ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জেলখানা থেকে আসে নির্দেশনা, হত্যাকা- ঘটায় ভাড়াটে খুনিরা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২৮৬ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং
মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুর সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামে যুবলীগের নেতা মাছ ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান (৩৬) ও হাসানুজ্জামান (৪৪) জোড়া খুনের মামলার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় মিলনায়তনে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা এ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। আটক আটজনের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আলমডাঙ্গার কুলপালা গ্রাম থেকে মৃত মোজ্জাম্মেল হকের ছেলে মো. আব্দুল হাকিম (৫৫), তাঁর ছেলে মো. আব্দুস সালাম (২৭) এবং একই দিন রাতে নতুন দরবেশ থেকে মৃত আমোদ আলীর ছেলে মো. তারাচাঁদ ফকির (৫০) ও সোনাপুর গ্রাম থেকে মৃত মুছাব ম-লের ছেলে মো. মামলত ম-লকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
তাঁদের মধ্যে আব্দুল হাকিম আদালতে স্বীকার করেন যে, তাঁর আপন বড় ভাই আব্দুল হামিদ (যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, বর্তমানে জেলহাজতে আটক আছেন) তাঁর ছেলে মোক্তার হোসেন হত্যা, শোলমারী বিলের অংশদারিত্ব থেকে বাদ পড়া ও স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের প্রতিশোধ নিতে জেলখানা থেকে রোকনুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানকে হত্যার জন্য তাঁর ভাই হাকিমকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তিতে হাকিমের নির্দেশনা মোতাবেক তাঁর আপন ভাগ্নে মো. ইসমাইল হোসেন বাক্কাকে (৩২) নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়াটে খুনি ভাড়া করে রোকনুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। মামা হাকিমের কথা মতো ভাগ্নে ইসমাইল হোসেন বাক্কা ৭-৮ জন খুনি ভাড়া করে এ হত্যাকা- ঘটান।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মিশনে জড়িত আরেক আসামি মো. আবুল কালাম কালুকে ৮ অক্টোবর বারাদী বাজার থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করে হত্যার বর্ণনা দেন। আসামি কালু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আসামি কালুর তথ্যমতে, গত ১২ অক্টোবর গাংনী থানার হাটবোয়ালিয়া থেকে মো. শহর আলীর ছেলে মো. রনি আলীকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে রনিও হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
রনি আলী হত্যার বর্ণনায় স্বীকার করেন, বাক্কাসহ অন্য আর একজন রোকুনুজ্জামানকে কোপাতে থাকেন। পরে বাক্কা ও অন্য আরেকজন রোকনুজ্জামানের পা চেপে ধরেন। এ ছাড়া অন্য একজন হাসানুজ্জামানকে চেপে ধরে রাখেন। রনি এই হত্যার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। রনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। পরে ১৪ অক্টোবর রনির তথ্যমতে, মইনুল হোসেনের ছেলে মো. নুরুজ্জামান (২৫) ও মো. মইরউদ্দীন ফকিরের ছেলে মো. ফরিদ ফকিরকে (২৬) মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন যে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ে জড়িত অন্যতম আসামি মো. ইসমাইল হোসেন বাক্কা ৪ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন দরবেশপুর পূর্বপাড়া আজিজুল হকের ধানখেতে দরবেশপুরের শোলমারী বিলের ধারে মৃত ইদ্রিস আলী বিশ্বাসের ছেলে রোকনুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদের ছেলে হাসানুজ্জামানকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আরও জানান, হত্যাকা-ে জড়িত অন্য সন্দিগ্ধ আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। তদন্তের স্বার্থে অন্য আসামিদের নাম-পরিচয় এ মুহূর্তে গোপন রাখা হচ্ছে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সদর থানার ওসি শাহ্ দারা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জেলখানা থেকে আসে নির্দেশনা, হত্যাকা- ঘটায় ভাড়াটে খুনিরা!

আপলোড টাইম : ০৯:৪০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

মেহেরপুরের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং
মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুর সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামে যুবলীগের নেতা মাছ ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান (৩৬) ও হাসানুজ্জামান (৪৪) জোড়া খুনের মামলার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় মিলনায়তনে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা এ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। আটক আটজনের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আলমডাঙ্গার কুলপালা গ্রাম থেকে মৃত মোজ্জাম্মেল হকের ছেলে মো. আব্দুল হাকিম (৫৫), তাঁর ছেলে মো. আব্দুস সালাম (২৭) এবং একই দিন রাতে নতুন দরবেশ থেকে মৃত আমোদ আলীর ছেলে মো. তারাচাঁদ ফকির (৫০) ও সোনাপুর গ্রাম থেকে মৃত মুছাব ম-লের ছেলে মো. মামলত ম-লকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
তাঁদের মধ্যে আব্দুল হাকিম আদালতে স্বীকার করেন যে, তাঁর আপন বড় ভাই আব্দুল হামিদ (যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, বর্তমানে জেলহাজতে আটক আছেন) তাঁর ছেলে মোক্তার হোসেন হত্যা, শোলমারী বিলের অংশদারিত্ব থেকে বাদ পড়া ও স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের প্রতিশোধ নিতে জেলখানা থেকে রোকনুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানকে হত্যার জন্য তাঁর ভাই হাকিমকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তিতে হাকিমের নির্দেশনা মোতাবেক তাঁর আপন ভাগ্নে মো. ইসমাইল হোসেন বাক্কাকে (৩২) নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়াটে খুনি ভাড়া করে রোকনুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। মামা হাকিমের কথা মতো ভাগ্নে ইসমাইল হোসেন বাক্কা ৭-৮ জন খুনি ভাড়া করে এ হত্যাকা- ঘটান।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মিশনে জড়িত আরেক আসামি মো. আবুল কালাম কালুকে ৮ অক্টোবর বারাদী বাজার থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করে হত্যার বর্ণনা দেন। আসামি কালু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আসামি কালুর তথ্যমতে, গত ১২ অক্টোবর গাংনী থানার হাটবোয়ালিয়া থেকে মো. শহর আলীর ছেলে মো. রনি আলীকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে রনিও হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
রনি আলী হত্যার বর্ণনায় স্বীকার করেন, বাক্কাসহ অন্য আর একজন রোকুনুজ্জামানকে কোপাতে থাকেন। পরে বাক্কা ও অন্য আরেকজন রোকনুজ্জামানের পা চেপে ধরেন। এ ছাড়া অন্য একজন হাসানুজ্জামানকে চেপে ধরে রাখেন। রনি এই হত্যার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। রনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। পরে ১৪ অক্টোবর রনির তথ্যমতে, মইনুল হোসেনের ছেলে মো. নুরুজ্জামান (২৫) ও মো. মইরউদ্দীন ফকিরের ছেলে মো. ফরিদ ফকিরকে (২৬) মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন যে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ে জড়িত অন্যতম আসামি মো. ইসমাইল হোসেন বাক্কা ৪ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন দরবেশপুর পূর্বপাড়া আজিজুল হকের ধানখেতে দরবেশপুরের শোলমারী বিলের ধারে মৃত ইদ্রিস আলী বিশ্বাসের ছেলে রোকনুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদের ছেলে হাসানুজ্জামানকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আরও জানান, হত্যাকা-ে জড়িত অন্য সন্দিগ্ধ আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। তদন্তের স্বার্থে অন্য আসামিদের নাম-পরিচয় এ মুহূর্তে গোপন রাখা হচ্ছে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সদর থানার ওসি শাহ্ দারা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।