ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জবানের হেফাজত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • / ৩৭২ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি মানুষের জবান। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জবানের নিয়ন্ত্রণের জিম্মাদার হতে পারবে, তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবে স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জবানের হেফাজতকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং শরিয়ত বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জবানের নিয়ন্ত্রণে প্রিয় সাহাবি মুয়াজকে নসিহত পেশ করেছেন তিনি। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, ‘হে মুয়াজ! নিজের জবানকে নিয়ন্ত্রণ কর। এটাই আমার পুরো শরিয়ত। আর এতেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন।’ ছোট বাচ্চাকে আকৃষ্ট করতে যেভাবে নসিহত করা হয়, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জবানের হেফাজতের নসিহত পেশ করেছেন।
বর্তমান সময়ে জবানের হেফাজতের গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজের প্রতিটি স্তরে যতবেশি সমস্যা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন জবানের জন্য। কথার সামঞ্জস্যতা না থাকার জন্য। মুমিনের জন্য দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন যে কাজ তাহলো জবানের হেফাজত বা নিয়ন্ত্রণ করা। এ কারণেই শিশুর কচি অন্তরে গেঁথে থাকতে যেভাবে নসিহত করা হয়, প্রিয় নবি তাঁর সাহাবিকে ছোট বালকের মতো করেই জবানের হেফাজতের নসিহত করে আমাদের উৎসাহিত করেছেন। একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি। বিশাল গাড়ি বা যে কোনো ধরনের বড় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের জন্য অনেক সহজ কাজে পরিণত হয়েছে। অথচ ছোট্ট একটি অঙ্গ জিহ্বা বা জবানের হেফাজত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
সমাজের প্রতিটি স্তরে অশান্তির আগুন জ্বলার কারণও অসংযত কথাবার্তা। নিয়ন্ত্রণহীন জবান। সে কারণে প্রত্যেক মানুষের জবানের হেফাজত করা খুবই জরুরি। আর তাতে মিলবে শান্তি ও নিরাপত্তা। যদি জবানের নিয়ন্ত্রণ এসে যায় তবে, ঘরে কিংবা বাইরে, স্বামী-স্ত্রী কিংবা বউ-শাশুরি, শ্রমিক-মালিক, প্রতিবেশি কিংবা গ্রামবাসী- কারও মাঝেই থাকবে না কোনো অশান্তি ও কলহ-বিবাদ। ঝগড়া কিংবা বাকবিতণ্ডার মাঝে দুটি পক্ষের মধ্যে যে কোনো একজন জবানের নিয়ন্ত্রণ করলেই খুব দ্রুত শান্তি বিরাজ করবে। তাই একজন জবানের নিয়ন্ত্রণহীন হলে পড়লে শান্তির জন্য অন্য জনের জন্য চুপ থেকে জবানের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। তবে প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ ভুবন জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে। মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে ছোট্ট এ আমলটির কথা বার বার তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সেই ব্যক্তিই তো প্রকৃত মুসলমান, যার নিজের হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ অর্থাৎ মুখ ও হাত দ্বারা কেউ কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়’ এ কথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি বললেন, ‘যেই ব্যক্তি নিজের পাড়া-প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়। যেই ব্যক্তি নিজের সাথী-সঙ্গীকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়।’ এখানে মদপান করা, নামাজ ছেড়ে দেয়া, জিনা ব্যভিচারকারি ও জুয়া খেলা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। বরং মুখের অনিষ্টা ছড়ানো ব্যক্তির ব্যাপারে এ কথা বলা হয়েছে। সুতরাং মুমিন মুসলমানরে জন্য সতর্কা হলো- কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না, গালিগালাজ করা যাবে না। কটু কথা বলা যাবে না। মন্দ কথা বলা যাবে না। এক কথায় মুখ দ্বারা কষ্ট দেয়া যাবে না। সে জন্য প্রয়োজন্য নিজ নিজ জবানের হেফাজত করা। তবেই জান্নাতের হেফাজতের দায়িত্বে থাকবে স্বয়ং বিশ্বনবি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিহ্বা বা জবানের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। জবানের নিয়ন্ত্রণের ছোট্ট আমলটি নিজেরে মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। নিজেকে প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে জান্নাতের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জবানের হেফাজত

আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন:
শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি মানুষের জবান। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জবানের নিয়ন্ত্রণের জিম্মাদার হতে পারবে, তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবে স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জবানের হেফাজতকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং শরিয়ত বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জবানের নিয়ন্ত্রণে প্রিয় সাহাবি মুয়াজকে নসিহত পেশ করেছেন তিনি। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, ‘হে মুয়াজ! নিজের জবানকে নিয়ন্ত্রণ কর। এটাই আমার পুরো শরিয়ত। আর এতেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন।’ ছোট বাচ্চাকে আকৃষ্ট করতে যেভাবে নসিহত করা হয়, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জবানের হেফাজতের নসিহত পেশ করেছেন।
বর্তমান সময়ে জবানের হেফাজতের গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজের প্রতিটি স্তরে যতবেশি সমস্যা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন জবানের জন্য। কথার সামঞ্জস্যতা না থাকার জন্য। মুমিনের জন্য দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন যে কাজ তাহলো জবানের হেফাজত বা নিয়ন্ত্রণ করা। এ কারণেই শিশুর কচি অন্তরে গেঁথে থাকতে যেভাবে নসিহত করা হয়, প্রিয় নবি তাঁর সাহাবিকে ছোট বালকের মতো করেই জবানের হেফাজতের নসিহত করে আমাদের উৎসাহিত করেছেন। একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি। বিশাল গাড়ি বা যে কোনো ধরনের বড় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের জন্য অনেক সহজ কাজে পরিণত হয়েছে। অথচ ছোট্ট একটি অঙ্গ জিহ্বা বা জবানের হেফাজত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
সমাজের প্রতিটি স্তরে অশান্তির আগুন জ্বলার কারণও অসংযত কথাবার্তা। নিয়ন্ত্রণহীন জবান। সে কারণে প্রত্যেক মানুষের জবানের হেফাজত করা খুবই জরুরি। আর তাতে মিলবে শান্তি ও নিরাপত্তা। যদি জবানের নিয়ন্ত্রণ এসে যায় তবে, ঘরে কিংবা বাইরে, স্বামী-স্ত্রী কিংবা বউ-শাশুরি, শ্রমিক-মালিক, প্রতিবেশি কিংবা গ্রামবাসী- কারও মাঝেই থাকবে না কোনো অশান্তি ও কলহ-বিবাদ। ঝগড়া কিংবা বাকবিতণ্ডার মাঝে দুটি পক্ষের মধ্যে যে কোনো একজন জবানের নিয়ন্ত্রণ করলেই খুব দ্রুত শান্তি বিরাজ করবে। তাই একজন জবানের নিয়ন্ত্রণহীন হলে পড়লে শান্তির জন্য অন্য জনের জন্য চুপ থেকে জবানের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। তবে প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ ভুবন জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে। মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে ছোট্ট এ আমলটির কথা বার বার তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সেই ব্যক্তিই তো প্রকৃত মুসলমান, যার নিজের হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ অর্থাৎ মুখ ও হাত দ্বারা কেউ কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়’ এ কথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি বললেন, ‘যেই ব্যক্তি নিজের পাড়া-প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়। যেই ব্যক্তি নিজের সাথী-সঙ্গীকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়।’ এখানে মদপান করা, নামাজ ছেড়ে দেয়া, জিনা ব্যভিচারকারি ও জুয়া খেলা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। বরং মুখের অনিষ্টা ছড়ানো ব্যক্তির ব্যাপারে এ কথা বলা হয়েছে। সুতরাং মুমিন মুসলমানরে জন্য সতর্কা হলো- কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না, গালিগালাজ করা যাবে না। কটু কথা বলা যাবে না। মন্দ কথা বলা যাবে না। এক কথায় মুখ দ্বারা কষ্ট দেয়া যাবে না। সে জন্য প্রয়োজন্য নিজ নিজ জবানের হেফাজত করা। তবেই জান্নাতের হেফাজতের দায়িত্বে থাকবে স্বয়ং বিশ্বনবি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিহ্বা বা জবানের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। জবানের নিয়ন্ত্রণের ছোট্ট আমলটি নিজেরে মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। নিজেকে প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে জান্নাতের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।