ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঢাকা সিটি করপোরেশন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০
  • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

নির্বাচন হোক অবাধ ও সুষ্ঠু
আগামীকাল শনিবার (১ ফেব্রয়ারি) ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নগরবাসী বেছে নেবে তাদের আগামী দিনের নগর প্রতিনিধিকে। নগর ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদানের প্রেক্ষাপট থেকে যেমন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকেও তেমনি এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, গোটা দেশই উৎসুক এই নির্বাচন নিয়ে। তবে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়টাও মোটামুটি শান্তিপূর্ণ কেটেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও পরস্পরের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ লক্ষণীয় ছিল। এবার চূড়ান্ত পরীক্ষা! ভোটগ্রহণ এবং পরবর্তী পর্যায়গুলো সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে ভাবে সম্পন্ন হো এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এবার দুই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের মোট ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় দুই দলের শক্তিশালী চার মেয়র প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে সবাই অপরূপ এক স্বপ্নের ঢাকা শহর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। চারজনের প্রত্যেকেই যানজটমুক্ত, দূষণমুক্ত, সচল, ইন্টেলিজেন্ট, সুন্দর বাসযোগ্য স্বপ্নের ঢাকা নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের এসব প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে ভোটাররা আকৃষ্ট হলেও নগর চিন্তকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের কর্তৃত্ব খুবই কম। তাদের কাজ করতে হয় ৫৬টির বেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে। নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে মেয়রদের কাছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এগুলো আসলে প্রার্থীদের মার্কেটিং পলিসি। কেন্দ্রীয় সরকার মানে সরকারের সুদৃষ্টি ছাড়া ওইসব ইশতেহারের এক-তৃতীয়াংশও বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মেয়ররা রাস্তার বাতি জ্বালানো, নগরের মশা মারা আর আবর্জনা পরিবহন ছাড়া কোনো কাজই এককভাবে করতে পারেন না। আমরা মনে করি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যে না থেকে আইনের সংস্কার এবং বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, তাহলেই নগরবাসীর প্রকৃত উন্নয়ন সেবা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের দায়িত্ব হলো ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা। কমিশন ইতোমধ্যে সে ব্যাপারে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছে। আশার দিক হলো, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো সংঘাত-সহিংসতা বা নাশকতার ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। আমাদের দেশে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় ব্যাপার। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা সদস্য মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের যেমন, তেমনি অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, ভোটার এবং সমর্থনদানকারী রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি আমরা। নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় থাকবে, ভোটারদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তা খোলা মনে মেনে নেয়াই গণতন্ত্রের শিক্ষা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঢাকা সিটি করপোরেশন

আপলোড টাইম : ১০:২৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০

নির্বাচন হোক অবাধ ও সুষ্ঠু
আগামীকাল শনিবার (১ ফেব্রয়ারি) ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নগরবাসী বেছে নেবে তাদের আগামী দিনের নগর প্রতিনিধিকে। নগর ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদানের প্রেক্ষাপট থেকে যেমন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকেও তেমনি এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, গোটা দেশই উৎসুক এই নির্বাচন নিয়ে। তবে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়টাও মোটামুটি শান্তিপূর্ণ কেটেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও পরস্পরের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ লক্ষণীয় ছিল। এবার চূড়ান্ত পরীক্ষা! ভোটগ্রহণ এবং পরবর্তী পর্যায়গুলো সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে ভাবে সম্পন্ন হো এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এবার দুই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের মোট ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় দুই দলের শক্তিশালী চার মেয়র প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে সবাই অপরূপ এক স্বপ্নের ঢাকা শহর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। চারজনের প্রত্যেকেই যানজটমুক্ত, দূষণমুক্ত, সচল, ইন্টেলিজেন্ট, সুন্দর বাসযোগ্য স্বপ্নের ঢাকা নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের এসব প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে ভোটাররা আকৃষ্ট হলেও নগর চিন্তকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের কর্তৃত্ব খুবই কম। তাদের কাজ করতে হয় ৫৬টির বেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে। নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে মেয়রদের কাছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এগুলো আসলে প্রার্থীদের মার্কেটিং পলিসি। কেন্দ্রীয় সরকার মানে সরকারের সুদৃষ্টি ছাড়া ওইসব ইশতেহারের এক-তৃতীয়াংশও বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মেয়ররা রাস্তার বাতি জ্বালানো, নগরের মশা মারা আর আবর্জনা পরিবহন ছাড়া কোনো কাজই এককভাবে করতে পারেন না। আমরা মনে করি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যে না থেকে আইনের সংস্কার এবং বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, তাহলেই নগরবাসীর প্রকৃত উন্নয়ন সেবা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের দায়িত্ব হলো ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা। কমিশন ইতোমধ্যে সে ব্যাপারে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছে। আশার দিক হলো, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো সংঘাত-সহিংসতা বা নাশকতার ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। আমাদের দেশে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় ব্যাপার। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা সদস্য মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের যেমন, তেমনি অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, ভোটার এবং সমর্থনদানকারী রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি আমরা। নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় থাকবে, ভোটারদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তা খোলা মনে মেনে নেয়াই গণতন্ত্রের শিক্ষা।