ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জুয়া নিষিদ্ধ, সমূলে উৎপাটনই জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ১৯৫ বার পড়া হয়েছে

দেশের সব নগরী বিশেষ করে ঢাকার ক্লাবপাড়ায় বিভিন্ন নামে ব্যাপকভাবে জুয়ার আসর বসায় ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান’ শুরু করেছিল সরকার। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে ওই অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। দেখা যায়, জুয়ার আধুনিক সংস্করণ ক্যাসিনো ব্যবসায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাই জড়িত। ওই অভিযান দেশবাসীর দৃষ্টি কাড়ে। কিন্তু কিছু দিন চলার পর এমন একটি অপরিহার্য অভিযান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিকÑ সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা পৃষ্ঠপোষকদের অপতৎপরতায় জুয়াবিরোধী অভিযান সামনে এগোতে পারেনি। এ দিকে সরকারের শীর্ষ অনেক ব্যক্তি এখনো বলছেনÑ ‘শুদ্ধি অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা অব্যাহত থাকবে।’ কিন্তু সরকারের এমন দাবির পক্ষে কিছুই প্রতীয়মান হচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার ‘অভিজাত’ ১৩ ক্লাবসহ সারা দেশে অর্থের বিনিময়ে সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সাথে, দেশের কোথাও জুয়া খেলার উপকরণ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে তা জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা বলেছেন, যেসব খেলার ফল দক্ষতার বদলে ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। কেননা, সংশ্লিষ্ট আইন ও মহানগর পুলিশ আইনে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কারো সাথে বৈষম্য করা যাবে না’। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। জনস্বার্থে দুজন আইনজীবীর এক রিটে জারি করা রুল ঘোষণা করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রায় দেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ইনডোর গেমের নামে ডাইস ও হাউজি খেলার বেআইনি ব্যবসার আয়োজন চ্যালেঞ্জ করে ওই দুই আইনজীবী ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন।
আমরা মনে করি, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী এই মারাত্মক প্রবণতার সমূলে উৎপাটন সম্ভব নয়। এর জন্য জুয়ার বিস্তারের কারণ উদঘাটন করা জরুরি। কারা জুয়াড়ি এবং কারা এর আয়োজনে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে ওই সব দুর্বৃত্তের আয়ের উৎস খুঁজে বের করাও প্রয়োজন। কারণ, কেউ বৈধ উপায়ে আয় করে তা হেলায় খোয়াতে চাইবেন না। এটি সবার জানা, বৈধ আয় সব সময় সীমিত হয়। তাই বৈধ পথে উপার্জনকারীদের পক্ষে অনৈতিক রাস্তায় অর্থ খরচ করা অসম্ভব। এটি তাদের দ্বারাই সম্ভব, যারা অবৈধ ক্ষমতার উত্তাপে বৈধ-অবৈধ উপায়ে অঢেল অর্থ উপার্জন করে থাকেন। তাদের আয়ের উৎসমূলে আঘাত হানতে হবে। দেশে বন্ধ করে দিতে হবে অবৈধ আয়ের সব পথ। এ জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিবিরোধী সমম্বিত কঠোর অভিযান। তবেই সম্ভব জুয়ার মতো সমাজবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড রোধ করা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জুয়া নিষিদ্ধ, সমূলে উৎপাটনই জরুরি

আপলোড টাইম : ০৯:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০

দেশের সব নগরী বিশেষ করে ঢাকার ক্লাবপাড়ায় বিভিন্ন নামে ব্যাপকভাবে জুয়ার আসর বসায় ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান’ শুরু করেছিল সরকার। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে ওই অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। দেখা যায়, জুয়ার আধুনিক সংস্করণ ক্যাসিনো ব্যবসায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাই জড়িত। ওই অভিযান দেশবাসীর দৃষ্টি কাড়ে। কিন্তু কিছু দিন চলার পর এমন একটি অপরিহার্য অভিযান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিকÑ সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা পৃষ্ঠপোষকদের অপতৎপরতায় জুয়াবিরোধী অভিযান সামনে এগোতে পারেনি। এ দিকে সরকারের শীর্ষ অনেক ব্যক্তি এখনো বলছেনÑ ‘শুদ্ধি অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা অব্যাহত থাকবে।’ কিন্তু সরকারের এমন দাবির পক্ষে কিছুই প্রতীয়মান হচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার ‘অভিজাত’ ১৩ ক্লাবসহ সারা দেশে অর্থের বিনিময়ে সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সাথে, দেশের কোথাও জুয়া খেলার উপকরণ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে তা জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা বলেছেন, যেসব খেলার ফল দক্ষতার বদলে ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। কেননা, সংশ্লিষ্ট আইন ও মহানগর পুলিশ আইনে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কারো সাথে বৈষম্য করা যাবে না’। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। জনস্বার্থে দুজন আইনজীবীর এক রিটে জারি করা রুল ঘোষণা করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রায় দেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ইনডোর গেমের নামে ডাইস ও হাউজি খেলার বেআইনি ব্যবসার আয়োজন চ্যালেঞ্জ করে ওই দুই আইনজীবী ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন।
আমরা মনে করি, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী এই মারাত্মক প্রবণতার সমূলে উৎপাটন সম্ভব নয়। এর জন্য জুয়ার বিস্তারের কারণ উদঘাটন করা জরুরি। কারা জুয়াড়ি এবং কারা এর আয়োজনে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে ওই সব দুর্বৃত্তের আয়ের উৎস খুঁজে বের করাও প্রয়োজন। কারণ, কেউ বৈধ উপায়ে আয় করে তা হেলায় খোয়াতে চাইবেন না। এটি সবার জানা, বৈধ আয় সব সময় সীমিত হয়। তাই বৈধ পথে উপার্জনকারীদের পক্ষে অনৈতিক রাস্তায় অর্থ খরচ করা অসম্ভব। এটি তাদের দ্বারাই সম্ভব, যারা অবৈধ ক্ষমতার উত্তাপে বৈধ-অবৈধ উপায়ে অঢেল অর্থ উপার্জন করে থাকেন। তাদের আয়ের উৎসমূলে আঘাত হানতে হবে। দেশে বন্ধ করে দিতে হবে অবৈধ আয়ের সব পথ। এ জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিবিরোধী সমম্বিত কঠোর অভিযান। তবেই সম্ভব জুয়ার মতো সমাজবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড রোধ করা।