ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ডিবি’র অভিযানে ১৪ ঘন্টার মাথায় ঘাতক মঈনউদ্দীনসহ পরিবারে ৫ সদস্য আটক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:২২:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০১৭
  • / ৪৯২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার খাসপাড়ায় ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব, নাকি পরকীয়া সম্পর্কের জের?
স্ত্রীকে মোবাইলেফোনে উত্ত্যক্ত করায় প্রবাস ফেরত বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এমএ মামুন/আকিমুল ইসলাম: কোন জমিজমার বিরোধ নয়। নয় কোন ব্যবসায়িক বিরোধ। ঘটনার সূত্রপাত পরস্ত্রীর প্রতি আসক্তি। আর এই জঘন্ন আষক্তির কাছে পরাজিতরা যুগে যুগে হয় নিজে খুন হয়েছে, নয়তো অন্যকে খুন করে ফাঁসির দড়ি গলায় তুলে নিয়েছে। পরকিয়া একটি ব্যাধি, এই ব্যাধি থেকে সরে দাঁড়াতে পারিনি হত্যাসহ মাদক মামলার আসামী খাসপাড়া গ্রামের রিপন সরকারও। প্রতি রাতে মোবাইলফোনে প্রবাসী বন্ধু মঈন উদ্দীনের স্ত্রী মৌসুমীকে অবৈধ প্রস্তাবসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার জের ধরেই নৃশংস খুঁনের শিকার হয়েছে রিপন সরকার। আর এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং চাচাতো ভাই রিপনকে খুনের অপরাধে নিজেকে অপরাধী এবং অনুতপ্ত খুনি মঈন উদ্দীনসহ পরিবারের ৫ সদস্য এখন পুলিশের খাঁচায় বন্দি। গতকাল সকালে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা ঘটনায় সরজমিনে খাসপাড়ায় যেয়ে এমনি চিত্র যা বর্ণনা করলে একটি খুঁনের ঘটনার নেপথ্য কাহিনী উঠে আসে যা কারো জন্য কাম্য নয়। এই হত্যার নেপথ্যের কাহিনী এমনই যা মানুষকে ভাবায় এবং সমাজবদ্ধ মানুষ বিস্মিত হয়।
যাদের একই আঙিনায় একই সাথে বেড়ে ওঠা ও শিক্ষা জীবনের সহপাটি প্রিয় বন্ধু রিপন সরকার ও মঈন উদ্দীন উভয়ের মধ্যে ছিল গভীর ভালোবাসা এবং অগাধ বিশ্বাস। আর এই  বিশ্বাসের কারণেই বন্ধুর প্রতি আস্থা রেখে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল মঈনউদ্দীন। অথচ নারী আসক্তির কারণেই রিপন ও মঈনের মধ্যে সেই সম্পর্ক শত্রুতায় রুপ নেয় এবং হারিয়ে যায় ঘনিষ্ট জীবনের সকল সুসম্পর্ক। মঈন ও রিপনের মধ্যে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে মঈনউদ্দীন স্ত্রী মৌসুমী ও পিতা সামছদ্দিনের মুখে রিপনের ওধৌত্যের মাত্রা ছড়িয়ে যায়।
প্রবাসী বন্ধুর অনুপস্থিতির সুযোগে মোবাইল ফোনে প্রতিরাতে মালেশিয়া প্রবাসী বন্ধুর সুন্দরী স্ত্রী মৌসুমীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল রিপন। শেষমেষ সে মৌসুমীকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকিও দেয়। রিপনের এই হুমকির পর মঈনউদ্দীনও গত কয়েক মাস আগে মোবাইল ফোনে মালেশিয়া থেকে রিপনকে হত্যার হুমকি দেয়। হত্যার হুমকির পরও রিপন বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং রিপনও মঈন উদ্দীনের স্ত্রী মৌসুমীকে বাড়ী থেকে অপহরণসহ নানা প্রকার হুমকি দেয়। পুড়িয়ে দেয় বাড়ীর খড়ির গোলা, মাঠের ১০ কাঠা বেগুনের ফসল। রিপনকে শেষবারের মত সাবধান করলেও মঈনের সকল হুমকি অগ্রাহ্য করে সে। শেষমেস মঈন রিপনকে সায়েস্তা করতে সিদ্ধান্ত নেয় মালোশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসার এবং স্ত্রীর সাথে রিপনের জঘন্ন আচরণ বন্ধের জন্য যা করার তাই করবে। গত ৪/৫ মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসে মঈন। দেশে ফিরে রিপনের বিরুদ্ধে গ্রামের জনগণকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে ডাকে। সালিশে রিপন সরকার মঈনউদ্দীনের কাছে ক্ষমা চায়। তবে, সালিশ বৈঠকে উভয়ে হাতেহাত মেলালেও রিপন মঈনের স্ত্রীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি ও অপকৌশল থেকে একবিন্দও সরে না দাঁড়িয়ে উত্ত্যক্তের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় এবং এরই জের ধরে ঘনিষ্ট বন্ধু মঈন উদ্দীনের হাতে প্রাণ দিতে হলো বন্ধু রিপনকে। এই নির্মম হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার দিনগত রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার খাসপাড়া গ্রামের মোতালেবের পরিবারে। পরস্পর সামছদ্দিন ও মোতালেব এই দুটি পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সুম্পর্ক থাকায় দুটি পরিবারই এখন শোকের ছায়া। এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
যেভাবে খুন হয় রিপন সরকার: মঈন উদ্দীনের স্ত্রী মৌসুমীর সাথে রিপনের অবৈধ্য প্রেমজ সম্পর্ক গড়ার অপচেষ্টা এবং মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করার জের ধরে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও রাগের প্রতিশোধ নিতেই গত ৪/৫ আগে মঈনউদ্দী মালেশিয়ার ৩০ হাজার টাকার চাকরী ফেলে চুয়াডাঙ্গার খাসপাড়ায় আসে। রিপনের বিরুদ্ধে গ্রামে একাধিক সালিশ করেও রিপন তার স্ত্রী মৌসুমীর পিছ না ছাড়াই মঈন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সলাপরামর্শ করে। গত এক সপ্তাহ আগে উভয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রিপনকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেবে। সে অনুসারে মঈন ও তার এক বন্ধু মিলে গত রবিবার এলাকায় রিপনের উপর হামলার জন্য খাসপাড়ার রাস্তার ধারে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকে। এদিকে রিপন প্রতিদিনের মত খাসপাড়া গ্রামের মাঠে বিল পাহারা দিয়ে রাত ১২টার দিকে বাড়ীর অদুরের একটি চায়ের দোকানে চা খেয়ে বাড়ী ফিরছিল। এসময় মঈন উদ্দিন ও তার এক সহযোগী বন্ধু মিলে রিপনের ওপর হামলা করে। মঈন প্রথমে পিছন দিক থেকে রিপনের মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ী মারে, রিপন রাস্তার উপর পড়ে গেলে দুজনে মিলে বড় টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে এবং খুচিয়ে খুচিয়ে রিপনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার লাশ খাসপাড়া রাস্তার পাশেই একটি ডোবার পানিতে পাটের জাগের তলায় লুকিয়ে রাখে। এরপর মঈন রাত তিনটার দিকে গ্রাম ছেড়ে জীবননগরে এক বন্ধুর বাড়ীতে আত্মগোপন করে। এদিকে রিপন বাড়ী না ফেরায় রিপনের পিতা মোতালেব ও পরিবার এবং গ্রামবাসীরা রিপনকে খুঁজতে থাকে ও রিপন হত্যার পিছনে মঈন জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহ করে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীরা জানতে পারে মঈন ও মঈনের ভাই খোকন এবং পিতা সামছদ্দিন বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছে। বেলা ৯টার দিকে বাড়ীর অদুরে রাস্তার পাশের একটি পাটজাগ দেওয়া ডোবায় রিপনের লাশ ভাসতে দেখে গ্রামবাসীরা পুলিশকে খবর দেয়। এসময় রিপনের লাশ পাওয়ার কথা শুনে মঈনের, বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতে উদ্যত হয় মঈনের মা মর্জিনা খাতুন, স্ত্রী মৌসুমি, ভাবী শান্তা । বাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এ খবরে গ্রামবাসীরা মঈনের পরিবারের প্রতি আরো সন্দেহ ঘনিভুত হয়। গ্রামবাসীরা তাদের বাড়ীতে তাদের আটক করে রাখে এবং পুলিশ গেলে তাদের আচরণ ও পরিবারের সদস্যদের পালিয়ে থাকার কথা জানায়। পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে মঈন উদ্দীনের মা, স্ত্রী ও ভাবীকে আটক করে এরপর বেলা ১টার দিকে পুলিশ এলাকার বাটকেমারী গ্রাম থেকে মঈন উদ্দীনের পিতা সামছদ্দিনকে আটক করে।
সর্বশেষ এই হত্যার প্রধান আসামী মঈন উদ্দীনকে হত্যাকান্ডের ১৪ ঘন্টা পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবননগর শহরের অদুরে পিয়ারাতলা গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে থেকে চুয়াডাঙ্গা ডিবির ওসি নাজমুল হুদার নেতৃত্বে এসআই ইব্রাহিম ও এসআই আশরাফের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালানো হয়। এসময় ঐ বাড়ীতে আত্মগোপন করা মঈনকে আটক করা হয়। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মঈন উদ্দীন রিপন হত্যার কথা স্বীকার করে। সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রিপন তার স্ত্রীকে মোবাইল ফোনে দিনের পর দিন উত্ত্যক্ত করায় মঈন ও তার এক সহযোগী রিপনকে হত্যা করেছে।
যেভাবে আটক হয় রিপন হত্যার প্রধান আসামী মঈন উদ্দীন: হত্যার প্রধান আসামী খাসপাড়ার সামছদ্দিনের ছেলে মঈন উদ্দীনকে হত্যা ঘটনার ১৪ ঘন্টার মধ্যে জীবননগর শহরের মঈনের এক বন্ধুর বাড়ী থেকে আটক করে ডিবির এস আই ইব্রাহিম
চুয়াডাঙ্গা ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় খাসপাড়া এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাসপাড়া গ্রামের সামছদ্দিনের ছেলে মঈন উদ্দীন ও প্রতিবেশী এবং দূর্সম্পকের মামাতো ভাই মোতালেবের ছেলে রিপনের সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তাই মঈনদ্দীন মালয়েশিয়া যাবার পর তার বন্ধু রিপনকে তার পরিবারের সকলকে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে যায়। কিন্তু গত ৬ মাস থেকে মঈন উদ্দীনের পিতা সামছদ্দিন  তার ছেলে মঈন উদ্দীনকে জানায়, তোমার বন্ধু রিপনের সাথে তোমার স্ত্রী মৌসুমী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। বাবার মুখে তার স্ত্রী এবং বন্ধুর এমন পরকিয়া সম্পর্কের কথা শুনে মঈন উদ্দীন বিদেশ থেকে বেশ কয়েকবার রিপনকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর গত ৬ মাস আগে বাড়ী এসেও হত্যার হুমকি অব্যাহত রাখলে গ্রামের মন্ডল মাতব্বররা বিষয়টি নিয়ে শালিস দরবার করে উভয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটায়। কিন্তু মঈন উদ্দীন মনে মনে রিপনকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।
পুলিশ সন্দেহভাজন মঈন উদ্দীনের পিতা সামছদ্দিন ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে আটক করলে মঈন উদ্দীন দুপুরে পুলিশের কাছে জানায়, রিপনকে সে নিজেই হত্যা করেছে। তার পরিবারের সদস্যদেরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু পুলিশ তার মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে বেলা আড়াইটার দিকে জীবননগর শহর থেকে মঈন উদ্দীনকে আটক করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ডিবি’র অভিযানে ১৪ ঘন্টার মাথায় ঘাতক মঈনউদ্দীনসহ পরিবারে ৫ সদস্য আটক

আপলোড টাইম : ১২:২২:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০১৭

চুয়াডাঙ্গার খাসপাড়ায় ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব, নাকি পরকীয়া সম্পর্কের জের?
স্ত্রীকে মোবাইলেফোনে উত্ত্যক্ত করায় প্রবাস ফেরত বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এমএ মামুন/আকিমুল ইসলাম: কোন জমিজমার বিরোধ নয়। নয় কোন ব্যবসায়িক বিরোধ। ঘটনার সূত্রপাত পরস্ত্রীর প্রতি আসক্তি। আর এই জঘন্ন আষক্তির কাছে পরাজিতরা যুগে যুগে হয় নিজে খুন হয়েছে, নয়তো অন্যকে খুন করে ফাঁসির দড়ি গলায় তুলে নিয়েছে। পরকিয়া একটি ব্যাধি, এই ব্যাধি থেকে সরে দাঁড়াতে পারিনি হত্যাসহ মাদক মামলার আসামী খাসপাড়া গ্রামের রিপন সরকারও। প্রতি রাতে মোবাইলফোনে প্রবাসী বন্ধু মঈন উদ্দীনের স্ত্রী মৌসুমীকে অবৈধ প্রস্তাবসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার জের ধরেই নৃশংস খুঁনের শিকার হয়েছে রিপন সরকার। আর এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং চাচাতো ভাই রিপনকে খুনের অপরাধে নিজেকে অপরাধী এবং অনুতপ্ত খুনি মঈন উদ্দীনসহ পরিবারের ৫ সদস্য এখন পুলিশের খাঁচায় বন্দি। গতকাল সকালে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা ঘটনায় সরজমিনে খাসপাড়ায় যেয়ে এমনি চিত্র যা বর্ণনা করলে একটি খুঁনের ঘটনার নেপথ্য কাহিনী উঠে আসে যা কারো জন্য কাম্য নয়। এই হত্যার নেপথ্যের কাহিনী এমনই যা মানুষকে ভাবায় এবং সমাজবদ্ধ মানুষ বিস্মিত হয়।
যাদের একই আঙিনায় একই সাথে বেড়ে ওঠা ও শিক্ষা জীবনের সহপাটি প্রিয় বন্ধু রিপন সরকার ও মঈন উদ্দীন উভয়ের মধ্যে ছিল গভীর ভালোবাসা এবং অগাধ বিশ্বাস। আর এই  বিশ্বাসের কারণেই বন্ধুর প্রতি আস্থা রেখে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল মঈনউদ্দীন। অথচ নারী আসক্তির কারণেই রিপন ও মঈনের মধ্যে সেই সম্পর্ক শত্রুতায় রুপ নেয় এবং হারিয়ে যায় ঘনিষ্ট জীবনের সকল সুসম্পর্ক। মঈন ও রিপনের মধ্যে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে মঈনউদ্দীন স্ত্রী মৌসুমী ও পিতা সামছদ্দিনের মুখে রিপনের ওধৌত্যের মাত্রা ছড়িয়ে যায়।
প্রবাসী বন্ধুর অনুপস্থিতির সুযোগে মোবাইল ফোনে প্রতিরাতে মালেশিয়া প্রবাসী বন্ধুর সুন্দরী স্ত্রী মৌসুমীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল রিপন। শেষমেষ সে মৌসুমীকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকিও দেয়। রিপনের এই হুমকির পর মঈনউদ্দীনও গত কয়েক মাস আগে মোবাইল ফোনে মালেশিয়া থেকে রিপনকে হত্যার হুমকি দেয়। হত্যার হুমকির পরও রিপন বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং রিপনও মঈন উদ্দীনের স্ত্রী মৌসুমীকে বাড়ী থেকে অপহরণসহ নানা প্রকার হুমকি দেয়। পুড়িয়ে দেয় বাড়ীর খড়ির গোলা, মাঠের ১০ কাঠা বেগুনের ফসল। রিপনকে শেষবারের মত সাবধান করলেও মঈনের সকল হুমকি অগ্রাহ্য করে সে। শেষমেস মঈন রিপনকে সায়েস্তা করতে সিদ্ধান্ত নেয় মালোশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসার এবং স্ত্রীর সাথে রিপনের জঘন্ন আচরণ বন্ধের জন্য যা করার তাই করবে। গত ৪/৫ মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসে মঈন। দেশে ফিরে রিপনের বিরুদ্ধে গ্রামের জনগণকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে ডাকে। সালিশে রিপন সরকার মঈনউদ্দীনের কাছে ক্ষমা চায়। তবে, সালিশ বৈঠকে উভয়ে হাতেহাত মেলালেও রিপন মঈনের স্ত্রীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি ও অপকৌশল থেকে একবিন্দও সরে না দাঁড়িয়ে উত্ত্যক্তের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় এবং এরই জের ধরে ঘনিষ্ট বন্ধু মঈন উদ্দীনের হাতে প্রাণ দিতে হলো বন্ধু রিপনকে। এই নির্মম হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার দিনগত রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার খাসপাড়া গ্রামের মোতালেবের পরিবারে। পরস্পর সামছদ্দিন ও মোতালেব এই দুটি পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সুম্পর্ক থাকায় দুটি পরিবারই এখন শোকের ছায়া। এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
যেভাবে খুন হয় রিপন সরকার: মঈন উদ্দীনের স্ত্রী মৌসুমীর সাথে রিপনের অবৈধ্য প্রেমজ সম্পর্ক গড়ার অপচেষ্টা এবং মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করার জের ধরে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও রাগের প্রতিশোধ নিতেই গত ৪/৫ আগে মঈনউদ্দী মালেশিয়ার ৩০ হাজার টাকার চাকরী ফেলে চুয়াডাঙ্গার খাসপাড়ায় আসে। রিপনের বিরুদ্ধে গ্রামে একাধিক সালিশ করেও রিপন তার স্ত্রী মৌসুমীর পিছ না ছাড়াই মঈন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সলাপরামর্শ করে। গত এক সপ্তাহ আগে উভয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রিপনকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেবে। সে অনুসারে মঈন ও তার এক বন্ধু মিলে গত রবিবার এলাকায় রিপনের উপর হামলার জন্য খাসপাড়ার রাস্তার ধারে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকে। এদিকে রিপন প্রতিদিনের মত খাসপাড়া গ্রামের মাঠে বিল পাহারা দিয়ে রাত ১২টার দিকে বাড়ীর অদুরের একটি চায়ের দোকানে চা খেয়ে বাড়ী ফিরছিল। এসময় মঈন উদ্দিন ও তার এক সহযোগী বন্ধু মিলে রিপনের ওপর হামলা করে। মঈন প্রথমে পিছন দিক থেকে রিপনের মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ী মারে, রিপন রাস্তার উপর পড়ে গেলে দুজনে মিলে বড় টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে এবং খুচিয়ে খুচিয়ে রিপনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার লাশ খাসপাড়া রাস্তার পাশেই একটি ডোবার পানিতে পাটের জাগের তলায় লুকিয়ে রাখে। এরপর মঈন রাত তিনটার দিকে গ্রাম ছেড়ে জীবননগরে এক বন্ধুর বাড়ীতে আত্মগোপন করে। এদিকে রিপন বাড়ী না ফেরায় রিপনের পিতা মোতালেব ও পরিবার এবং গ্রামবাসীরা রিপনকে খুঁজতে থাকে ও রিপন হত্যার পিছনে মঈন জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহ করে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীরা জানতে পারে মঈন ও মঈনের ভাই খোকন এবং পিতা সামছদ্দিন বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছে। বেলা ৯টার দিকে বাড়ীর অদুরে রাস্তার পাশের একটি পাটজাগ দেওয়া ডোবায় রিপনের লাশ ভাসতে দেখে গ্রামবাসীরা পুলিশকে খবর দেয়। এসময় রিপনের লাশ পাওয়ার কথা শুনে মঈনের, বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতে উদ্যত হয় মঈনের মা মর্জিনা খাতুন, স্ত্রী মৌসুমি, ভাবী শান্তা । বাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এ খবরে গ্রামবাসীরা মঈনের পরিবারের প্রতি আরো সন্দেহ ঘনিভুত হয়। গ্রামবাসীরা তাদের বাড়ীতে তাদের আটক করে রাখে এবং পুলিশ গেলে তাদের আচরণ ও পরিবারের সদস্যদের পালিয়ে থাকার কথা জানায়। পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে মঈন উদ্দীনের মা, স্ত্রী ও ভাবীকে আটক করে এরপর বেলা ১টার দিকে পুলিশ এলাকার বাটকেমারী গ্রাম থেকে মঈন উদ্দীনের পিতা সামছদ্দিনকে আটক করে।
সর্বশেষ এই হত্যার প্রধান আসামী মঈন উদ্দীনকে হত্যাকান্ডের ১৪ ঘন্টা পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবননগর শহরের অদুরে পিয়ারাতলা গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে থেকে চুয়াডাঙ্গা ডিবির ওসি নাজমুল হুদার নেতৃত্বে এসআই ইব্রাহিম ও এসআই আশরাফের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালানো হয়। এসময় ঐ বাড়ীতে আত্মগোপন করা মঈনকে আটক করা হয়। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মঈন উদ্দীন রিপন হত্যার কথা স্বীকার করে। সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রিপন তার স্ত্রীকে মোবাইল ফোনে দিনের পর দিন উত্ত্যক্ত করায় মঈন ও তার এক সহযোগী রিপনকে হত্যা করেছে।
যেভাবে আটক হয় রিপন হত্যার প্রধান আসামী মঈন উদ্দীন: হত্যার প্রধান আসামী খাসপাড়ার সামছদ্দিনের ছেলে মঈন উদ্দীনকে হত্যা ঘটনার ১৪ ঘন্টার মধ্যে জীবননগর শহরের মঈনের এক বন্ধুর বাড়ী থেকে আটক করে ডিবির এস আই ইব্রাহিম
চুয়াডাঙ্গা ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় খাসপাড়া এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাসপাড়া গ্রামের সামছদ্দিনের ছেলে মঈন উদ্দীন ও প্রতিবেশী এবং দূর্সম্পকের মামাতো ভাই মোতালেবের ছেলে রিপনের সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তাই মঈনদ্দীন মালয়েশিয়া যাবার পর তার বন্ধু রিপনকে তার পরিবারের সকলকে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে যায়। কিন্তু গত ৬ মাস থেকে মঈন উদ্দীনের পিতা সামছদ্দিন  তার ছেলে মঈন উদ্দীনকে জানায়, তোমার বন্ধু রিপনের সাথে তোমার স্ত্রী মৌসুমী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। বাবার মুখে তার স্ত্রী এবং বন্ধুর এমন পরকিয়া সম্পর্কের কথা শুনে মঈন উদ্দীন বিদেশ থেকে বেশ কয়েকবার রিপনকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর গত ৬ মাস আগে বাড়ী এসেও হত্যার হুমকি অব্যাহত রাখলে গ্রামের মন্ডল মাতব্বররা বিষয়টি নিয়ে শালিস দরবার করে উভয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটায়। কিন্তু মঈন উদ্দীন মনে মনে রিপনকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।
পুলিশ সন্দেহভাজন মঈন উদ্দীনের পিতা সামছদ্দিন ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে আটক করলে মঈন উদ্দীন দুপুরে পুলিশের কাছে জানায়, রিপনকে সে নিজেই হত্যা করেছে। তার পরিবারের সদস্যদেরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু পুলিশ তার মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে বেলা আড়াইটার দিকে জীবননগর শহর থেকে মঈন উদ্দীনকে আটক করে।