ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

টালমাটাল ছাত্রলীগ অভিযোগ বিস্তর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ২৪৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
একের পর এক অভিযোগ জমেছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে। কমিটিতে আর্থিক লেনদেন, মাদক সেবন, টেন্ডার ও তদবির বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। ছাত্রীগ নেতাদের কর্মকা- ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে মুখরোচক নানা আলোচনা। এ নিয়ে বিব্রত মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলীয় ফোরামে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্বয়ং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও। প্রয়োজনে বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
জানা গেছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে। ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার কাছেও একাধিকবার বর্তমান কমিটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রয়োজনে কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ শনিবার রাতে গণভবনে দলটির সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় ছাত্রলীগ বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখান শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ তথ্য জানান। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গতকাল বিষয়টি অনেকটাই স্বীকার করেছেন।
সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে সাংগঠনিক কাজে নানা গাফিলতি দেখা যায়। দীর্ঘ ১৪ মাসে একটি ইউনিটেরও কমিটি করতে পারেননি তারা। জেলা কমিটিকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে কয়েকটি উপজেলা কমিটি দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে উঠেছে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ। কয়েকশ কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্যে বাধা দূর করতে সামান্য অজুহাতে ভেঙে দেয়া হয় জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি। কয়েকমাস পর সম্মেলন করলেও দীর্ঘ দুই মাসে কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি। একই অবস্থা ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের। বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার অভিযোগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের টেন্ডার থেকেও ১ কোটি টাকা নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠেছে, প্রায়ই তিনি সাভারে গিয়ে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডায় বসেন। ওই এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও জমি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্য। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির তদবিররও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ। তৃণমূলের নেতারা তাদের খুব একটা সাক্ষাৎ পান না। বিশেষ করে ছাত্রলীগ সভাপতিকে অনেক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ফোন করেও পান না। ঢাকায় এলেও শোভনের সাক্ষাৎ মেলে না। মধুর ক্যান্টিনেও তারা অনিয়মিত। শীর্ষ নেতারা মধুতে মাঝেমঝে আসেন দুপুরের পর। অল্প সময় থেকেই চলে যান তারা। ফলে ছাত্রলীগের মধুর ক্যান্টিন কেন্দ্রিক রাজনীতি এখন অনেকটাই নিষ্প্রাণ। সময় দেন না দলীয় কার্যালয়েও। তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ফলে তৃণমূলে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অঘটন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও জড়াচ্ছেন নানা অপকর্মে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে টেন্ডার বাণিজ্যে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হয়ে বিভিন্ন জেলা ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সুবিধা েিনেচ্ছন। গত শুক্রবার সিলেট থেকে ফেরার পথে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার এবং তাকে এগিয়ে দিতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিমানবন্দরের টারমার্কে চলে আসার ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকে বিরক্ত করেছে।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্ধারিত সময় সকাল ১১টায় এলেও শোভন-রাব্বানী আসেন বিকেল ৩টায়। ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রী ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছিলেন। প্রচ- গরমে ভোর থেকেই নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে অবস্থান করায় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুলতান মোহাম্মদ ওয়াসী নামে সংগঠনটির একজন কর্মী। এ ঘটনার পর সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে তখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আসার অনেক পরে তারা আসেন। সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদের একটি অনুষ্ঠানেও একই ঘটনা ঘটে। এসব বিষয় দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাই ভালোভাবে নেননি।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার প্রতিবাদে ওইদিন সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন পদবঞ্চিতরা। ওই সময় শোভন-রাব্বানীর অনুসারীরা পদবঞ্চিতদের ওপর হামলা করে। এতে আহত হয়ে পড়েন নারী নেত্রীসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর থেকে বিতর্কিতদের তালিকা করে তাদের বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন ও অনশন করেন ছাত্রলীগের ওই অংশটি। টিএসসি ভবনে আন্দোলনকারী একজন নারী সদস্যকে লাঞ্ছিত করেন স্বয়ং গোলাম রাব্বানী। এ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনায় পড়তে হয় তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের সাবেক অনেক সিনিয়র নেতা। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী বরাবরেও স্মারকলিপি দেন। প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিতদের বাদ দিতে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিলেও তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেননি তারা। এমনকি বিতর্কিত ২০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেই মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা প্রভৃতি মাদক সেবন করেন। এরকম অসংখ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে। এমন কি দলীয় কার্যালয়েও দরজা আটকে মাদক সেবন করেছেন তারা। বিষয়টি জানতে পেরে দলীয় কার্যালয়ে শোভন-রাব্বানীর প্রবেশে নিষিদ্ধ করেন প্রধানমন্ত্রী। সভাপতি শোভনকে কয়েক বছর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে গাঁজাসহ আটক করেছিল পুলিশ। সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ছবিসহ তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শোভন বিবাহিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্ত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ পায়। এ নিয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলেও তিনি বিভিন্নভাবে তা এড়িয়ে যান।
শোভনের ছোট ভাই রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। অভিযোগ উঠেছে ভাই সভাপতি হওয়ায় ছোটন তার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে (যারা রাজনীতির সঙ্গে কখনোই সক্রিয় ছিল না) কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়ও ছোটন ও তার বন্ধুরা বিকল্প গ্রুপ তৈরি করে নানা অপকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ছোটনের তালিকায় যারা নেতা হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াত পরিবারের, অছাত্র কিংবা ব্যবসায়ী। এক জামায়াত নেতার ছেলেকে ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক বানিয়েছেন ছোটন।
এদিকে ‘ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর’ এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। জানা যায়, গণভবনের ওই বৈঠকের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কর্মকা- ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের এমন নেতা চাই না, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে’।
এসব বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে বলেন, শনিবার গণভবনের বৈঠকটি ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়া সংক্রান্ত ছিল না। সেখানে ছাত্রলীগের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। ছাত্রলীগের কর্মকা- নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, কিছু কিছু ব্যাপারে তো থাকতেই পারেন। ছাত্রলীগের বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু কিছু ব্যাপার আছে, সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কন্সার্ন থাকতেই পারেন, এটা খুব স্বাভাবিক। (সূত্র- ভোরের কাগজ)

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

টালমাটাল ছাত্রলীগ অভিযোগ বিস্তর

আপলোড টাইম : ১০:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
একের পর এক অভিযোগ জমেছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে। কমিটিতে আর্থিক লেনদেন, মাদক সেবন, টেন্ডার ও তদবির বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। ছাত্রীগ নেতাদের কর্মকা- ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে মুখরোচক নানা আলোচনা। এ নিয়ে বিব্রত মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলীয় ফোরামে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্বয়ং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও। প্রয়োজনে বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
জানা গেছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে। ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার কাছেও একাধিকবার বর্তমান কমিটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রয়োজনে কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ শনিবার রাতে গণভবনে দলটির সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় ছাত্রলীগ বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখান শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ তথ্য জানান। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গতকাল বিষয়টি অনেকটাই স্বীকার করেছেন।
সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে সাংগঠনিক কাজে নানা গাফিলতি দেখা যায়। দীর্ঘ ১৪ মাসে একটি ইউনিটেরও কমিটি করতে পারেননি তারা। জেলা কমিটিকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে কয়েকটি উপজেলা কমিটি দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে উঠেছে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ। কয়েকশ কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্যে বাধা দূর করতে সামান্য অজুহাতে ভেঙে দেয়া হয় জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি। কয়েকমাস পর সম্মেলন করলেও দীর্ঘ দুই মাসে কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি। একই অবস্থা ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের। বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার অভিযোগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের টেন্ডার থেকেও ১ কোটি টাকা নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠেছে, প্রায়ই তিনি সাভারে গিয়ে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডায় বসেন। ওই এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও জমি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্য। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির তদবিররও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ। তৃণমূলের নেতারা তাদের খুব একটা সাক্ষাৎ পান না। বিশেষ করে ছাত্রলীগ সভাপতিকে অনেক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ফোন করেও পান না। ঢাকায় এলেও শোভনের সাক্ষাৎ মেলে না। মধুর ক্যান্টিনেও তারা অনিয়মিত। শীর্ষ নেতারা মধুতে মাঝেমঝে আসেন দুপুরের পর। অল্প সময় থেকেই চলে যান তারা। ফলে ছাত্রলীগের মধুর ক্যান্টিন কেন্দ্রিক রাজনীতি এখন অনেকটাই নিষ্প্রাণ। সময় দেন না দলীয় কার্যালয়েও। তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ফলে তৃণমূলে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অঘটন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও জড়াচ্ছেন নানা অপকর্মে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে টেন্ডার বাণিজ্যে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হয়ে বিভিন্ন জেলা ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সুবিধা েিনেচ্ছন। গত শুক্রবার সিলেট থেকে ফেরার পথে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার এবং তাকে এগিয়ে দিতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিমানবন্দরের টারমার্কে চলে আসার ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকে বিরক্ত করেছে।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্ধারিত সময় সকাল ১১টায় এলেও শোভন-রাব্বানী আসেন বিকেল ৩টায়। ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রী ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছিলেন। প্রচ- গরমে ভোর থেকেই নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে অবস্থান করায় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুলতান মোহাম্মদ ওয়াসী নামে সংগঠনটির একজন কর্মী। এ ঘটনার পর সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে তখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আসার অনেক পরে তারা আসেন। সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদের একটি অনুষ্ঠানেও একই ঘটনা ঘটে। এসব বিষয় দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাই ভালোভাবে নেননি।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার প্রতিবাদে ওইদিন সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন পদবঞ্চিতরা। ওই সময় শোভন-রাব্বানীর অনুসারীরা পদবঞ্চিতদের ওপর হামলা করে। এতে আহত হয়ে পড়েন নারী নেত্রীসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর থেকে বিতর্কিতদের তালিকা করে তাদের বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন ও অনশন করেন ছাত্রলীগের ওই অংশটি। টিএসসি ভবনে আন্দোলনকারী একজন নারী সদস্যকে লাঞ্ছিত করেন স্বয়ং গোলাম রাব্বানী। এ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনায় পড়তে হয় তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের সাবেক অনেক সিনিয়র নেতা। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী বরাবরেও স্মারকলিপি দেন। প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিতদের বাদ দিতে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিলেও তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেননি তারা। এমনকি বিতর্কিত ২০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেই মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা প্রভৃতি মাদক সেবন করেন। এরকম অসংখ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে। এমন কি দলীয় কার্যালয়েও দরজা আটকে মাদক সেবন করেছেন তারা। বিষয়টি জানতে পেরে দলীয় কার্যালয়ে শোভন-রাব্বানীর প্রবেশে নিষিদ্ধ করেন প্রধানমন্ত্রী। সভাপতি শোভনকে কয়েক বছর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে গাঁজাসহ আটক করেছিল পুলিশ। সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ছবিসহ তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শোভন বিবাহিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্ত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ পায়। এ নিয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলেও তিনি বিভিন্নভাবে তা এড়িয়ে যান।
শোভনের ছোট ভাই রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। অভিযোগ উঠেছে ভাই সভাপতি হওয়ায় ছোটন তার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে (যারা রাজনীতির সঙ্গে কখনোই সক্রিয় ছিল না) কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়ও ছোটন ও তার বন্ধুরা বিকল্প গ্রুপ তৈরি করে নানা অপকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ছোটনের তালিকায় যারা নেতা হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াত পরিবারের, অছাত্র কিংবা ব্যবসায়ী। এক জামায়াত নেতার ছেলেকে ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক বানিয়েছেন ছোটন।
এদিকে ‘ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর’ এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। জানা যায়, গণভবনের ওই বৈঠকের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কর্মকা- ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের এমন নেতা চাই না, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে’।
এসব বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে বলেন, শনিবার গণভবনের বৈঠকটি ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়া সংক্রান্ত ছিল না। সেখানে ছাত্রলীগের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। ছাত্রলীগের কর্মকা- নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, কিছু কিছু ব্যাপারে তো থাকতেই পারেন। ছাত্রলীগের বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু কিছু ব্যাপার আছে, সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কন্সার্ন থাকতেই পারেন, এটা খুব স্বাভাবিক। (সূত্র- ভোরের কাগজ)