ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তিনদিনের আল্টিমেটাম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০১৯
  • / ২৪৭ বার পড়া হয়েছে

পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনড় বর্জনকারীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। জিএস-এজিএসসহ প্রায় সব পদে বিজয়ী হলেও ভিপি পদে পরাজয়কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ওই পদে পুননির্বাচনের দাবিতে দিনভর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা। অন্যদিকে ভিপি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাদে বাকি সব পদে পুননির্বাচনের দাবি তুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বামছাত্রজোট, ছাত্রদলসহ ও স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা। আজ বেলা ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। পাল্টাপাল্টি দাবি উত্থাপন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্যেই দুপুরে নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বিকেলে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। ছাত্রলীগের পরাজিত ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের কোলাকুলি ও করমর্দনের পর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এর আড়াই ঘণ্টা পর নিজের সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ৩১ মার্চের মধ্যে পুনঃভোটের আল্টিমেটাম দেন নূর। ভোট বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি ভিপি পদে শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি।
উত্তেজনার শুরু সোমবার গভীর রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিনেট ভবনে রাত সাড়ে তিনটায় ডাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদে ফলাফল ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান। এতে ভিপি পদে নুরুল হক নূর, জিএস পদে গোলাম রাব্বানী ও এজিএস পদে সাদ্দাম হোসেন নির্বাচিত হন। ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি ও সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি ২৩টিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ বিজয়ী হয়। ফলাফল ঘোষণার পরপরই ভিপি পদে নুরুল হক নূরকে মানতে অস্বীকৃতি জানায় সিনেট ভবনে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভিপি হিসেবে নূরের নাম ঘোষণার পরপরই হৈ চৈ ও চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্টের ওপর হামলার প্রতিবাদে নূরকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের দাবি জানানো হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হট্টগোলের কারণে ফলাফল ঘোষণার সময় ঢাবি উপাচার্যকে থামতেও হয় কয়েক দফা। ফল ঘোষণা শেষ হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রলীগ। তারা ভিপি পদে নূরকে ভুয়া ও ডাকসুতে কোনো শিবির চাই না বলে স্লোগান দিতে থাকেন। উত্তেজিত নেতাকর্মীদের থামাতে চেষ্টা করেন পরাজিত ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তাতেও ব্যর্থ হয়ে গোলাম রাব্বানী মাইকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন।
এরপর সিনেট ভবন থেকে বের হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা বসে পড়েন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। এরপর সকালেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন তারা। এর আগে সোমবার দুপুরে ভোট চলাকালীন সময়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদাকে লাঞ্ছিত ও হলের ভেতরে ভাঙচুর করে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নূরসহ ৮ জনের নামে উল্লেখ করে মোট ৪০ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মারজুকা বায়না বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার, এজিএস প্রার্থী অনিক, বাম ছাত্রজোট সমর্থিত ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী, জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির, হলের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শেখ মৌসুমি এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক শ্রবনা শফিক দীপ্তি। এদিকে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর গতকাল বেলা পৌনে ২টায় সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে আসেন নুরুল হক নূর। মিছিল শেষে নূর টিএসসিতে আসলে লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ওপর হামলা করে একদল তরুণ। একপর্যায়ে দৌড়ে গিয়ে টিএসসিতে ঢুকে পরেন তিনি। এসময় টিএসসির সামনে মিটিং করছিল ছাত্রদল, বামছাত্রজোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংগঠনগুলো। নূরের ওপর এ হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে বক্তব্য দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা নূরের ওপর হামলা করেছে। তাদের হামলায় ছাত্রদলেরও ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
এ ঘটনার পর নূরের নেতৃত্বে বেলা সোয়া ২টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলে ছাত্রদল, বাম ছাত্রজোটসহ স্বতন্ত্র জোটের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। এসময় তারা স্লোগান দেয়- ঢাবি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই। বিক্ষোভ শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নূর। এসময় ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি ২৩টি পদে আবারো নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। নতুন ভোটের দাবিতে অনির্দিষ্টকালে জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। এসময় নূর বলেন, ভিপি হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাইকে নিয়ে আমি আন্দোলন করব। গোটা নির্বাচনে ছাত্রলীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে প্রশাসন। তারা অনেক চেষ্টা করেও আমাকে হারাতে পারেনি। উপাচার্যের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, এ নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেন। দেখবেন বাকি সব পদেও ছাত্রলীগ ছাড়া সবাই জিতেছে। আর তা না করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলবে। তার ওপর হামলাকারীদের বিচারও চান তিনি। একই সময় ভিসির বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, মানব না’, ‘এ নির্বাচন বাতিল করো, বাতিল করো’, ‘শিবির নূরকে মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেয় তারা। এসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মভিত্তিক দল বা শিবিরের রাজনীতি থেকে মুক্ত। নুরুল হক নূর জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নুরুলকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আমাদের সংগঠনসহ সাধারণ অনেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছে। রাতেও প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবেই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এদিকে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠায় ঢাবিতে প্রবেশের নীলক্ষেত মোড়ের গেটটি বন্ধ রাখে পুলিশ। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ও ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান নেয় পুলিশসহ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর বিকেল ৪টার কিছু সময় পর নেতাকর্মীদের নিয়ে টিএসসি মিলনায়তনে আসেন সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এসময় টিএসসিতে উপস্থিত নুরুল হককে বরণ করে নেন তিনি। শোভন ও নূর একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করেন। সেখানে উপস্থিত উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা হাত তালি দিয়ে তাদের দুজনকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। এরপর নূরকে পাশে রেখে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমাদের সবার চাওয়া-পাওয়া নুরুল হক পূরণ করবে। আমি পারিনি তো কি হয়েছে, নূর পূরণ করবে। সেজন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, যেনো স্বপ্নের বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক থাকে। এসময় শোভনের সঙ্গে একমত পোষণ করে নূর বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম, তা থেকে সরে এসেছি। তবে পুনর্নিবাচনের দাবি অব্যাহত থাকেব। আমরা শিক্ষার্থীদের রায় মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করব। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। আমার ওপর ছাত্রলীগ যে হামলা করেছে, সেটার বিচারের দায়িত্ব ছাত্রলীগ সভাপতির ওপর দিলাম। তিনি আমার বড় ভাই হিসেবে এটা দেখবেন। আর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকও পুননির্বাচন চেয়েছেন, সেজন্য আমিও পুননির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে বলব।
এর আগে বিকেল পৌনে চারটায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন শোভন। সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক রাখতে সবাইকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। মনে রাখতে হবে ছাত্রলীগের মন বিশাল। আমরা বাংলাদেশকে ধারণ করি। আমরা আমাদের অভিভাবকদের সঙ্গে বেয়াদবি করতে পারি না। সবাইকে অনুরোধ করব এখান থেকে সরে যেতে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে সরে যান। বাম ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী, জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বিকেলে দেয়া নূরের ঘোষণা সাধারণ ছাত্রসহ সবমহল গ্রহণ করে নিলেও টিএসসিতে বাম সংগঠনগুলোর নির্বাচন না মানা ও পুননির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি চলতেই থাকে। তাদের সঙ্গে সন্ধ্যায় বৈঠকের পর ভিপি নূর বলেন, ছাত্ররা যে রকম আশা করেছিল, সে রকম নির্বাচন হয়নি। ছাত্রলীগ বাদে সবাই গতকাল ভোট বর্জন করেন। কারচুপি করেও আমাদের ঠেকাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতু আরো অনেক প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত। এ নির্বাচন আবারো হতে হবে এবং নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। অন্যদের অধীনে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।
বিকেলে শোভনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বললেও সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা যখন সুবিধাজনক মনে করে, আমাদের লাগে, তখন বুকে টেনে নেয়। আবার যখন মনে করে আমরা শত্রু, তখন মার দেয়। তার উদাহরণ আমরা গতকাল দেখেছি। রোকেয়া হলে ছাত্রলীগ নেত্রীরা আমাদের মেরেছে। গত ৩০ জুন তারা আমাকে মেরেছিল। আজকেও (গতকাল) শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি টিএসসিতে এসেছি, কিন্তু আমাকে তারা ধাওয়া দিয়েছে। তাদের মুখে মধু- অন্তরে বিষ। তাদের বিশ্বাস করাটা খুব টাফ। মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা খুব অবাক হয়েছি। আমার যদি শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না থাকত, তারা আমাকে ভিপি নির্বাচিত করত না। এরপর ডাকসু নির্বাচনের ফল বাতিল করে আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ফের সব পদে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান নবনির্বাচিত এই ভিপি। একই সময় ভিপি পদে শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি। বাম ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীও আগামী ৩ দিনের মধ্যে ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান। এদিকে নূরের অবস্থান থেকে বারবার সরে আসার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল, ক্ষোভ, আনন্দ, হতাশাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও নুরুল হক নূরের কোলাকুলির পর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এর আড়াই ঘণ্টা পর নিজের সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ৩১ মার্চের মধ্যে পুনঃভোটের আল্টিমেটাম দিলেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূর। ভোট বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি ভিপি পদে শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টিএসসিতে বাম ছাত্রজোটের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন ঘোষণা দেন নূর। অন্যদিকে তিনদিনের মধ্যে নির্বাচন বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাম ছাত্রজোট। আজ বেলা ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে কোলাকুলি ও একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গিকারকে মুখে মধু, অন্তরে বিষ বলেও মন্তব্য করেন নূর। এর আগে নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

তিনদিনের আল্টিমেটাম

আপলোড টাইম : ১০:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০১৯

পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনড় বর্জনকারীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। জিএস-এজিএসসহ প্রায় সব পদে বিজয়ী হলেও ভিপি পদে পরাজয়কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ওই পদে পুননির্বাচনের দাবিতে দিনভর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা। অন্যদিকে ভিপি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাদে বাকি সব পদে পুননির্বাচনের দাবি তুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বামছাত্রজোট, ছাত্রদলসহ ও স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা। আজ বেলা ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। পাল্টাপাল্টি দাবি উত্থাপন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্যেই দুপুরে নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বিকেলে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। ছাত্রলীগের পরাজিত ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের কোলাকুলি ও করমর্দনের পর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এর আড়াই ঘণ্টা পর নিজের সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ৩১ মার্চের মধ্যে পুনঃভোটের আল্টিমেটাম দেন নূর। ভোট বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি ভিপি পদে শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি।
উত্তেজনার শুরু সোমবার গভীর রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিনেট ভবনে রাত সাড়ে তিনটায় ডাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদে ফলাফল ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান। এতে ভিপি পদে নুরুল হক নূর, জিএস পদে গোলাম রাব্বানী ও এজিএস পদে সাদ্দাম হোসেন নির্বাচিত হন। ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি ও সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি ২৩টিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ বিজয়ী হয়। ফলাফল ঘোষণার পরপরই ভিপি পদে নুরুল হক নূরকে মানতে অস্বীকৃতি জানায় সিনেট ভবনে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভিপি হিসেবে নূরের নাম ঘোষণার পরপরই হৈ চৈ ও চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্টের ওপর হামলার প্রতিবাদে নূরকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের দাবি জানানো হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হট্টগোলের কারণে ফলাফল ঘোষণার সময় ঢাবি উপাচার্যকে থামতেও হয় কয়েক দফা। ফল ঘোষণা শেষ হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রলীগ। তারা ভিপি পদে নূরকে ভুয়া ও ডাকসুতে কোনো শিবির চাই না বলে স্লোগান দিতে থাকেন। উত্তেজিত নেতাকর্মীদের থামাতে চেষ্টা করেন পরাজিত ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তাতেও ব্যর্থ হয়ে গোলাম রাব্বানী মাইকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন।
এরপর সিনেট ভবন থেকে বের হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা বসে পড়েন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। এরপর সকালেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন তারা। এর আগে সোমবার দুপুরে ভোট চলাকালীন সময়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদাকে লাঞ্ছিত ও হলের ভেতরে ভাঙচুর করে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নূরসহ ৮ জনের নামে উল্লেখ করে মোট ৪০ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মারজুকা বায়না বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার, এজিএস প্রার্থী অনিক, বাম ছাত্রজোট সমর্থিত ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী, জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির, হলের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শেখ মৌসুমি এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক শ্রবনা শফিক দীপ্তি। এদিকে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর গতকাল বেলা পৌনে ২টায় সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে আসেন নুরুল হক নূর। মিছিল শেষে নূর টিএসসিতে আসলে লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ওপর হামলা করে একদল তরুণ। একপর্যায়ে দৌড়ে গিয়ে টিএসসিতে ঢুকে পরেন তিনি। এসময় টিএসসির সামনে মিটিং করছিল ছাত্রদল, বামছাত্রজোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংগঠনগুলো। নূরের ওপর এ হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে বক্তব্য দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা নূরের ওপর হামলা করেছে। তাদের হামলায় ছাত্রদলেরও ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
এ ঘটনার পর নূরের নেতৃত্বে বেলা সোয়া ২টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলে ছাত্রদল, বাম ছাত্রজোটসহ স্বতন্ত্র জোটের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। এসময় তারা স্লোগান দেয়- ঢাবি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই। বিক্ষোভ শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নূর। এসময় ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি ২৩টি পদে আবারো নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। নতুন ভোটের দাবিতে অনির্দিষ্টকালে জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। এসময় নূর বলেন, ভিপি হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাইকে নিয়ে আমি আন্দোলন করব। গোটা নির্বাচনে ছাত্রলীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে প্রশাসন। তারা অনেক চেষ্টা করেও আমাকে হারাতে পারেনি। উপাচার্যের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, এ নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেন। দেখবেন বাকি সব পদেও ছাত্রলীগ ছাড়া সবাই জিতেছে। আর তা না করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলবে। তার ওপর হামলাকারীদের বিচারও চান তিনি। একই সময় ভিসির বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, মানব না’, ‘এ নির্বাচন বাতিল করো, বাতিল করো’, ‘শিবির নূরকে মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেয় তারা। এসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মভিত্তিক দল বা শিবিরের রাজনীতি থেকে মুক্ত। নুরুল হক নূর জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নুরুলকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আমাদের সংগঠনসহ সাধারণ অনেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছে। রাতেও প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবেই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এদিকে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠায় ঢাবিতে প্রবেশের নীলক্ষেত মোড়ের গেটটি বন্ধ রাখে পুলিশ। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ও ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান নেয় পুলিশসহ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর বিকেল ৪টার কিছু সময় পর নেতাকর্মীদের নিয়ে টিএসসি মিলনায়তনে আসেন সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এসময় টিএসসিতে উপস্থিত নুরুল হককে বরণ করে নেন তিনি। শোভন ও নূর একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করেন। সেখানে উপস্থিত উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা হাত তালি দিয়ে তাদের দুজনকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। এরপর নূরকে পাশে রেখে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমাদের সবার চাওয়া-পাওয়া নুরুল হক পূরণ করবে। আমি পারিনি তো কি হয়েছে, নূর পূরণ করবে। সেজন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, যেনো স্বপ্নের বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক থাকে। এসময় শোভনের সঙ্গে একমত পোষণ করে নূর বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম, তা থেকে সরে এসেছি। তবে পুনর্নিবাচনের দাবি অব্যাহত থাকেব। আমরা শিক্ষার্থীদের রায় মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করব। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। আমার ওপর ছাত্রলীগ যে হামলা করেছে, সেটার বিচারের দায়িত্ব ছাত্রলীগ সভাপতির ওপর দিলাম। তিনি আমার বড় ভাই হিসেবে এটা দেখবেন। আর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকও পুননির্বাচন চেয়েছেন, সেজন্য আমিও পুননির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে বলব।
এর আগে বিকেল পৌনে চারটায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন শোভন। সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক রাখতে সবাইকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। মনে রাখতে হবে ছাত্রলীগের মন বিশাল। আমরা বাংলাদেশকে ধারণ করি। আমরা আমাদের অভিভাবকদের সঙ্গে বেয়াদবি করতে পারি না। সবাইকে অনুরোধ করব এখান থেকে সরে যেতে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে সরে যান। বাম ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী, জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বিকেলে দেয়া নূরের ঘোষণা সাধারণ ছাত্রসহ সবমহল গ্রহণ করে নিলেও টিএসসিতে বাম সংগঠনগুলোর নির্বাচন না মানা ও পুননির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি চলতেই থাকে। তাদের সঙ্গে সন্ধ্যায় বৈঠকের পর ভিপি নূর বলেন, ছাত্ররা যে রকম আশা করেছিল, সে রকম নির্বাচন হয়নি। ছাত্রলীগ বাদে সবাই গতকাল ভোট বর্জন করেন। কারচুপি করেও আমাদের ঠেকাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতু আরো অনেক প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত। এ নির্বাচন আবারো হতে হবে এবং নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। অন্যদের অধীনে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।
বিকেলে শোভনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বললেও সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা যখন সুবিধাজনক মনে করে, আমাদের লাগে, তখন বুকে টেনে নেয়। আবার যখন মনে করে আমরা শত্রু, তখন মার দেয়। তার উদাহরণ আমরা গতকাল দেখেছি। রোকেয়া হলে ছাত্রলীগ নেত্রীরা আমাদের মেরেছে। গত ৩০ জুন তারা আমাকে মেরেছিল। আজকেও (গতকাল) শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি টিএসসিতে এসেছি, কিন্তু আমাকে তারা ধাওয়া দিয়েছে। তাদের মুখে মধু- অন্তরে বিষ। তাদের বিশ্বাস করাটা খুব টাফ। মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা খুব অবাক হয়েছি। আমার যদি শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না থাকত, তারা আমাকে ভিপি নির্বাচিত করত না। এরপর ডাকসু নির্বাচনের ফল বাতিল করে আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ফের সব পদে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান নবনির্বাচিত এই ভিপি। একই সময় ভিপি পদে শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি। বাম ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীও আগামী ৩ দিনের মধ্যে ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান। এদিকে নূরের অবস্থান থেকে বারবার সরে আসার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল, ক্ষোভ, আনন্দ, হতাশাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও নুরুল হক নূরের কোলাকুলির পর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এর আড়াই ঘণ্টা পর নিজের সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ৩১ মার্চের মধ্যে পুনঃভোটের আল্টিমেটাম দিলেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূর। ভোট বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি ভিপি পদে শপথ নেয়ার কথাও জানান তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টিএসসিতে বাম ছাত্রজোটের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন ঘোষণা দেন নূর। অন্যদিকে তিনদিনের মধ্যে নির্বাচন বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাম ছাত্রজোট। আজ বেলা ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে কোলাকুলি ও একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গিকারকে মুখে মধু, অন্তরে বিষ বলেও মন্তব্য করেন নূর। এর আগে নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস।