ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ট্রেনের দরজায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ; মেলেনি সন্ধান!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ৪৬৫ বার পড়া হয়েছে

জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে খ্রিস্টান যুবক নিখোঁজ

সহযাত্রী অবুন ও তাঁর স্ত্রী স্টেশন মাস্টারের হেফাজতে : শাওনের সন্ধানে মাঠে তদন্তে নেমেছে পুলিশ
আফজালুল হক:
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় আসার পথে ট্রেনের মধ্যে থেকে শাওন (২৫) নামের এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। তবে ট্রেনের দরজায় মাথার ঘেনু ও রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিষয়টি তদন্তের জন্য শাওনের সঙ্গে থাকা অবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রীকে মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের হেফাজতে রাখা হয়। খবর দেওয়া হয় নিখোঁজ শাওনের পরিবারের সদস্যদের। নিখোঁজ শাওন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের মিশনপাড়ার খ্রিস্টান ধর্মালম্বী শউল নওদার পুত্র। তাঁর সঙ্গে থাকা অবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রীর বাড়িও একই এলাকার। এ ঘটনার পর মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রায় ১ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি শেষে খুলনার উদ্দেশ্য ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে।
ট্রেনের যাত্রী ব্যাক কর্মকর্তা শরিফ বলেন, জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ‘চ’ বগিতে ওঠেন শাওন, অবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রী। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর শাওন তাঁর ছিট থেকে উঠে মোবাইলে কথা বলতে বলতে দরজার দিকে যান। অনেকক্ষণ যাবৎ ফিরে না এলে সন্দেহ হলে সবাই তাঁকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। শাওনকে না পেয়ে বিষয়টি ট্রেনে দায়িত্বরত স্টাফদের জানানো হয়। মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনটি থামলে সবকটি বগিতে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে শাওন যেই দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে মাথার ঘেনু ও রক্তের ছিটেফোঁটা পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে ট্রেনযাত্রী ও স্টাফদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি স্টেশন মাস্টারকে জানালে শাওনের সঙ্গে থাকা দুজনকে হেফাজতে নেন স্টেশন মাস্টার। পরে প্রায়ই ১ ঘণ্টা পর ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের মধ্য থেকে বলতে শোনা গেছে শাওন দরজার সামনে মাথা বের করে মোবাইল ফোনে এ কথা বলছিল। এসময় কেউ তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, নাকি মাথা বের করার কারণে সিগন্যাল খুটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে শাওনের সঙ্গে থাকা অবুন পাঠান বলেন, ‘জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় উদ্দেশ্য আমি, আমার স্ত্রী ও আমার বড় ভাইয়ের শ্যালক ট্রেনে উঠি। কিছুক্ষন পর শাওনের একটি ফোন আসলে সে ট্রেনের দরজার কাছে চলে যায়। অনেকক্ষণ না ফিরলে তাকে কল করলে মোবাইলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কিন্তু তাকে না পেয়ে বিষয়টি ট্রেনে থাকা দায়িত্বরত স্টাফদেরকে জানাই। পরে তারাও সব বগিতে খুঁজেও শাওনকে পায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো নিজের সিটে বসেছিলাম। দরজার নিকট আরও লোক ছিল। পরে আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলল যে মাথা বের করে ফোনে কথা বলছিল শাওন। তবে ধারণা করা হচ্ছে মোবাইলে কথা বলার সময় কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। না হয় মাথা বের করার কারণে সিগন্যাল খুঁটিতে বাড়ি লেগে পড়ে গেছে। পরে ট্রেনে থাকা পুলিশ সদস্যরা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের নিকট হস্তান্তর করে।’
মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাজমুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিখোঁজ শাওনের সঙ্গে থাকা লোকজনের অভিযোগ, শাওন ট্রেন থেকে পড়ে গেছে। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, এটা মির্জাপুর স্টেশন এলাকার বাইরে। আর যেখানে পড়েছে, সেটা মৌচাক লোকাল স্টেশনের কাছাকাছি। জয়দেবপুর-মির্জাপুর স্টেশনের মাঝামাঝি হওয়ায় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ইতোমধ্যে শাওনকে খোঁজার জন্য পুলিশ কাজ করছে। এছাড়াও শাওনের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। রাতেই তারা রওনা দিয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য শাওনের সঙ্গে থাকা আবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু এখনো শুনিনি। যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাইলে দুঃখজনক। আমি এখনি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।’ এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ২টার সময়ও শাওনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ট্রেনের দরজায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ; মেলেনি সন্ধান!

আপলোড টাইম : ১০:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে খ্রিস্টান যুবক নিখোঁজ

সহযাত্রী অবুন ও তাঁর স্ত্রী স্টেশন মাস্টারের হেফাজতে : শাওনের সন্ধানে মাঠে তদন্তে নেমেছে পুলিশ
আফজালুল হক:
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় আসার পথে ট্রেনের মধ্যে থেকে শাওন (২৫) নামের এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। তবে ট্রেনের দরজায় মাথার ঘেনু ও রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিষয়টি তদন্তের জন্য শাওনের সঙ্গে থাকা অবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রীকে মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের হেফাজতে রাখা হয়। খবর দেওয়া হয় নিখোঁজ শাওনের পরিবারের সদস্যদের। নিখোঁজ শাওন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের মিশনপাড়ার খ্রিস্টান ধর্মালম্বী শউল নওদার পুত্র। তাঁর সঙ্গে থাকা অবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রীর বাড়িও একই এলাকার। এ ঘটনার পর মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রায় ১ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি শেষে খুলনার উদ্দেশ্য ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে।
ট্রেনের যাত্রী ব্যাক কর্মকর্তা শরিফ বলেন, জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ‘চ’ বগিতে ওঠেন শাওন, অবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রী। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর শাওন তাঁর ছিট থেকে উঠে মোবাইলে কথা বলতে বলতে দরজার দিকে যান। অনেকক্ষণ যাবৎ ফিরে না এলে সন্দেহ হলে সবাই তাঁকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। শাওনকে না পেয়ে বিষয়টি ট্রেনে দায়িত্বরত স্টাফদের জানানো হয়। মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনটি থামলে সবকটি বগিতে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে শাওন যেই দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে মাথার ঘেনু ও রক্তের ছিটেফোঁটা পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে ট্রেনযাত্রী ও স্টাফদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি স্টেশন মাস্টারকে জানালে শাওনের সঙ্গে থাকা দুজনকে হেফাজতে নেন স্টেশন মাস্টার। পরে প্রায়ই ১ ঘণ্টা পর ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের মধ্য থেকে বলতে শোনা গেছে শাওন দরজার সামনে মাথা বের করে মোবাইল ফোনে এ কথা বলছিল। এসময় কেউ তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, নাকি মাথা বের করার কারণে সিগন্যাল খুটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে শাওনের সঙ্গে থাকা অবুন পাঠান বলেন, ‘জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় উদ্দেশ্য আমি, আমার স্ত্রী ও আমার বড় ভাইয়ের শ্যালক ট্রেনে উঠি। কিছুক্ষন পর শাওনের একটি ফোন আসলে সে ট্রেনের দরজার কাছে চলে যায়। অনেকক্ষণ না ফিরলে তাকে কল করলে মোবাইলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কিন্তু তাকে না পেয়ে বিষয়টি ট্রেনে থাকা দায়িত্বরত স্টাফদেরকে জানাই। পরে তারাও সব বগিতে খুঁজেও শাওনকে পায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো নিজের সিটে বসেছিলাম। দরজার নিকট আরও লোক ছিল। পরে আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলল যে মাথা বের করে ফোনে কথা বলছিল শাওন। তবে ধারণা করা হচ্ছে মোবাইলে কথা বলার সময় কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। না হয় মাথা বের করার কারণে সিগন্যাল খুঁটিতে বাড়ি লেগে পড়ে গেছে। পরে ট্রেনে থাকা পুলিশ সদস্যরা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের নিকট হস্তান্তর করে।’
মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাজমুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিখোঁজ শাওনের সঙ্গে থাকা লোকজনের অভিযোগ, শাওন ট্রেন থেকে পড়ে গেছে। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, এটা মির্জাপুর স্টেশন এলাকার বাইরে। আর যেখানে পড়েছে, সেটা মৌচাক লোকাল স্টেশনের কাছাকাছি। জয়দেবপুর-মির্জাপুর স্টেশনের মাঝামাঝি হওয়ায় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ইতোমধ্যে শাওনকে খোঁজার জন্য পুলিশ কাজ করছে। এছাড়াও শাওনের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। রাতেই তারা রওনা দিয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য শাওনের সঙ্গে থাকা আবুন কাঠান ও তাঁর স্ত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু এখনো শুনিনি। যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাইলে দুঃখজনক। আমি এখনি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।’ এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ২টার সময়ও শাওনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।