ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জনসংখ্যার আধিক্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯
  • / ২৮৭ বার পড়া হয়েছে

জন্মহার হ্রাসের উদ্যোগ নিতে হবে
‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত এই নীতিতেই গতকাল পালিত হলো বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জনসংখ্যা ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর : প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন।’ চলতি বছরের ১২-১৪ নভেম্বর কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হবে নাইরোবি সামিট। আর এই সামিটের সামগ্রিক প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে। জানা যায়, জন্মহার বৃদ্ধি কম হলেও বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। অথচ পরিকল্পিত বিশেষ কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ১৯৯৪ সালে যেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করত, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ। আশার কথা যে, স্বাস্থ্য সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৯৯৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এ তথ্য ইতিবাচক হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য অনুযায়ী, প্রজনন হার কমিয়ে আনার যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন নীতিনির্ধারকরা, তা নানা কারণেই অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এটাও অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ৯০-এর দশকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছিল বাংলাদেশের। তখন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর ৩০ ভাগই স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করত। বাস্তবতা হলো, এ সাফল্য এখন অনেকটাই ম্লান হতে চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্থির হয়ে আছে। এ অবস্থা প্রত্যাশিত হতে পারে না, কেননা বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। গড় আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অধিক গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়। ফ্যামিলি পস্ন্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এএফএম মতিউর রহমানও স্বীকার করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন তাদের স্থবিরতার কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। নিয়ম হচ্ছে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারগুলোকে সেবা দেবে কিন্তু সত্যি কথাটা হলো তারা বাড়ি বাড়ি যায় না। আবার উলেস্নখ করা যেতে পারে, কম শিক্ষিত মানুষ বা দরিদ্র মানুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। অনুন্নত, দরিদ্র বা বস্তি এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি, আর এ চিত্র থেকেই বিশ্লেষকরা এমন মন্তব্য করেছেন। সুতরাং এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে হবে। জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এরপরও যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই থাকে তাহলে দেশের সামগ্রিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে- বিশ্লেষকদের এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনিতেই জনসংখ্যা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। প্রতিবছর কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। বিদ্যমান এ পরিস্থিতি দেশে নানান নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি করছে। এসব নেতিবাচক প্রবণতা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে, দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। স্বাস্থ্য সচিবের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেই বলতে চাই, কায়রোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরও এগিয়ে যেতে হবে। পরিবার পরিকল্পনার তথ্য ও সেবার অপূর্ণ চাহিদার হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা, কোনো নারী সন্তান জন্মদানকালে মারা যাবে না অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় আনা এবং মেয়ে ও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানির প্রবণতা বন্ধ হওয়া, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ব্যাপারে সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেই আমরা বিবেচনা করি। সর্বোপরি জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে দেশের অর্জনের বিষয়টি স্বীকার করেই বলতে চাই, এ ধারা যাতে বেগবান হয় তেমন পদক্ষেপই গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। যেহেতু জানা যায়, সরকারি কর্মসূচিতে ঘন ঘন পরিবর্তন, মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংকটের মতো বেশ কয়েকটি কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সাফল্য আসছে না। ফলে সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার জন্মহার নিয়ন্ত্রণে আশু উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জনসংখ্যার আধিক্য

আপলোড টাইম : ১১:০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯

জন্মহার হ্রাসের উদ্যোগ নিতে হবে
‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত এই নীতিতেই গতকাল পালিত হলো বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জনসংখ্যা ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর : প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন।’ চলতি বছরের ১২-১৪ নভেম্বর কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হবে নাইরোবি সামিট। আর এই সামিটের সামগ্রিক প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে। জানা যায়, জন্মহার বৃদ্ধি কম হলেও বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। অথচ পরিকল্পিত বিশেষ কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ১৯৯৪ সালে যেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করত, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ। আশার কথা যে, স্বাস্থ্য সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৯৯৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এ তথ্য ইতিবাচক হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য অনুযায়ী, প্রজনন হার কমিয়ে আনার যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন নীতিনির্ধারকরা, তা নানা কারণেই অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এটাও অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ৯০-এর দশকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছিল বাংলাদেশের। তখন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর ৩০ ভাগই স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করত। বাস্তবতা হলো, এ সাফল্য এখন অনেকটাই ম্লান হতে চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্থির হয়ে আছে। এ অবস্থা প্রত্যাশিত হতে পারে না, কেননা বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। গড় আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অধিক গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়। ফ্যামিলি পস্ন্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এএফএম মতিউর রহমানও স্বীকার করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন তাদের স্থবিরতার কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। নিয়ম হচ্ছে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারগুলোকে সেবা দেবে কিন্তু সত্যি কথাটা হলো তারা বাড়ি বাড়ি যায় না। আবার উলেস্নখ করা যেতে পারে, কম শিক্ষিত মানুষ বা দরিদ্র মানুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। অনুন্নত, দরিদ্র বা বস্তি এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি, আর এ চিত্র থেকেই বিশ্লেষকরা এমন মন্তব্য করেছেন। সুতরাং এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে হবে। জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এরপরও যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই থাকে তাহলে দেশের সামগ্রিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে- বিশ্লেষকদের এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনিতেই জনসংখ্যা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। প্রতিবছর কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। বিদ্যমান এ পরিস্থিতি দেশে নানান নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি করছে। এসব নেতিবাচক প্রবণতা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে, দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। স্বাস্থ্য সচিবের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেই বলতে চাই, কায়রোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরও এগিয়ে যেতে হবে। পরিবার পরিকল্পনার তথ্য ও সেবার অপূর্ণ চাহিদার হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা, কোনো নারী সন্তান জন্মদানকালে মারা যাবে না অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় আনা এবং মেয়ে ও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানির প্রবণতা বন্ধ হওয়া, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ব্যাপারে সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেই আমরা বিবেচনা করি। সর্বোপরি জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে দেশের অর্জনের বিষয়টি স্বীকার করেই বলতে চাই, এ ধারা যাতে বেগবান হয় তেমন পদক্ষেপই গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। যেহেতু জানা যায়, সরকারি কর্মসূচিতে ঘন ঘন পরিবর্তন, মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংকটের মতো বেশ কয়েকটি কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সাফল্য আসছে না। ফলে সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার জন্মহার নিয়ন্ত্রণে আশু উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।