ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগরের জননী ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু : মালিকের ভৌঁদোড় অধিকাংশ ক্লিনিকেই নেই অভিজ্ঞ নার্স : রোগীর সেবা দিচ্ছেন পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত আয়া

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০১৭
  • / ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস: জীবননগরের জননী ক্লিনিকে কর্তব্যে অবহেলার কারণে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তাড়াহুড়ো করে অপারেশন করায় সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই প্রসূতি তানিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। রোগী নিয়ে যাওয়া মাত্র কোন কথাবার্তা ছাড়া কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর না করিয়েই অপারেশন থিয়েটারে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অভিজ্ঞ নার্স না থাকায় ক্লিনিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত আয়া দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়ায় তানিয়ার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা এবং বন্ড স্বাক্ষর নিয়েই অপারেশন টেবিলে নেয়া হয়েছে বলে চিকিৎসক মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু জানালেও ক্লিনিকের মালিক গাঢাকা দিয়েছেন। জননী ক্লিনিকের মালিক আব্দুল মান্নান সাংবাদিক দেখে ক্লিনিক থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে মান্নানের সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেন নি তিনি। এদিকে, জননী ক্লিনিকের মালিক রোগী মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাড়াবাড়িয়া গ্রামের মুসা বারীর স্ত্রী তানিয়া খাতুনকে (২০) সিজারের জন্য জীবননগর জননী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব সুস্থ অবস্থায় করলেও কিছুক্ষন পরেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারের লোকজনের সাথে কোনপ্রকার কথাবার্তা, সই-স্বাক্ষর বা রোগী খারাপ থাকার বিষয়টিও আগে থেকে জানানো হয়নি। ক্লিনিকে অভিজ্ঞ কোন নার্স নেই, ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত থাকা আয়া দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। অপারেশন করার কিছুক্ষণ পর কন্যসন্তান জন্ম দিয়ে তানিয়া মারা গেছে বলে তাদের জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে, জীবননগরে বেশিরভাগ ক্লিনিকে যে চিকিৎসকরা অপারেশন করেন, তারা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৫ থেকে ৭টি অপারেশন করে থাকেন। যার ফলে প্রতিনিয়িত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অনেকে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া জীবননগর যে সমস্থ ক্লিনিক আছে, সেখানে কোন অভিজ্ঞ নার্স নেই, রুম পরিষ্কার করার আয়া দ্বারা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। এমনকি ক্লিনিকগুলোর যে অবস্থা তাতে রোগী দুরের কথা, সুস্থ মানুষ ক্লিনিকে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
জীবননগর বাজারে বাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে অনেকের নেই কোন সরকারী অনুমোদন। আবার অনেক ক্লিনিকের অনুমোদন আছে, কিন্তু ক্লিনিক মালিকের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। এত সমস্যা থাকার পরও জীবননগরে প্রশাসনিক কোন অভিযান নেই বলেও জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু মুঠোফোনে জানান, প্রথমদিকে রোগীটির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো, এটি আমি রোগীর পরিবারকে অবগতি করি এবং আমি রোগীটিকে অপারেশন করতে চাইনি। তার পরিবারের লোকের সম্মতীতে এবং তারা বন্ড সই দিয়ে আমাকে অনেকবার বলার পর, তাদের অসহায়ত্ব দেখে আমি অপারেশনটি করতে রাজি হই। তাছাড়া রোগীটির আগে থেকে হৃদরোগ ছিল সেটি আমাকে জানায়নি যার জন্য রোগীটি মারা গেছে।
অন্যদিকে জননী ক্লিনিকের মালিকের সাথে কথা বলার জন্য ক্লিনিকে গেলে সাংবাদিকদের দেখে পালিয়ে যান ক্লিনিক মালিক মান্নান। পরবতীতে মুঠোফোনে তার সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও তিনিও ফোনটি রিসিভ করেননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরের জননী ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু : মালিকের ভৌঁদোড় অধিকাংশ ক্লিনিকেই নেই অভিজ্ঞ নার্স : রোগীর সেবা দিচ্ছেন পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত আয়া

আপলোড টাইম : ১১:২৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০১৭

জীবননগর অফিস: জীবননগরের জননী ক্লিনিকে কর্তব্যে অবহেলার কারণে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তাড়াহুড়ো করে অপারেশন করায় সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই প্রসূতি তানিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। রোগী নিয়ে যাওয়া মাত্র কোন কথাবার্তা ছাড়া কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর না করিয়েই অপারেশন থিয়েটারে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অভিজ্ঞ নার্স না থাকায় ক্লিনিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত আয়া দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়ায় তানিয়ার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা এবং বন্ড স্বাক্ষর নিয়েই অপারেশন টেবিলে নেয়া হয়েছে বলে চিকিৎসক মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু জানালেও ক্লিনিকের মালিক গাঢাকা দিয়েছেন। জননী ক্লিনিকের মালিক আব্দুল মান্নান সাংবাদিক দেখে ক্লিনিক থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে মান্নানের সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেন নি তিনি। এদিকে, জননী ক্লিনিকের মালিক রোগী মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাড়াবাড়িয়া গ্রামের মুসা বারীর স্ত্রী তানিয়া খাতুনকে (২০) সিজারের জন্য জীবননগর জননী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব সুস্থ অবস্থায় করলেও কিছুক্ষন পরেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারের লোকজনের সাথে কোনপ্রকার কথাবার্তা, সই-স্বাক্ষর বা রোগী খারাপ থাকার বিষয়টিও আগে থেকে জানানো হয়নি। ক্লিনিকে অভিজ্ঞ কোন নার্স নেই, ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত থাকা আয়া দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। অপারেশন করার কিছুক্ষণ পর কন্যসন্তান জন্ম দিয়ে তানিয়া মারা গেছে বলে তাদের জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে, জীবননগরে বেশিরভাগ ক্লিনিকে যে চিকিৎসকরা অপারেশন করেন, তারা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৫ থেকে ৭টি অপারেশন করে থাকেন। যার ফলে প্রতিনিয়িত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অনেকে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া জীবননগর যে সমস্থ ক্লিনিক আছে, সেখানে কোন অভিজ্ঞ নার্স নেই, রুম পরিষ্কার করার আয়া দ্বারা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। এমনকি ক্লিনিকগুলোর যে অবস্থা তাতে রোগী দুরের কথা, সুস্থ মানুষ ক্লিনিকে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
জীবননগর বাজারে বাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে অনেকের নেই কোন সরকারী অনুমোদন। আবার অনেক ক্লিনিকের অনুমোদন আছে, কিন্তু ক্লিনিক মালিকের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। এত সমস্যা থাকার পরও জীবননগরে প্রশাসনিক কোন অভিযান নেই বলেও জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু মুঠোফোনে জানান, প্রথমদিকে রোগীটির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো, এটি আমি রোগীর পরিবারকে অবগতি করি এবং আমি রোগীটিকে অপারেশন করতে চাইনি। তার পরিবারের লোকের সম্মতীতে এবং তারা বন্ড সই দিয়ে আমাকে অনেকবার বলার পর, তাদের অসহায়ত্ব দেখে আমি অপারেশনটি করতে রাজি হই। তাছাড়া রোগীটির আগে থেকে হৃদরোগ ছিল সেটি আমাকে জানায়নি যার জন্য রোগীটি মারা গেছে।
অন্যদিকে জননী ক্লিনিকের মালিকের সাথে কথা বলার জন্য ক্লিনিকে গেলে সাংবাদিকদের দেখে পালিয়ে যান ক্লিনিক মালিক মান্নান। পরবতীতে মুঠোফোনে তার সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও তিনিও ফোনটি রিসিভ করেননি।