ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জান্নাতের সর্দার হোসাইন (রা.)

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অগাস্ট ২০২০
  • / ১৪৭ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন
আবহমানকাল থেকেই পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। একদল নিপীড়ক, আরেকদল নিপীড়িত। একদল অত্যাচারী, আরেকদল অত্যাচারিত। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র নির্বিশেষ মানুষ এ দুই দলের এক দলের মধ্যেই পড়ে। পৃথিবীতে যত নবী-রসুল, মুনি-ঋষি, অবতার-পয়গম্বর এসেছেন, সবাই ছিলেন নিপীড়িত-অত্যাচারিতের পক্ষে। আর তখতলোভী কমবখতরা ছিল আল্লাহর দূতদের বিপক্ষে। কারণ, আল্লাহর দূত যদি সফল হয়, তাহলে তো অত্যাচারীর কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে এক নিমিষেই। তাই যুগে যুগে অসত্যের ঠিকাদার অত্যাচারীরা নিপীড়িত মানুষের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়েছে জীবনের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। ইতিহাস সাক্ষী, অসত্যের কালো সিংহাসন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সত্যের শুভ্র সোনালি আলো আজও পৃথিবীতে কোমলতা ছড়িয়েই যাচ্ছে। ইয়াজিদ নামে এক কমবখতের কালো সিংহাসনের বিরুদ্ধে আলোর মশাল হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন হজরত আলী (রা.)-এর বীর পুত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। হিজরি সালের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের ১০ তারিখ ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যময় একটি দিন। ৬১ হিজরি সনের ১০ মহররম ইরাকের কুফা নগরের কাছে ফোরাত নদীর তীরঘেঁষা কারবালা প্রান্তরে নবীদৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের নিষ্ঠুর বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ অবস্থায় পরিবার-পরিজনসহ নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। সেদিন ছিল ৮ জিলহজ, হজের দিন। সব মানুষ হজ করছে। আর ইমাম হোসাইন মক্কা ছেড়ে দলবল নিয়ে কুফার পথে রওনা হয়েছেন। যাত্রার শুরুতে তিনি একটি ভাষণ দেন। বলেন, ‘মৃত্যু হলো আমাদের জন্য সৌন্দর্য, যেমন অলঙ্কার নারীর সৌন্দর্য। আমি দেখতে পাচ্ছি, কারবালার প্রান্তরে মানুষরূপী কুকুরগুলো আমার দেহকে ছিন্নভিন্ন করছে, তবু তাকদির থেকে পালানোর উপায় নেই। আমি আমার নানা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছি, যেমন ইউসুফ নবী তাঁর পিতার দেখা পেতে অপেক্ষায় ছিলেন।’ ইতিহাসবিদরা বলেন, ইমাম হোসাইন সুনিশ্চিতভাবেই জানতেন কারবালার ময়দানে তাঁকে হত্যা করা হবে, তার পরও তিনি দুটো কারণে কারবালায় হাজির হন- ১. পৃথিবীর মানুষকে তিনি দেখাতে ছেয়েছেন মৃত্যু নিশ্চিত জানার পরও নিপীড়কের বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নিয়ে লড়তে হবে। ২. কোনো ধরনের অজুহাত দিয়ে সত্যের ময়দান থেকে পালানো যাবে না। কারণ, ইমাম হোসাইন চাইলে হজের অজুহাত দিয়ে কারবালায় না যেতে পারতেন কিংবা ফিতনার শঙ্কা আছে বলে ইয়াজিদকে মেনে নিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। তার পরের ঘটনা আমাদের সবার জানা। ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান হত্যা করেছিলেন হোসাইন ইবনে আলীকে। মহররম এসে আমাদের এ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, কিন্তু আজকের দুনিয়ায় কজনই হোসাইনের মতো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা জীবনে ধারণ করতে পারে? আফসোস! ইয়াজিদের মোকাবিলায় এখন আর কোনো হোসাইন মৃত্যুর মালা গলায় পরে নির্যাতিতের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে না। বাতাসে কান পাতলে মনে হয় এখনো হোসাইনের সেই কণ্ঠ ভেসে আসে, শাহাদাতের অল্প আগেও ইয়াজিদের দলের মুসলমানদের উদ্দেশ করে হোসাইন বলেছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কি আমাকে সাহায্য করবে না?’ তখন সবাই নির্বাক ছিল। আজান হয়েছে বলে কেউ কেউ নামাজে চলে গিয়েছিল। আজও নির্যাতিতের কান্না শুনে আমরা হয় নির্বাক থাকি নয় তো মসজিদে গিয়ে নামাজে দাঁড়াই। প্রিয় পাঠক! ইমাম হোসাইনের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া হাজী বা নামাজিরা কি আখিরাতে নবীজির সুপারিশ কামনা করতে পারবে? মহান আল্লাহ ইয়াজিদকে বুঝিয়ে দিলেন, যে বন্ধুকে আমি ভালোবেসেছি সে বন্ধুর পরিবারকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া কখনই সম্ভব নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জান্নাতের সর্দার হোসাইন (রা.)

আপলোড টাইম : ০৯:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অগাস্ট ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন
আবহমানকাল থেকেই পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। একদল নিপীড়ক, আরেকদল নিপীড়িত। একদল অত্যাচারী, আরেকদল অত্যাচারিত। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র নির্বিশেষ মানুষ এ দুই দলের এক দলের মধ্যেই পড়ে। পৃথিবীতে যত নবী-রসুল, মুনি-ঋষি, অবতার-পয়গম্বর এসেছেন, সবাই ছিলেন নিপীড়িত-অত্যাচারিতের পক্ষে। আর তখতলোভী কমবখতরা ছিল আল্লাহর দূতদের বিপক্ষে। কারণ, আল্লাহর দূত যদি সফল হয়, তাহলে তো অত্যাচারীর কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে এক নিমিষেই। তাই যুগে যুগে অসত্যের ঠিকাদার অত্যাচারীরা নিপীড়িত মানুষের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়েছে জীবনের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। ইতিহাস সাক্ষী, অসত্যের কালো সিংহাসন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সত্যের শুভ্র সোনালি আলো আজও পৃথিবীতে কোমলতা ছড়িয়েই যাচ্ছে। ইয়াজিদ নামে এক কমবখতের কালো সিংহাসনের বিরুদ্ধে আলোর মশাল হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন হজরত আলী (রা.)-এর বীর পুত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। হিজরি সালের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের ১০ তারিখ ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যময় একটি দিন। ৬১ হিজরি সনের ১০ মহররম ইরাকের কুফা নগরের কাছে ফোরাত নদীর তীরঘেঁষা কারবালা প্রান্তরে নবীদৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের নিষ্ঠুর বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ অবস্থায় পরিবার-পরিজনসহ নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। সেদিন ছিল ৮ জিলহজ, হজের দিন। সব মানুষ হজ করছে। আর ইমাম হোসাইন মক্কা ছেড়ে দলবল নিয়ে কুফার পথে রওনা হয়েছেন। যাত্রার শুরুতে তিনি একটি ভাষণ দেন। বলেন, ‘মৃত্যু হলো আমাদের জন্য সৌন্দর্য, যেমন অলঙ্কার নারীর সৌন্দর্য। আমি দেখতে পাচ্ছি, কারবালার প্রান্তরে মানুষরূপী কুকুরগুলো আমার দেহকে ছিন্নভিন্ন করছে, তবু তাকদির থেকে পালানোর উপায় নেই। আমি আমার নানা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছি, যেমন ইউসুফ নবী তাঁর পিতার দেখা পেতে অপেক্ষায় ছিলেন।’ ইতিহাসবিদরা বলেন, ইমাম হোসাইন সুনিশ্চিতভাবেই জানতেন কারবালার ময়দানে তাঁকে হত্যা করা হবে, তার পরও তিনি দুটো কারণে কারবালায় হাজির হন- ১. পৃথিবীর মানুষকে তিনি দেখাতে ছেয়েছেন মৃত্যু নিশ্চিত জানার পরও নিপীড়কের বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নিয়ে লড়তে হবে। ২. কোনো ধরনের অজুহাত দিয়ে সত্যের ময়দান থেকে পালানো যাবে না। কারণ, ইমাম হোসাইন চাইলে হজের অজুহাত দিয়ে কারবালায় না যেতে পারতেন কিংবা ফিতনার শঙ্কা আছে বলে ইয়াজিদকে মেনে নিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। তার পরের ঘটনা আমাদের সবার জানা। ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান হত্যা করেছিলেন হোসাইন ইবনে আলীকে। মহররম এসে আমাদের এ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, কিন্তু আজকের দুনিয়ায় কজনই হোসাইনের মতো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা জীবনে ধারণ করতে পারে? আফসোস! ইয়াজিদের মোকাবিলায় এখন আর কোনো হোসাইন মৃত্যুর মালা গলায় পরে নির্যাতিতের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে না। বাতাসে কান পাতলে মনে হয় এখনো হোসাইনের সেই কণ্ঠ ভেসে আসে, শাহাদাতের অল্প আগেও ইয়াজিদের দলের মুসলমানদের উদ্দেশ করে হোসাইন বলেছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কি আমাকে সাহায্য করবে না?’ তখন সবাই নির্বাক ছিল। আজান হয়েছে বলে কেউ কেউ নামাজে চলে গিয়েছিল। আজও নির্যাতিতের কান্না শুনে আমরা হয় নির্বাক থাকি নয় তো মসজিদে গিয়ে নামাজে দাঁড়াই। প্রিয় পাঠক! ইমাম হোসাইনের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া হাজী বা নামাজিরা কি আখিরাতে নবীজির সুপারিশ কামনা করতে পারবে? মহান আল্লাহ ইয়াজিদকে বুঝিয়ে দিলেন, যে বন্ধুকে আমি ভালোবেসেছি সে বন্ধুর পরিবারকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া কখনই সম্ভব নয়।