টিআইবির প্রতিবেদন : নিরপেক্ষতাই দুদকের জবাব
- আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
- / ১৯৫ বার পড়া হয়েছে
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও সংস্থাটির কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারবিরোধীদের অভিযোগ, এটি পক্ষপাতদুষ্ট। সরকারের মনোবাসনা বাস্তবায়নে সবসময় পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে থাকে। বিরোধীদের নাজেহাল ও হেনস্তা করতেই বেশি মনোযোগী। আর সরকারদলীয় লোকজনকে ‘কলঙ্কমুক্ত’ করতে দুদককে ব্যবহার করছে সরকার। তবে দুদকের পক্ষ থেকে বারবার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে দেশে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যায়। তবে এবার সংস্থাটির বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ : বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর একটি ফলোআপ গবেষণা’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দুদক কাগজ-কলমে স্বাধীন হলেও বাস্তবে স্বাধীন, এমন বলা যাবে না। অভিযুক্তদের মধ্যে যাদের পরিচয় সরকারের অবস্থানবিরোধী, তাদের অনুসন্ধান করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে দুদক; আর যাদের পরিচয় সরকারের পক্ষে, তাদের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অনীহা দেখায়।’ দুদক সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়, দুদক কি সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে? টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘কোন ঘটনায় হাত দেওয়া যাবে, আর কোন ঘটনায় হাত দেওয়া যাবে নাÑ দুদকের কাজের ক্ষেত্রে এই বিবেচনার প্রতিফলন দেখা যায়। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাই এই প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে।’
দুর্নীতি দমনে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা কতটুকু এর প্রতিফলন দেখা যায়, সরকারি কর্মচারী আইন ও মানিলন্ডারিং আইন সংশোধনের ঘটনায়। অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা যাবে নাÑ এই আইন দুদকের ক্ষমতা খর্ব করে। এটি অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। একই সাথে মানিলন্ডারিং আইন সংশোধন করে দুদককে আইনগতভাবে দুর্বল করা হয়েছে।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়, দুদক ক্ষমতাসীন দল-জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা দেখানোর এবং বিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার প্রমাণ মেলে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দুদকের কার্যক্রমে। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির ঘটনা মোকাবেলায় দুদক নিরপেক্ষ আচরণ দেখাতে সমর্থ হয়নি। কমিশন পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করেছে। দুদকের প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। জনগণ মনে করে, দুদক ছোটখাটো দুর্নীতির প্রতি বেশি মনোযোগী। বড় দুর্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সাফল্য নেই।
দুদকের দক্ষ কর্মীর সঙ্কট আছে, যে জন্য দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সাড়া দেওয়ার হার কম। ২০১৬-১৮ সালে ৪৭ হাজার ৫৪৯টি অভিযোগের মধ্যে তিন হাজার ২০৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানে গৃহীত হয়, যা মোট সংখ্যার মাত্র ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এটি ৬৬ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা। তবে দুদকের মতে, বেশির ভাগ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে না। অন্য দিকে, গত কয়েক বছরে দুদকের দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার হার গড়ে ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ হলেও তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম।
আমাদের এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু দুদককে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটিকে কার্যকর সংস্থা হিসেবে গড়তে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছেÑ এ ব্যাপারে সরকার যে উদাসীন, সংস্থার অর্থ ও মানবসম্পদের বিষয়ে দৃষ্টি দিলেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০১৬-১৮ পর্যন্ত দুদকের বাজেটের গড় জাতীয় বাজেটের শূন্য দশমিক শূন্য ৩১ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড শূন্য দশমিক দুই শতাংশ। এর ফলে প্রশিক্ষণে পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় কর্মীদের কার্যকরতা, দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই দুদককে কার্যকর করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। আর দুদক যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করে তাই হবে যুতসই জবাব।