ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০
  • / ২৪০ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন
আমাদের সমাজ ও সংসারে আজ যত অশান্তি তার মূলে রয়েছে জিহ্বার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার। কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমরা জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করি না। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলি নির্দ্বিধায়। সমাজে অনেক সময় মানুষে মানুষে সংঘাত-সংঘর্ষ হয় এবং মামলা-মোকদ্দমা চলে জিহ্বার অপব্যবহারের কারণে। সংসারে অশান্তির দাবানল জ্বলে ওঠে নিয়ন্ত্রণহীন রসনার কারণে। তাই জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা জান কি কোন বস্তু মানুষকে সর্বাপেক্ষা বেশি বেহেশতে প্রবেশ করাবে? তা হলো আল্লাহর ভয় এবং সচ্চরিত্র। তোমরা জান কি মানুষকে কোন বস্তু সর্বাপেক্ষা বেশি দোজখে প্রবেশ করাবে? তা হলো দুটি ছিদ্র পথ। একটি মুখ এবং অন্যটি লজ্জাস্থান (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার আমি রসুলে আকরাম (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? তিনি বললেন, তুমি তোমার রসনাকে নিয়ন্ত্রণ কর, নিজের ঘরেই অবস্থান কর এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন কর (আহমদ, তিরমিজি)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রসুল (সা.)-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন, মানুষ যখন ভোরে ওঠে তখন তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো রসনাকে সবিনয়ে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আমরা সবাই তোমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং তুমি যদি ঠিক থাক, আমরাও ঠিক থাকব। আর তুমি বক্রতা অবলম্বন করলে আমরাও বক্র হয়ে পড়ব (তিরমিজি)। প্রিয় পাঠক! অনর্থক কথা বললেও গুনাহ হয়। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার কোনো একজন সাহাবির মৃত্যু হলে এক ব্যক্তি বলল যে, তোমার প্রতি বেহেশতের সুসংবাদ। তখন রসুল (সা.) বললেন, তুমি জান না, হয়তো এমনও হতে পারে, সে অনর্থক বাজে কথাবার্তা বলেছে। অথবা হয়তো সে এমন ব্যাপারে কৃপণতা করেছে, যা না করলেও তার কিছু হ্রাস পেত না। (তিরমিজি)। হজরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ সাকাফি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার জন্য যে বস্তুগুলো ভয়ের কারণ বলে আপনি মনে করেন, তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ের কারণ কোনটি? রাবি বলেন, তখন তিনি তাঁর নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, এ বস্তুটি (তিরমিজি)। অনেক সময় আমরা গুনাহ করার পর সমাজে তা আবার বলে বেড়াই। মানুষের কাছে নিজের অপরাধ প্রকাশ করি। এটাও মারাত্মক গুনাহ। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, প্রিয় রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যারা নিজেদের কৃত অপকর্মসমূহ প্রকাশ করে বেড়ায় তারা ব্যতীত আমার সব উম্মতই ক্ষমা লাভের যোগ্য। এটা কতই না নির্লজ্জ ব্যাপার যে, কোনো লোক রাতে একটি মন্দ কাজ করল এবং আল্লাহতায়ালা তা গোপন রাখলেন। অথচ প্রত্যুষেই সে লোকদের কাছে প্রকাশ করে যে, হে অমুক! গত রাতে আমি এ কাজটি করেছি। বস্তুত সে রাতটি এভাবে কাটিয়েছিল যে, তার প্রতিপালক তার ওই অপরাধটি গোপন করে রেখেছিলেন; কিন্তু সে ভোরে আল্লাহর পর্দা অর্থাৎ আবরণটি উন্মুক্ত করে দিল (বুখারি ও মুসলিম)।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ

আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন
আমাদের সমাজ ও সংসারে আজ যত অশান্তি তার মূলে রয়েছে জিহ্বার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার। কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমরা জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করি না। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলি নির্দ্বিধায়। সমাজে অনেক সময় মানুষে মানুষে সংঘাত-সংঘর্ষ হয় এবং মামলা-মোকদ্দমা চলে জিহ্বার অপব্যবহারের কারণে। সংসারে অশান্তির দাবানল জ্বলে ওঠে নিয়ন্ত্রণহীন রসনার কারণে। তাই জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা জান কি কোন বস্তু মানুষকে সর্বাপেক্ষা বেশি বেহেশতে প্রবেশ করাবে? তা হলো আল্লাহর ভয় এবং সচ্চরিত্র। তোমরা জান কি মানুষকে কোন বস্তু সর্বাপেক্ষা বেশি দোজখে প্রবেশ করাবে? তা হলো দুটি ছিদ্র পথ। একটি মুখ এবং অন্যটি লজ্জাস্থান (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার আমি রসুলে আকরাম (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? তিনি বললেন, তুমি তোমার রসনাকে নিয়ন্ত্রণ কর, নিজের ঘরেই অবস্থান কর এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন কর (আহমদ, তিরমিজি)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রসুল (সা.)-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন, মানুষ যখন ভোরে ওঠে তখন তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো রসনাকে সবিনয়ে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আমরা সবাই তোমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং তুমি যদি ঠিক থাক, আমরাও ঠিক থাকব। আর তুমি বক্রতা অবলম্বন করলে আমরাও বক্র হয়ে পড়ব (তিরমিজি)। প্রিয় পাঠক! অনর্থক কথা বললেও গুনাহ হয়। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার কোনো একজন সাহাবির মৃত্যু হলে এক ব্যক্তি বলল যে, তোমার প্রতি বেহেশতের সুসংবাদ। তখন রসুল (সা.) বললেন, তুমি জান না, হয়তো এমনও হতে পারে, সে অনর্থক বাজে কথাবার্তা বলেছে। অথবা হয়তো সে এমন ব্যাপারে কৃপণতা করেছে, যা না করলেও তার কিছু হ্রাস পেত না। (তিরমিজি)। হজরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ সাকাফি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার জন্য যে বস্তুগুলো ভয়ের কারণ বলে আপনি মনে করেন, তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ের কারণ কোনটি? রাবি বলেন, তখন তিনি তাঁর নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, এ বস্তুটি (তিরমিজি)। অনেক সময় আমরা গুনাহ করার পর সমাজে তা আবার বলে বেড়াই। মানুষের কাছে নিজের অপরাধ প্রকাশ করি। এটাও মারাত্মক গুনাহ। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, প্রিয় রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যারা নিজেদের কৃত অপকর্মসমূহ প্রকাশ করে বেড়ায় তারা ব্যতীত আমার সব উম্মতই ক্ষমা লাভের যোগ্য। এটা কতই না নির্লজ্জ ব্যাপার যে, কোনো লোক রাতে একটি মন্দ কাজ করল এবং আল্লাহতায়ালা তা গোপন রাখলেন। অথচ প্রত্যুষেই সে লোকদের কাছে প্রকাশ করে যে, হে অমুক! গত রাতে আমি এ কাজটি করেছি। বস্তুত সে রাতটি এভাবে কাটিয়েছিল যে, তার প্রতিপালক তার ওই অপরাধটি গোপন করে রেখেছিলেন; কিন্তু সে ভোরে আল্লাহর পর্দা অর্থাৎ আবরণটি উন্মুক্ত করে দিল (বুখারি ও মুসলিম)।