ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৫ দিনের মাথায় একতারপুর থেকে চরমপন্থী আরজুল্লাহ’র লাশ উদ্ধার : এলাকায় স্বস্তির শ্বাস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০১৭
  • / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার নেহালপুর গ্রামের সাবেক চরমপন্থী দলের সদস্য আরজুল্লাহকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৫ দিনের মাথায় জীবননগর উপজেলার একতারপুর গ্রামের একটি নির্জন মাঠ থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। গতকাল জীবননগর থানা পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে আরজুল্লাহ’র লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এটি আরজুল্লাহ’র লাশ বলে সনাক্ত করলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং গতকালই নিজ গ্রামে তার দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। আরজুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও চিকিৎসকের ধারণা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর দক্ষিণপাড়ার আলিমুদ্দিনের ছেলে ২ সন্তানের জনক সাবেক চরমপন্থি দল পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র আঞ্চলিক নেতা একাধিক হত্যা মামলার আসামী আরজুল্লাহকে গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়ীর সামনের চায়ের দোকান থেকে সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই আরজুল্লাহ’র পরিবারের লোকজন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায়, জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে খোঁজ করে। কিন্তু পুলিশ আরজুল্লাহকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল। ঘটনার পর থেকেই আরজুল্লাহ’র পরিবার তাকে ফেরত পেতে ও তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারায় চরম উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছিল। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার সকালে জীবননগর থানা পুলিশ স্থানীয় একতারপুর গ্রামের মাঠের রাস্তার পাশ থেকে একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আরজুল্লাহ’র পরিবার অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ আরজুল্লাহ’র কি-না তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ছিল। পরে জীবননগর থানা পুলিশ উদ্ধারকৃত লাশটি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে আনলে সেখানে আরজুল্লাহ পিতা আলিমুদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে লাশটি আরজুল্লাহ’র বলে নিশ্চিত হন। পরে ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। গতকালই বিকাল ৫টার দিকে আরজুল্লাহ’র লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে এসে তাকে দাফন করা হয়।
কে এই আরজুল্লাহ ও তার উত্থানের কাহিনী: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের (নব গঠিত নেহালপুর)’র নেহালপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার দিনমুজুর আলিমুদ্দিনের ছেলে আরজুল্লাহ প্রথমে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাবন করলেও বিগত ২০০১ সালের পর থেকে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার জামাল ওরফে রবি’র হাত ধরে অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। তারপর থেকে এলাকায় চালাতে থাকে চাঁদাবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড। পুলিশের সাথে ক্রাসফায়ারে নিহত হয় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র আঞ্চলিক নেতা চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার জামাল ওরফে রবি ও সদর উপজেলার জালশুকা গ্রামের ঘরজামাই পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র খুলনা বিভাগীয় নেতা পলাশসহ বেশ কয়েকজন। এরই কিছুদিন পর পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র স্থানীয় পর্যায়ের দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। এরই একটি পক্ষে অবস্থান নেয় আরজুল্লাহ’র সহযোগি নেহালপুর গ্রামের মাহাবুল ও মাহাবুল কসাই। সে সময় আরজুল্লাহ তার পক্ষের লোকজনকে সাথে নিয়ে নেহালপুর ভিটেখোলা মাঠে মাহাবুলকে জবাই করে খুন করে। এরই কিছুদিন পর বোয়ালিয়া গ্রামের বিএনপি নেতা ছলিম উদ্দিনকেও কুপিয়ে খুন করা হয়। এই দুইটি হত্যা মামলাসহ আরজুল্লাহ’র নামে আরো ৪/৫টি হত্যা মামলা হয়। মাঝে আরজুল্লাহ পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে অনেকটায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু সম্প্রতি তার চলাচলে পূর্বের সেই অন্ধকার জগতে পূনরায় ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করছিল। এরই মাঝে গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়ীর সামনের চায়ের দোকান থেকে সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আরজুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। এর ৫দিনের মাথায় কে বা কারা শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে তার লাশ একতারপুরের নির্জন মাঠে ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৫ দিনের মাথায় একতারপুর থেকে চরমপন্থী আরজুল্লাহ’র লাশ উদ্ধার : এলাকায় স্বস্তির শ্বাস

আপলোড টাইম : ০৫:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার নেহালপুর গ্রামের সাবেক চরমপন্থী দলের সদস্য আরজুল্লাহকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৫ দিনের মাথায় জীবননগর উপজেলার একতারপুর গ্রামের একটি নির্জন মাঠ থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। গতকাল জীবননগর থানা পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে আরজুল্লাহ’র লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এটি আরজুল্লাহ’র লাশ বলে সনাক্ত করলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং গতকালই নিজ গ্রামে তার দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। আরজুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও চিকিৎসকের ধারণা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর দক্ষিণপাড়ার আলিমুদ্দিনের ছেলে ২ সন্তানের জনক সাবেক চরমপন্থি দল পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র আঞ্চলিক নেতা একাধিক হত্যা মামলার আসামী আরজুল্লাহকে গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়ীর সামনের চায়ের দোকান থেকে সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই আরজুল্লাহ’র পরিবারের লোকজন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায়, জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে খোঁজ করে। কিন্তু পুলিশ আরজুল্লাহকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল। ঘটনার পর থেকেই আরজুল্লাহ’র পরিবার তাকে ফেরত পেতে ও তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারায় চরম উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছিল। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার সকালে জীবননগর থানা পুলিশ স্থানীয় একতারপুর গ্রামের মাঠের রাস্তার পাশ থেকে একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আরজুল্লাহ’র পরিবার অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ আরজুল্লাহ’র কি-না তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ছিল। পরে জীবননগর থানা পুলিশ উদ্ধারকৃত লাশটি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে আনলে সেখানে আরজুল্লাহ পিতা আলিমুদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে লাশটি আরজুল্লাহ’র বলে নিশ্চিত হন। পরে ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। গতকালই বিকাল ৫টার দিকে আরজুল্লাহ’র লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে এসে তাকে দাফন করা হয়।
কে এই আরজুল্লাহ ও তার উত্থানের কাহিনী: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের (নব গঠিত নেহালপুর)’র নেহালপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার দিনমুজুর আলিমুদ্দিনের ছেলে আরজুল্লাহ প্রথমে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাবন করলেও বিগত ২০০১ সালের পর থেকে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার জামাল ওরফে রবি’র হাত ধরে অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। তারপর থেকে এলাকায় চালাতে থাকে চাঁদাবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড। পুলিশের সাথে ক্রাসফায়ারে নিহত হয় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র আঞ্চলিক নেতা চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার জামাল ওরফে রবি ও সদর উপজেলার জালশুকা গ্রামের ঘরজামাই পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র খুলনা বিভাগীয় নেতা পলাশসহ বেশ কয়েকজন। এরই কিছুদিন পর পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল)’র স্থানীয় পর্যায়ের দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। এরই একটি পক্ষে অবস্থান নেয় আরজুল্লাহ’র সহযোগি নেহালপুর গ্রামের মাহাবুল ও মাহাবুল কসাই। সে সময় আরজুল্লাহ তার পক্ষের লোকজনকে সাথে নিয়ে নেহালপুর ভিটেখোলা মাঠে মাহাবুলকে জবাই করে খুন করে। এরই কিছুদিন পর বোয়ালিয়া গ্রামের বিএনপি নেতা ছলিম উদ্দিনকেও কুপিয়ে খুন করা হয়। এই দুইটি হত্যা মামলাসহ আরজুল্লাহ’র নামে আরো ৪/৫টি হত্যা মামলা হয়। মাঝে আরজুল্লাহ পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে অনেকটায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু সম্প্রতি তার চলাচলে পূর্বের সেই অন্ধকার জগতে পূনরায় ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করছিল। এরই মাঝে গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়ীর সামনের চায়ের দোকান থেকে সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আরজুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। এর ৫দিনের মাথায় কে বা কারা শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে তার লাশ একতারপুরের নির্জন মাঠে ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।