ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবন চলে গেলেও চাষের জমি না ছাড়ার অঙ্গীকার কৃষকদের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ৬৫৭ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে কৃষ্ণপুরের পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসীর বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠের তিন ফসলি জমিতে প্রভাবশালীদের সৌরবিদ্যুত প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন কৃষকেরা। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ওই গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক। পরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে কৃষকদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কৃষিজমি নষ্ট করে ও জনগণের ক্ষতি করে কোনো প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হবে না। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। দুই বা তিন ফসলি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিষয়ে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের। আমি বিষয়টি জানি না। গ্রামের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা হবে না।’
জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসীর গণস্বাক্ষর করা স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে- ওই গ্রামের মাঠের ৫৪০ বিঘা তিন ফসলি জমি স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় অনাবাদি দেখিয়ে প্রভাবশালীরা সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। তিন ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ‘সাইক্লিট অ্যানার্জি লিমিটেড’ নামের সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি কোম্পানি। কৃষিজমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে কৃষকেরা আপত্তি জানালেও জোরপূর্বক সেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করতে কোম্পানির পক্ষে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল। একই সঙ্গে স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ওই মাঠে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ হলে শুধু কৃষিজমিই কমবে না, মারাত্মক প্রভাব পড়বে এলাকার পরিবেশের ওপর। ফলে গ্রামে খাদ্য ঘাটতিও দেখা দিতে পারে।


এদিকে, এ নিয়ে এলাকার শত শত কৃষক বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত পোস্টার নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। এ সময় মরে গেলেও বাপ-দাদার চাষের জমি বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন কৃষকেরা। এ সময় তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সৌরবিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে কৃষিসমৃদ্ধ উর্বর ৮১০ বিঘা জমিকে বেলে ও চাষাবাদের অযোগ্য পতিত জমি হিসেবে চিহ্নিত করে গোপনে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। আসলে তা সত্য নয়। কৃষকেরা বলেন, ‘আমাদের সাবেক দুই চেয়ারম্যান আব্দুল ললিফ ও মতুর্জা উঠে-পড়ে লেগেছে এই কাজ করানোর জন্য। তারা বলছে এই জমি দিলে আমাদের ভালো হবে। কিন্তু আমরা আমাদের তিন ফসলি আবাদী জমি কোনোভাবেই দিতে রাজি নয়।’
এদিকে, জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদানকালে ওই গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার খান, রমজান আলী, জেহের আলী ও আনিসুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই জমি আবাদী নয় মর্মে প্রত্যয়ন দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। কিন্তু ওই জমি আবাদী জমি। স্যার আপনি সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসবেন। জমি আবাদী। স্যার আমরা এই জমিতেই চাষ করি। এই জমি চলে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে।’ এ সময় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার সরেজমিনে পরিদর্শনের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, মানুষের উপকার হয় না, এমন কাজ আমরা করি না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবন চলে গেলেও চাষের জমি না ছাড়ার অঙ্গীকার কৃষকদের

আপলোড টাইম : ০৯:১৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

জীবননগরে কৃষ্ণপুরের পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসীর বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠের তিন ফসলি জমিতে প্রভাবশালীদের সৌরবিদ্যুত প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন কৃষকেরা। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ওই গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক। পরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে কৃষকদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কৃষিজমি নষ্ট করে ও জনগণের ক্ষতি করে কোনো প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হবে না। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। দুই বা তিন ফসলি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিষয়ে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের। আমি বিষয়টি জানি না। গ্রামের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা হবে না।’
জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসীর গণস্বাক্ষর করা স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে- ওই গ্রামের মাঠের ৫৪০ বিঘা তিন ফসলি জমি স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় অনাবাদি দেখিয়ে প্রভাবশালীরা সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। তিন ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ‘সাইক্লিট অ্যানার্জি লিমিটেড’ নামের সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি কোম্পানি। কৃষিজমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে কৃষকেরা আপত্তি জানালেও জোরপূর্বক সেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করতে কোম্পানির পক্ষে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল। একই সঙ্গে স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ওই মাঠে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ হলে শুধু কৃষিজমিই কমবে না, মারাত্মক প্রভাব পড়বে এলাকার পরিবেশের ওপর। ফলে গ্রামে খাদ্য ঘাটতিও দেখা দিতে পারে।


এদিকে, এ নিয়ে এলাকার শত শত কৃষক বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত পোস্টার নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। এ সময় মরে গেলেও বাপ-দাদার চাষের জমি বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন কৃষকেরা। এ সময় তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সৌরবিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে কৃষিসমৃদ্ধ উর্বর ৮১০ বিঘা জমিকে বেলে ও চাষাবাদের অযোগ্য পতিত জমি হিসেবে চিহ্নিত করে গোপনে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। আসলে তা সত্য নয়। কৃষকেরা বলেন, ‘আমাদের সাবেক দুই চেয়ারম্যান আব্দুল ললিফ ও মতুর্জা উঠে-পড়ে লেগেছে এই কাজ করানোর জন্য। তারা বলছে এই জমি দিলে আমাদের ভালো হবে। কিন্তু আমরা আমাদের তিন ফসলি আবাদী জমি কোনোভাবেই দিতে রাজি নয়।’
এদিকে, জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদানকালে ওই গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার খান, রমজান আলী, জেহের আলী ও আনিসুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই জমি আবাদী নয় মর্মে প্রত্যয়ন দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। কিন্তু ওই জমি আবাদী জমি। স্যার আপনি সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসবেন। জমি আবাদী। স্যার আমরা এই জমিতেই চাষ করি। এই জমি চলে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে।’ এ সময় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার সরেজমিনে পরিদর্শনের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, মানুষের উপকার হয় না, এমন কাজ আমরা করি না।