ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ডাক্তার-পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০১৯
  • / ১৯১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে পিতার হত্যার ঘটনায় পুত্রের সংবাদ সম্মেলন
বিশেষ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের হাসনহাটি গ্রামে পূর্বশত্রুতার জের ধরে হেদায়েত আলী নামের একজনকে হত্যার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে তাঁর পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহতের স্ত্রী আনজিরা খাতুন, বড় মেয়ে আখিঁতারা খাতুন, ছোট ছেলে আকিমুল হোসেন, ছোট ছেলের স্ত্রী রুবিনা আক্তার ও বড় শ্যালক নাজিম উদ্দীন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত হেদায়েত আলীর মেজো ছেলে আক্তার হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গত ১৯ জুন রাত ৮টা ২৫ মিনিটে আমার পিতা হেদায়েত আলীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে আব্দুল কাদের, মাসুদ ওরফে বোমা মাসুদ, শাহিন আলী ও শহিদুল ইসলাম। তাঁকে উদ্ধার করে রাত ৯টা ৩০মিনিটে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ১১টায় সদর থানার এসআই অচিন্ত কুমার পাল হাসপাতালে পৌঁছে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। পরদিন ২০ জুন সকালে মর্গে নেওয়া হয় আমার পিতাকে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আবুল হোসেন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. শামীম কবির। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন দুপুরের পর হাসানহাটি গ্রামে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের হাতে আমার পিতা হেদায়েত আলী নিহত হয়েছেন রাতে এবং পরদিন তাঁর ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।’
কিন্তু রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহতের মরদেহ মর্গে আনা হয়েছে (১৯ জুন) ১১টা ২০ মিনিট (এএম) সময়ে। অর্থাৎ সকাল ১১টা ২০ মিনিটে। পরীক্ষার দিন ও ক্ষণ একই দিন সকাল ১১টা ৩০ মিনিট। রিপোর্টে আরও উল্লেখ রয়েছে, হেদায়েত আলী মারা গেছেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া (হার্ট অ্যাটাক) বন্ধ হয়ে। তাঁর শরীরে কোথাও তেমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বাকি সবকিছুই স্বাভাবিক।
আক্তার হোসেন তাঁর লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার পিতার বাঁ কানে, চোয়ালে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন থাকলেও তা আদৌ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করেননি ময়না তদন্তকারী ডা. মো. আবুল হোসেন ও ডা. মো. শামীম কবির। তাঁদের দেওয়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুসারে আমার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ সমস্ত বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন চুয়াডাঙ্গার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম খাইরুল আলম। সিভিল সার্জন ও আরও দুজন ডাক্তার একত্রে আমার পিতার হত্যাকারীদের সঙ্গে হাতমিলিয়ে মিথ্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন। তাঁরা দুর্নীতি করে সঠিক রিপোর্ট দেননি এবং প্রকৃত সত্য গোপন করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার রাতে আমার পিতার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই অচিন্ত কুমার পাল। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে এবং বাঁ কানে ও চোয়ালে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন থাকলেও সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং সবকিছু স্বাভাবিক আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় আমি, আমার ভাইসহ অনেকে আঘাতের চিহ্নের ব্যাপারে তাঁকে অবগত করলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি ওই আঘাতের চিহ্ন সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেননি।’
মামলার বর্ণনা মতে, নিহত হেদায়েত আলীর ছোট শ্যালক আছির উদ্দীনের ইটভাটার জায়গা-জমির মালিকানা ও দখলদারিত্ব নিয়ে হাসনহাটি গ্রামের মৃত সনজের আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল পরিবারটির। পূর্ববিরোধের জের ধরে একই গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কাদের (৪৫), রমজান আলীর ছেলে মাসুদ ওরফে বোমা মাসুদ (৩০) ও শাহীন আলী (৩৪) এবং সনজের আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০) হেদায়েত আলীকে মারপিট করে গুরুতর জখম করেন। ১৯ জুন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসনহাটি গ্রামের জমিদার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সব হামলাকারীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মেজো ছেলে আক্তার হোসেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ডাক্তার-পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

আপলোড টাইম : ১০:৩৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০১৯

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে পিতার হত্যার ঘটনায় পুত্রের সংবাদ সম্মেলন
বিশেষ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের হাসনহাটি গ্রামে পূর্বশত্রুতার জের ধরে হেদায়েত আলী নামের একজনকে হত্যার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে তাঁর পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহতের স্ত্রী আনজিরা খাতুন, বড় মেয়ে আখিঁতারা খাতুন, ছোট ছেলে আকিমুল হোসেন, ছোট ছেলের স্ত্রী রুবিনা আক্তার ও বড় শ্যালক নাজিম উদ্দীন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত হেদায়েত আলীর মেজো ছেলে আক্তার হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গত ১৯ জুন রাত ৮টা ২৫ মিনিটে আমার পিতা হেদায়েত আলীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে আব্দুল কাদের, মাসুদ ওরফে বোমা মাসুদ, শাহিন আলী ও শহিদুল ইসলাম। তাঁকে উদ্ধার করে রাত ৯টা ৩০মিনিটে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ১১টায় সদর থানার এসআই অচিন্ত কুমার পাল হাসপাতালে পৌঁছে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। পরদিন ২০ জুন সকালে মর্গে নেওয়া হয় আমার পিতাকে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আবুল হোসেন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. শামীম কবির। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন দুপুরের পর হাসানহাটি গ্রামে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের হাতে আমার পিতা হেদায়েত আলী নিহত হয়েছেন রাতে এবং পরদিন তাঁর ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।’
কিন্তু রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহতের মরদেহ মর্গে আনা হয়েছে (১৯ জুন) ১১টা ২০ মিনিট (এএম) সময়ে। অর্থাৎ সকাল ১১টা ২০ মিনিটে। পরীক্ষার দিন ও ক্ষণ একই দিন সকাল ১১টা ৩০ মিনিট। রিপোর্টে আরও উল্লেখ রয়েছে, হেদায়েত আলী মারা গেছেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া (হার্ট অ্যাটাক) বন্ধ হয়ে। তাঁর শরীরে কোথাও তেমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বাকি সবকিছুই স্বাভাবিক।
আক্তার হোসেন তাঁর লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার পিতার বাঁ কানে, চোয়ালে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন থাকলেও তা আদৌ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করেননি ময়না তদন্তকারী ডা. মো. আবুল হোসেন ও ডা. মো. শামীম কবির। তাঁদের দেওয়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুসারে আমার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ সমস্ত বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন চুয়াডাঙ্গার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম খাইরুল আলম। সিভিল সার্জন ও আরও দুজন ডাক্তার একত্রে আমার পিতার হত্যাকারীদের সঙ্গে হাতমিলিয়ে মিথ্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন। তাঁরা দুর্নীতি করে সঠিক রিপোর্ট দেননি এবং প্রকৃত সত্য গোপন করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার রাতে আমার পিতার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই অচিন্ত কুমার পাল। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে এবং বাঁ কানে ও চোয়ালে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন থাকলেও সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং সবকিছু স্বাভাবিক আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় আমি, আমার ভাইসহ অনেকে আঘাতের চিহ্নের ব্যাপারে তাঁকে অবগত করলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি ওই আঘাতের চিহ্ন সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেননি।’
মামলার বর্ণনা মতে, নিহত হেদায়েত আলীর ছোট শ্যালক আছির উদ্দীনের ইটভাটার জায়গা-জমির মালিকানা ও দখলদারিত্ব নিয়ে হাসনহাটি গ্রামের মৃত সনজের আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল পরিবারটির। পূর্ববিরোধের জের ধরে একই গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কাদের (৪৫), রমজান আলীর ছেলে মাসুদ ওরফে বোমা মাসুদ (৩০) ও শাহীন আলী (৩৪) এবং সনজের আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০) হেদায়েত আলীকে মারপিট করে গুরুতর জখম করেন। ১৯ জুন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসনহাটি গ্রামের জমিদার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সব হামলাকারীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মেজো ছেলে আক্তার হোসেন।