্কার ব্যান্ডেজ বা নরম সুতির কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থানটি ঢেকে দিতে হবে সেইসাথে অতিসত্ত্বর হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

তিনদিনে শিশুসহ ২৮ জন আহত : এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

আপলোড টাইম : ১২:০০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মে ২০১৮

আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুরে অদৃশ্য বিষধর সাপের আক্রমন : ওঁঝার ঝাঁড়ফুক
অঙ্কন মল্লিক: আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুরে অদৃশ্য বিষধর সাপের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রামবাসী। অদৃশ্য জ্বীন সাপের রুপ ধরে দংশন করছে বলে দাবি করছেন গ্রাম্য কবিরাজ। গত তিনদিনে ওই গ্রামের শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতীসহ প্রায় ২৮ জনকে সাপে দংশন করে আহত করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সাপে কেটে আহতরা হলো- বলেশ্বরপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার মহিবুল্লাহার মেয়ে মুক্তা (২৩), মৃত মওলার বক্সের ছেলে মোস্তাফা, দুখুর ছেলে রকিবুল, রবগুলের মেয়ে রুনা (১৮), শামসুলের স্ত্রী বিজরী (৩০), মেয়ে মিম (৮), জকিরের স্ত্রী জিনজিরা (২৭), ছেলে চন্দন (২৭), শহিদ মল্লিকের ছেলে আতিয়ার (২৫)মনোয়ারের ছেলে মামুন (২৪), শিরাজুলের ছেলে বায়োজিত (৮) ও সাজিত (১৮), মৃত জিনারুলের স্ত্রী সাহানাজ (২৮), , মোস্তাফার ছেলে মকলেচ (২৪) মামুনের স্ত্রী মিনি (১৮), আবু বাক্কার ছেলে দবির (২৭), মহিবুল্লাহের নাতনি রিনা (১০), দুখু মিয়ার মেয়ে রুমিয়া (১০), জালালের স্ত্রী নার্গিস, শহিদুল্লাহের মেয়ে রিপা (১০), জালালের স্ত্রী রোজিনা (২৮) ও ছেলে সুমন (১১), শিমুলের স্ত্রী রুপমনি, মেয়ে সামিয়া (১০) ও ছেলে তামিম (২)সহ এরকম ২৮ জনের মত মানুষকে কে সাপে দংশন করে।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার শহিদুল্লাহের মেয়ে রিপা (১০) বাড়ির সামনে খেলা করছিলো। হঠাৎ তার পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। সাপে কেটেছে সন্দেহে তার পরিবার তাকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। ঝাঁড়ফুক করে তার অবস্থার কোন উন্নতি না হলে পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই ওই গ্রামে একের পর এক মানুষকে সাপে দংশন করছে। ঘরে, মাঠে কিংবা রাস্তায় সর্বত্রই সাপে কাটছে। তবে সাপটি দেখতে কেমন বা কি সাপে কামড়াচ্ছে তা কেউই বলতে পারছেনা। ভুক্তভোগীরা জানায়, অদৃশ্য সাপে কামড় দেওয়ার পর পরই শুধু ঘুমঘুম লাগছে।
তারা আরো জানায়, গ্রামের জালালের স্ত্রী রোজিনার কাছে সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে হাতচালান দিয়ে শরীরে বিষ আছে কিনা তা সনাক্ত করছেন। গ্রামের আরেক কবিরাজ কবিরাজ মনোয়ারা খাতুন ঝাঁড়ফুক করে রোগিদের ভালো করে দিচ্ছে বলে জানায় গ্রামবাসী। উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কালু শেখের স্ত্রী বিশিষ্ট কবিরাজ সুফিয়া কামাল ওই গ্রামে উপস্থিত হয়ে হাতচালান দিয়ে জানান গ্রামে জ্বীন রুপি সাপ কামড়ে অতিষ্ট করে তুলেছে। এই সাপের হাত থেকে বাচঁেত যত দ্রুত সম্ভব সাপের ঝাপান খেলার আয়োজন করতে হবে। কবিরাজের পরামর্শে গত দুইদিন গ্রামে বাড়ি বাড়ি চাল তুলে ছিন্নি করা হয়েছে। এদিকে জ্বীন সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলেশ্বর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে।
সাপে কাটা রোগীর করণীয় সম্পর্কে জানতে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সাপে কামড়ানোর সময় সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন তা লক্ষ্য করতে হবে। সাপের বর্ণনা পরবর্তীতে ডাক্তারকে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনতে হবে। আশেপাশে মানুষজন না থাকলে শরীরের আক্রান্ত অংশ যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করে নিরাপদ স্থানে আসতে হবে। আক্রান্ত ব্যাক্তিকে শুইয়ে রাখতে হবে। তার বুকের নিচে কিছু একটা দিয়ে বুকটা উঁচু করে রাখতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা যাবেনা। আক্রান্ত অঙ্গে ঘড়ি, চুড়ি, নূপুরসহ কোন গহনা বা অন্য যে কোন আঁটোসাটো জামাকাপড় অথবা জুতা-মোজা থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। পরিস্কার ব্যান্ডেজ বা নরম সুতির কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থানটি ঢেকে দিতে হবে সেইসাথে অতিসত্ত্বর হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।