ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঝুলে আছে মাদকের দেড় লাখ মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৫:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: বর্তমানে দেশের নি¤œ আদালতসমূহে দেড় লাখ মাদক মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৩০ হাজার মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় বিচারাধীন সব মাদক মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারকদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সাক্ষী হাজির করে মামলা নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), ওসি ও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। ইয়াবা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, মাদকের বির”দ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়েছে। গ্রেফতার হচ্ছে মাদক কারবারীরা। আবার বন্দুকযুদ্ধে মারাও যাচ্ছে। কিন্তু সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলার বিচার শেষ করা যাচ্ছে না। এটা কেন? তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ বলেন, আদালতগুলোতে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন। বিচারক সংখ্যাও অপ্রতুল। সাক্ষীও নানা আশঙ্কায় অনেক সময় আদালতে সাক্ষ্য দিতে চান না। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬৪টি জেলা আদালতে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯২টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৪টি মামলা। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ২৫৯টি মামলা। এ সময়ে মাদকের নতুন মামলা এসেছে ৭ হাজার ২০৩টি। প্রশাসন আরও জানায়, ঢাকার আদালতে ২৫ হাজার ৪২৫টি, চট্টগ্রামে ১৪ হাজার ৪৪৫টি, কুমিল্লায় ৭ হাজার ৮৯১টি, নারায়ণগঞ্জে ৭ হাজার ১৪৩টি, ময়মনসিংহে ৬ হাজার ৮০৪টি, রাজশাহীতে ৬ হাজার ৮৩টি, কক্সবাজারে ৫ হাজার ৭১১টি, যশোরে ৪ হাজার ৮৪১টি, গাজীপুরে ৪ হাজার ২৯১টি, নওগাঁয় ৩ হাজার ৯৮৪টি, বগুড়ায় ৩ হাজার ৪৯০টি, টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৪০৩টি, পাবনায় ৩ হাজার ২৪০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
মামলা দ্র”ত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইন কমিশন এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, সাক্ষ্যগ্রহণে বিলম্ব মামলার দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ। ফৌজদারি মামলায় পুলিশকে দ্র”ত সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া রায় প্রদানে অহেতুক বিলম্ব পরিহার করে যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে বিচারকদের রায় দেওয়া উচিত। ফৌজদারি মামলাসমূহের ক্ষেত্রে সরকারি কৌঁসুলিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। সেই সঙ্গে তাদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন ও যথেষ্ট পরিমাণ ফি দেওয়া প্রয়োজন। এতে সত্ ও যোগ্য আইনজীবীরা আকৃষ্ট হতে পারেন। এদিকে গতকাল হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ইয়াবা মামলার আসামি মিজানুর রহমান। তার কাছ থেকে ছয়শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের পহেলা ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর থানায় মামলা করা হয়।
এ মামলায় আসামির পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী ফজলুর রহমান বলেন, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুর” হয়নি। বিচার বিলম্বের জন্য এভাবে কতদিন একজন ব্যক্তি কারাগারে থাকবে? এ পর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা কী করছেন? তিন বছরেও কেন একজন সাক্ষীও হাজির করা গেল না? শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামি মিজানকে অন্তর্র্বতীকালীন জামিন দেন। পাশাপাশি নিম্ন আদালতসমূহে বিচারাধীন সকল মাদক মামলা দ্র”ত নিষ্পত্তিতে সাক্ষী হাজিরের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আদালতের আইন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। যদি মামলার বিচার বিলম্বে তাদের কোনো ধরনের গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন হাইকোর্ট।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঝুলে আছে মাদকের দেড় লাখ মামলা

আপলোড টাইম : ১১:৪৫:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন: বর্তমানে দেশের নি¤œ আদালতসমূহে দেড় লাখ মাদক মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৩০ হাজার মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় বিচারাধীন সব মাদক মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারকদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সাক্ষী হাজির করে মামলা নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), ওসি ও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। ইয়াবা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, মাদকের বির”দ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়েছে। গ্রেফতার হচ্ছে মাদক কারবারীরা। আবার বন্দুকযুদ্ধে মারাও যাচ্ছে। কিন্তু সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলার বিচার শেষ করা যাচ্ছে না। এটা কেন? তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ বলেন, আদালতগুলোতে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন। বিচারক সংখ্যাও অপ্রতুল। সাক্ষীও নানা আশঙ্কায় অনেক সময় আদালতে সাক্ষ্য দিতে চান না। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬৪টি জেলা আদালতে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯২টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৪টি মামলা। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ২৫৯টি মামলা। এ সময়ে মাদকের নতুন মামলা এসেছে ৭ হাজার ২০৩টি। প্রশাসন আরও জানায়, ঢাকার আদালতে ২৫ হাজার ৪২৫টি, চট্টগ্রামে ১৪ হাজার ৪৪৫টি, কুমিল্লায় ৭ হাজার ৮৯১টি, নারায়ণগঞ্জে ৭ হাজার ১৪৩টি, ময়মনসিংহে ৬ হাজার ৮০৪টি, রাজশাহীতে ৬ হাজার ৮৩টি, কক্সবাজারে ৫ হাজার ৭১১টি, যশোরে ৪ হাজার ৮৪১টি, গাজীপুরে ৪ হাজার ২৯১টি, নওগাঁয় ৩ হাজার ৯৮৪টি, বগুড়ায় ৩ হাজার ৪৯০টি, টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৪০৩টি, পাবনায় ৩ হাজার ২৪০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
মামলা দ্র”ত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইন কমিশন এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, সাক্ষ্যগ্রহণে বিলম্ব মামলার দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ। ফৌজদারি মামলায় পুলিশকে দ্র”ত সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া রায় প্রদানে অহেতুক বিলম্ব পরিহার করে যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে বিচারকদের রায় দেওয়া উচিত। ফৌজদারি মামলাসমূহের ক্ষেত্রে সরকারি কৌঁসুলিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। সেই সঙ্গে তাদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন ও যথেষ্ট পরিমাণ ফি দেওয়া প্রয়োজন। এতে সত্ ও যোগ্য আইনজীবীরা আকৃষ্ট হতে পারেন। এদিকে গতকাল হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ইয়াবা মামলার আসামি মিজানুর রহমান। তার কাছ থেকে ছয়শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের পহেলা ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর থানায় মামলা করা হয়।
এ মামলায় আসামির পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী ফজলুর রহমান বলেন, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুর” হয়নি। বিচার বিলম্বের জন্য এভাবে কতদিন একজন ব্যক্তি কারাগারে থাকবে? এ পর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা কী করছেন? তিন বছরেও কেন একজন সাক্ষীও হাজির করা গেল না? শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামি মিজানকে অন্তর্র্বতীকালীন জামিন দেন। পাশাপাশি নিম্ন আদালতসমূহে বিচারাধীন সকল মাদক মামলা দ্র”ত নিষ্পত্তিতে সাক্ষী হাজিরের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আদালতের আইন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। যদি মামলার বিচার বিলম্বে তাদের কোনো ধরনের গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন হাইকোর্ট।